পেঁয়াজ এসে দামও কমেছে, ক্রেতার দেখা নেই খাতুনগঞ্জে

তিন দিনের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি কমেছে প্রায় ৭০ টাকা। দাম কমলেও ক্রেতাশূন্য হওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়ছে ব্যবসায়ীদের। এদিকে ভোক্তারা বলছেন, অর্থনীতির সূত্র অনুসারে দাম বাড়লে চাহিদা কমবে, সেই সূত্রেই ধস এসেছে পেঁয়াজের বাজারে।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১২০-১৪০ টাকা, মিশর ও চীনের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, শনিবারও মিয়ানমারের পেঁয়াজ তারা বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ১৮০-২০০ টাকা। মিশর ও চীনের পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ১৪০-১৬০ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ খান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, পেঁয়াজ সংকটের আগে বাজার যখন স্বাভাবিক ছিল তখন গড়ে প্রতিদিন আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হতো। এখন ভারত থেকে পুরোপুরি আমদানি বন্ধ রয়েছে। মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৪০০ টন পেয়াজ খালাস হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরেও খালাস হয়। এ পেঁয়াজ সারাদেশে নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের চাহিদা ৫০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। ইতোমধ্যে এয়ার কার্গোতে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। খাতুনগঞ্জে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আজ মজুদ আছে তা পর্যাপ্ত। ক্রেতাদের উপস্থিতি আগের তুলনায় অনেক কম। দাম যদি আরো কমে যায় তার লোকসানের ঝুঁকি কেউ নিতে চাইছে না। সবার মধ্যে ভীতি কাজ করছে।

সোমবার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, পেঁয়াজ সংকট কাটাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জরুরি ভিত্তিতে তুরস্ক, চীন ও মিশর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কার্গো বিমানে দেশে আনা হচ্ছে। কারণ সমুদ্র পথে পেঁয়াজ পৌঁছাতে দেড়মাস সময় প্রয়োজন। মঙ্গলবার কার্গো বিমানে প্রথম চালান ঢাকায় পৌঁছার কথা বললেও কী পরিমাণ পেঁয়াজ আসছে তা জানাতে পারেননি ড. জাফর উদ্দিন।

পেঁয়াজ এসে দামও কমেছে, ক্রেতার দেখা নেই খাতুনগঞ্জে 1
ছবি: আজীম অনন

পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের প্রায় আড়াই হাজার অসাধু ব্যবসায়ীকে ইতোমধ্যে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘প্রত্যেক জেলা প্রশাসন পেঁয়াজের বাজার তদারকি অব্যাহত থাকবে। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজও বাজারে আসা শুরু করেছে দাবি করে সচিব বলেন, শিগগিরই পেঁয়াজের দামে আরো কমবে।’

খাতুনগঞ্জ পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির নেতা জাবেদ ইকবাল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পেঁয়াজ যা আছে তা বর্তমান চাহিদার হিসেবে পর্যাপ্ত। প্রতিদিন খাতুনগঞ্জে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আসছে তার সবটুকু বিক্রি হচ্ছে না। ফলে মজুদও বাড়ছে।’

তবে আমদানিকারকদের দাবি, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের গুণগত মান ঠিক পাওয়া যাচ্ছে না। টেকনাফ স্থলবন্দরে লোড হওয়া পেঁয়াজের একটা অংশ পচা। যা বিশাল লোকসান। বৃহস্পতি ও শুক্রবার কয়েক টন পচা পেঁয়াজ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতায় নিয়োজিত গাড়িতে বহন করে ভাগাড়ে ফেলা হয়েছে। আবার পচা পেঁয়াজের বস্তা ১৫০ টাকায় কিনে অনেকে কর্ণফুলী নদী ও চাক্তাই খালের পাড়ে শুকিয়ে ভ্যানে করে বিক্রিও করেছে। একটা অংশ খাল ও নদীতে ফেলা হয়েছিলো। তবে পচা পেঁয়াজ সরালেও সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খাতুনগঞ্জ এলাকায় সেই দুর্গন্ধ ছিলো।

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!