পেসারদের নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন ল্যাঙ্গাভেল্ট

উপমহাদেশের পেসারদের মধ্যে একটি হতদরিদ্র ভাব ক্রিকেটের খুবই চিরচেনা দৃশ্য। যদিও পাকিস্তানের পেস উর্বর মাটিতে জন্ম নেয়া পেসাররা শাসন করে আসছে ক্রিকেট বিশ্ব। ক্রিকেটে কিং অব সুইং ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস কিংবা গতি দানব শোয়েব আক্তার থেকে শুরু করে হালের মোহাম্মদ আমির, শাহীন শাহ আফ্রিদি, ওয়াহাব রিয়াজদের মতো দুর্দান্ত সব পেসারদের জন্ম দিয়ে হতবাক করে দেয় ক্রিকেট বিশ্বকে।

পাকিস্তানকে টেক্কা দেয়ার জন্য হোক কিংবা নিজেদের পেস শক্তি বাড়ানোর জন্য হোক ভারত বিখ্যাত ডেনিস লিলিকে নিয়োগ দিয়ে পেস বোলার বের করার জন্য ‘পেস বোলার ফাউন্ডেশন’ গড়ে তোলে। যার ফল হাতেনাতেই পাচ্ছে ভারত। হালের ভুবনেশ্বর কুমার, যশপ্রীত বুমরা, হার্দিক পান্ডিয়া, মোহম্মদ সামি, ইশান্ত শর্মাদের অধিকাংশই সেখানকার ফসল। পেস আক্রমণে খুব একটা পিছিয়ে নেই শ্রীলঙ্কাও। শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটে চলছে সত্যিকারের পেস বোলারদের জন্য হাহাকার।

পেস বোলার খোঁজে বের করার জন্য এবং পেসারদের প্রশিক্ষিত করার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) উচ্চ বেতনে নিয়োগ দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি পেসার কোর্টনি ওয়ালশকে। কিন্তু তিনি নতুন কাউকে বের করতে পারেননি, উল্টো মোস্তাফিজদের অনেকটা ধার কমে গেছে বলে প্রতীয়মান হয়। ওয়ালশের আগে পেস কোচ হিসেবে জিম্বাবুয়ের হিথ স্ট্রিক সেই তুলনায় অনেক সফল ছিলেন। যদিও পেসারদের এই দৈন্যদশার জন্য শুধুমাত্র কোচদের দায়ী করা যায় না। বিশ্বকাপে পেসারদের চরম ব্যর্থতার পর বিসিবি নড়েচড়ে বসে। ওয়ালশের সাথে চুক্তি নবায়ন না করে নেমে পড়ে নতুন কোচের সন্ধানে। পেয়ে যান, দ্রুত নিয়োগ দিয়ে দেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক জাতীয় তারকা চার্লস ল্যাঙ্গাভেল্টকে।

কন্ডিশনিং ক্যাম্পে থাকা সব পেসারদের হাতেকলমে পেস বোলিংয়ের বিভিন্ন কলাকৌশল শেখাচ্ছেন ল্যাঙ্গাভেল্ট
কন্ডিশনিং ক্যাম্পে থাকা সব পেসারদের হাতেকলমে পেস বোলিংয়ের বিভিন্ন কলাকৌশল শেখাচ্ছেন ল্যাঙ্গাভেল্ট

গত পরশু নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়ে গতকাল চাকুরির প্রথম দিনটি পরিচিতি পর্বের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছেন টাইগার পেস বোলিং কোচ চার্লস ল্যাঙ্গাভেল্ট। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে এসে নেমে পড়লেন আদা জল খেয়ে। মিরপুর শেরেবাংলায় কন্ডিশনিং ক্যাম্পে কাটালেন ব্যস্তময় এক দিন। বিশেষ সেশনে পেস বোলিং ইউনিটে থাকা মোস্তাফিজ-তাসকিনদের দিলেন সুইং টিপস। হাতে ধরে দেখিয়ে দিলেন সিমিং পজিশন। বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে শ্রীলঙ্কা সিরিজ। কোনটিতেই স্ব মহিমায় ভাস্বর হয়ে উঠতে দেখা যায়নি টাইগার পেস বোলিং ইউনিটকে। নিজেদের ছায়া হয়েই ছিলেন। থেকে থেকে মোস্তাফিজ ও সাইফউদ্দিন জ্বলে উঠলেও তাদের বেহিসেবি বোলিং ছিল ভীষণ দৃষ্টিকটু।

হতশ্রী সেই বোলিং খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ না হলেও খোঁজখবর ঠিকই রেখেছেন নবনিযুক্ত প্রোটিয়া এই কোচ। তাই হয়তো কালবিলম্ব করেননি। কন্ডিশনিং ক্যাম্পে শিষ্যদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আফগান বধ ও ত্রিদেশীয় সিরিজের মুকুট জয়ের মিশনে।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল থেকে শুরু হওয়া ক্যাম্পে কাটার স্পেশালিস্ট মোস্তাফিজুর রহমান, গতি তারকা তাসকিন আহমেদ, ডেথ বোলিং বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করা ফরহাদ রেজা, পেস বোলিং হান্ট থেকে আসা এবাদত হোসেন, আবু হায়দার রনি ও আবু যায়েদ চৌধুরী রাহির সঙ্গে সময় কাটান নতুন বোলিং কোচ। শিষ্যদের দেখিয়েছেন সিমিং পজিশন কি করে ঠিক করতে হয়। সিম গ্রিপিং এবং সুইং ডেলিভারি নিখুঁত হওয়া কতটা বাঞ্ছনীয় সেটিও বাতলে দিয়েছেন।

আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনেই অবশ্য নিজের পরিকল্পনা স্পষ্ট করেছেন ল্যাঙ্গাভেল্ট। নিজ ক্যারিয়ারে সুইং বিষে ব্যাটসম্যানদের নীল করেছেন। সেই বিষ ছড়িয়ে দিতে চান টাইগারদের মধ্যেও। যার শুরুটা হলো আজ। দেখা যাক শেষটা কোথায় গিয়ে ঠেকে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!