পেকুয়ায় গৃহহীনদের গৃহদানেও ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি

কক্সবাজারের পেকুয়ায় দুর্যোগসহনীয় ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো চলছে গৃহহীনদের ঘরনির্মাণ প্রকল্পের কাজ।

স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, গৃহহীনদের এ প্রকল্প থেকে অর্থ লুটপাটের জন্য ঘর নির্মাণে প্লান, ডিজাইন, নির্মাণসামগ্রী গুণগত মান বজায় রাখা হচ্ছে না। এছাড়া নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী। ঘর নির্মাণে নিয়োজিত শ্রমিকদের খাবার ও নির্মাণসামগ্রী আনতে উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি টইটং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম স্থানীয় সাংসদের ব্যক্তিগত সহকারী হাসানুল ইসলাম আদরকে দিয়ে এসব ঘর নির্মাণ করাচ্ছেন। তাদের ক্ষমতার দাফটে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ টু-শব্দ করতে পারছে না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘ঘরগুলো বরাদ্ধের তালিকা তৈরিতেও অনিয়ম করা হয়েছে। প্রকৃত গৃহহীনদের ঘর বরাদ্ধ না দিয়ে সিংহভাগ ঘর দেওয়া হয়েছে স্বচ্ছল পরিবারকে। টাকার বিনিময়ে এ উপকারভোগীদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। যা নিরপেক্ষ তদন্তে প্রমাণ করা যাবে।

জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের অধীনে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় গৃহহীনদের জন্য কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় ১২টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩১ টাকা। প্রতিটি ঘর হবে দু’কক্ষ বিশিষ্ট। ২০ ফুট লম্বা ও পাশ হবে ৮ ফুট। চারপাশে হবে ইটের দেয়াল, উপরে টিনের ছাউনি। ছাউনিতে মেহগনি অথবা কড়াই কাঠ ব্যবহার করতে হবে। গৃহের মেঝেতে তিন ইঞ্চি ঢালাই হবে। রান্নাঘর ও টয়লেট হবে ১৩ ফুট। ইট হবে এক নম্বর, ছাউনির টিন হবে পয়েন্ট ৪৬ মিলিমিটার পুরত্বের রঙিন ঢেউটিন। ঘর ও রান্নাঘরের মাঝখানে সাত ফুট করিডোর থাকবে। যার উপরে থাকবে টিনের ছাউনি।

এদিকে উপকারভোগীদের অভিযোগ, পেকুয়া উপজেলায় গৃহহীনদের জন্য এসব ঘর নির্মাণের নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে দায়সারাভাবে কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি অনুমোদিত নকশাও মানা হচ্ছে না। বেশিরভাগ ঘর নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের ইট, সিমেন্ট ও কাদাযুক্ত বালু। আড়াই ফুটের কথা থাকলেও এক ইটের গাঁথুনি দিয়ে করা হয়েছে এক থেকে দেড় ফুটের বেইজমেন্ট। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে প্রতিটি ঘর। এছাড়া এসব ঘরে টিন ব্যবহার করা খুবই নিম্নমানের। টিন ফিটিংসে পেরেকে দেওয়া হয়নি ওয়াটার প্রুফ। এতে বৃষ্টির পানি ঢুকছে সদ্য নির্মিত প্রতিটি ঘরে।

রাজাখালী ইউনিয়নের মাতবর পাড়া গ্রামের উপকারভোগী জেবর মুল্লুক বলেন, ‘বারবার বলার পরেও দুর্বল কাঠামোর উপর আমার ঘরটি তুলেছে ঠিকাদার। এক ইটের একফুট গাঁথুনি দিয়ে আমার ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ঘরটি ঝড়োবাতাসে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে খুবই নিম্নমানের। এসব বিষয় সংশ্লিষ্টদের জানানোর পরেও আমি কোনো সুরাহা পাইনি।

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের চৈরভাঙ্গা এলাকার উপকারভোগী খালেদা বেগম বলেন, টিন ফিটিংসে পেরেক লাগানোর সময় ওয়াটার প্রুফ ব্যবহার না করায় সদ্যনির্মিত ঘরে বৃষ্টি ও কুয়াশা ঢুকছে। এছাড়া নিম্নমানের ইট দিয়ে ঘরটি নির্মাণ করায় এর স্থায়ীত্ব নিয়ে সবাই প্রশ্ন তুলছে।

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘এসব ঘর সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নির্মাণ করা হচ্ছে। অনিয়ম-দুর্নীতির প্রশ্নই আসে না।’

পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ বলেন, ‘এসব ঘর নির্মাণে কোনো অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!