পেকুয়ায় গরিবের চাল নিয়ে চালবাজি, চেয়ারম্যানের সহকারীই নাটের গুরু (ভিডিও)

দরিদ্রদের জন্য ওএমএসের ১০ টাকা কেজি মূল্যের চাল বিতরণে নয়ছয় থেমে নেই। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বাংলাদেশে কার্যত লকডাউন শুরু হওয়ার পর শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ যখন খাদ্যের জন্য দিশেহারা, ঠিক তখনই চাল নিয়ে চালবাজিতে মেতে উঠেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কিছু অসাধু ব্যক্তি। এবার হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ সরকারের খাদ্যবান্ধব ওএমএসের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে পেকুয়ার রাজাখালী ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুরের ব্যক্তিগত সহকারী আলী ওয়াজেদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বে না থাকার পরও আলী ওয়াজেদ চেয়ারম্যানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পুরাতন কার্ডধারীদের চাল না দিয়ে টাকা নিয়ে নতুন সদস্য করে তাদের চাল বিতরণ করছেন। তার চালাকিতে বাদ পড়েছেন রাজাখালী ইউনিয়নের ৪ শতাধিক হতদরিদ্র উপকারভোগী। এছাড়া যাদের নতুন কার্ড দিয়েছে তাদের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন আলী ওয়াজেদ এমন অভিযোগ বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্যের।
শুধু তাই নয়, পুরাতন কার্ডধারীরা চালের জন্য গেলে তাদের কার্ডও কেড়ে নেন আলী ওয়াজেদ নিজেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে বিভিন্ন ওয়ার্ডের পুরাতন ২ শতাধিক হতদরিদ্র উপকারভোগী রাজাখালীর সবুজ বাজারে ওএমএস এর ডিলার রাজাখালী ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের দোকান ঘেরাও করে। এ সময় বঞ্চিত উপকারভোগীরা ক্ষেপে যান। পরিস্থিত এড়াতে ওএমএসের ডিলার জাহাঙ্গীর দ্রুত সটকে পড়েন। এ সময় কার্ড বিতরণে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় রাজাখালী ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আজম উদ্দিন আজুকে লাঞ্ছিত করেন আলী ওয়াজেদ। এর জেরে সবুজ বাজারে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
এ বিষয়ে লাঞ্ছিত হওয়া ইউপি সদস্য আজম উদ্দিন বলেন, সরকার জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে খাদ্য দিচ্ছে। তালিকা প্রস্তত করা জনপ্রতিনিধির কাজ। তালিকা হালনাগাদ, পরিবর্তন, বিয়োজন ও সংযোজন করবে জনপ্রতিনিধিরা। আগে যারা চাল পেয়েছেন তারা এসেছিল চাল নিতে। অধিকাংশ পুরাতনদের বাদ দিয়ে চেয়ারম্যানের পিএস আলী ও যুবদল নেতা আমিন মিলে ৫০০-১৫০০ টাকা হাতিয়ে নিয়ে কিছু মানুষকে তালিকাভুক্ত করেছে। আমরা প্রতিবাদ করছি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আলীসহ বেশ কয়েকজন আমার উপর হামলা চালায়। আমাকে না জানিয়ে আমার ওয়ার্ডের ২৫ অসহায় পরিবারের কার্ড বাতিল করা হয়েছে। তারা যদি চাল না পায় এ দুর্যোগের সময়ে কিভাবে বাঁচবে।
১ নম্বর ওয়ার্ড মাতবর পাড়ার ১১৫ হতদরিদ্র পরিবার পাইনি ওএমএস’র চাল। যারা ২০১৬ সাল থেকে নিয়মিত পেতেন। এ বিষয়ে ইউপি সদস্য ওসমান গণি মাতবর বলেন, আমার এলাকায় যারা অত্যন্ত গরিব আছেন আমি তাদের যাচাই করে কার্ডগুলো দিয়েছিলাম। হঠাৎ করে চেয়ারম্যানের এপিএস আলী টাকা নিয়ে পুরাতন নামগুলো বাদ দিয়ে নতুনদের কার্ড দিয়ে দেয়। নতুন যারা কার্ড পেয়েছে তারা বেশিরভাগই সচ্ছল। এতগুলো অসহায় পরিবারের কার্ড বাতিল করার এখতিয়ার তো আলীর নেই। সে পরিষদের কেউ না। আমাদের না জানিয়ে সে এ কাজ কেমনে করলো? আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
তবে আলীকে এ কাজে শামশুল আলম ও করম আলী নামের দুজন সহযোগিতা করছেন বলেও জানান মেম্বার ওসমান গণি।
হোসনে আরা বেগম (৬৫) নামের এক উপকারভোগী নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি ছেলের বাপ থাকতে চালের কার্ডটি পেয়েছিলাম। ছেলের বাপ মারা যাওয়ার পর আমি দু তিনবার চাল পেয়েছি। আমার স্বামীও নেই। ছেলে থাকলেও নেই। হঠাৎ করে আমার নামটি কেটে ফেলা হয়েছে। ওরা আমার কাছ থেকে ৫-৬শ টাকা চেয়েছিল দিতে পারিনি। আমি অসহায় মেয়ে, টাকা কোথায় পাব। এখন যদি সরকারি চাল না পায় তাহলে তো ভিক্ষা করে খেতে হবে। আমি এখন কোথায় যাব।
অভিযোগের বিষয়ে আলী ওয়াজেদ বলেন, আমি পরিষদের কেউ না। চেয়ারম্যানের কোনো পিএসও নয়, চেয়ারম্যানের ভাই। আমি চাউল নিয়ে এমন করার প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া পরিষদের মেম্বারসহ সকলেই অশিক্ষিত। শুধু আমিই একজন শিক্ষিত। মূলত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধের লোকেরা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তবে রাজাখালী ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর বলেন, ওএমএসের চাল নিয়ে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যা। আলী ওয়াজেদ আমার কোনো ভাই নয়, পাড়ার লোক। সে আমার অনুপস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করে মাত্র।
তিনি আরও বলেন, তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। যারা একাধিকবার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। হট্টগোলের বিষয়টি একান্ত এদের মধ্যে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইকা শাহাদাত বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে তাদেরকে বলা হয়েছে তালিকা সঠিক করে আমার অফিসে পাঠানোর জন্য। যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে, কেন বাদ দেওয়া হয়েছে সেটার কারণ উল্লেখ করে তারা আমাকে রিপোর্ট পাঠাবে। রিপোর্ট পাঠানোর আগ পর্যন্ত এ বিষয় কিছু বলতে পারছি না। রিপোর্ট পেলে তখন আমি দেখব। তাছাড়া সরকারি চাল নিয়ে কেউ অনিয়ম করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।