প্রকৃতির দখলে পতেঙ্গা সৈকত, খেলছে কুকুরের দল, গাছ রাঙাচ্ছে নতুন ফুলে

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের প্রকৃতি যেন আপন প্রাণ ফিরে পেল! করোনাভাইরাস আতঙ্কে সৈকতটি আগেই বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। আর এতেই আপন রূপে জেগে উঠেছে প্রকৃতি। ডালপালা মেলতে শুরু করেছে লতাপাতা। সৌন্দর্য্যবর্ধনে লাগানো গাছগুলোতে ফুটছে ফুল। সমুদ্রতীরে দেখা যাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে শামুক-ঝিনুকের বিচরণ। এতোদিন পর্যটকের তাড়া খাওয়া কুকুরগুলো এই সুযোগে খেলছে সমুদ্রের নীল জলে। স্থানীয়রা বলছেন, পর্যটকের অত্যাচার ও বাণিজ্যের কবলে পড়ার আগে, অন্তত এক দশক আগেও পতেঙ্গা সৈকতের দৃশ্য ছিল এমনই।

চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলে পতেঙ্গা সৈকতের অবস্থান। সৈকতপ্রেমী অনেকে বঙ্গোপসাগরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে এখানে আসেন। এই সৈকতকে ঘিরে বর্তমানে হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া সৈকত ঘেঁষে তৈরি হয়েছে সাড়ে ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ আউটার রিং রোড। ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ পতেঙ্গা সৈকত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে সৈকতের ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ওয়াকওয়ে তৈরি ও সৌন্দর্য্যবর্ধন করেছে। তবে এ নিয়ে সমালোচনাও আছে বিস্তর।

এতোদিন পর্যটকের তাড়া খাওয়া কুকুরগুলো এই সুযোগে খেলছে সমুদ্রের নীল জলে। ছবি: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
এতোদিন পর্যটকের তাড়া খাওয়া কুকুরগুলো এই সুযোগে খেলছে সমুদ্রের নীল জলে। ছবি: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

সরেজমিনে দেখা যায়, মাত্র কিছুদিন আগেও হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় যে পতেঙ্গা সৈকত থাকতো মুখর, সেই সৈকত এখন প্রায় অচেনা ভূমি, নেই কোথাও কোলাহল— নিস্তব্ধতাই এখন তার নিত্যসঙ্গী। সৈকতের মলিন গাছগুলোতে গজাতে শুরু করেছে নতুন নতুন ডালপালা। সৈকতজুড়ে শুধু দেখা যায় কুকুরসহ নানান প্রাণীর ছুটোছুটি।

স্থানীয় বাসিন্দা মিলন সরকার বলেন, ‘সকালবেলা হাঁটতে বের হলে সৈকতে যাই। মানুষের আনাগোনা না থাকায় সৈকত এখন শান্ত। গাছগুলোতে ফুল ফুটেছে। শামুক-ঝিনুকে ভরে আছে সৈকত। সবমিলিয়ে নতুন রূপ ধারণ করে আছে পতেঙ্গা সৈকত।’

স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে পতেঙ্গা সৈকত। চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলা থেকে প্রতিদিন শত শত গাড়িতে করে এই সৈকতে ভিড় জমান পর্যটকরা। আবর্জনা ও দূষণে সৈকত রুগ্ন রূপ ধারণ করে।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের প্রকৃতি যেন আপন প্রাণ ফিরে পেল! ছবি: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের প্রকৃতি যেন আপন প্রাণ ফিরে পেল! ছবি: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি ইদ্রিছ আলী বলেন, ‘কক্সবাজারের পর মানুষের কাছে পতেঙ্গা সৈকত পছন্দ। একসময় এই সৈকতে অনেক পাথর ছিল। সেগুলোর কোনায় কোনায় বালি জমতো। সৈকত জুড়ে ছিল বিভিন্ন উদ্ভিদ। অনেকগুলো গাছও ছিল। সংস্কারের পর সৈকতের লতাগুলো হারিয়ে গেছে। পুরো এলাকায় সীমানা দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। মানুষের দূষণের কারণে সৈকতের আগের রূপ হারিয়ে গেছে। এখন যে রূপ পতেঙ্গা সৈকত ফিরে পেয়েছে সেটি গত এক দশক আগেও ছিল।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘প্রকৃতি মানুষকে দুই হাত ভরে দেয়। কিন্তু মানুষ এসব প্রকৃতির মূল্য বোঝে না। সৈকতের তীরে এমন কিছু উদ্ভিদ থাকে যেগুলো সৈকতের ক্ষয় রোধ করে। যেমন সাগরলতা। পতেঙ্গা সৈকতে সাগরলতার এখন চোখে পড়ে না। মানুষের আনাগোনা ও যত্রতত্র উন্নয়নের কারণে এসব উদ্ভিদ হারিয়ে যাচ্ছে।’

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অবলম্বনে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!