পেঁয়াজের ঝাঁজে অস্থির ক্রেতারা ছুটছে মজুদের দিকে

ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের খবরে বাজারে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে এ অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। আমদানি বন্ধের খবরে দেশের বৃহত্তম পাইকারী ভোগ্যপণ্য বাজার খাতুনগঞ্জ ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বলছে, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি রোধে অভিযান চালানো হবে।

রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজি ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হলেও সোমবার বিকেলে আমদানি বন্ধের খবরে কেজি প্রতি ৫৫ টাকা হয়ে যায়। আমদানি করা পেঁয়াজের পাশাপাশি বেড়ে যায় দেশি পেঁয়াজের দামও। সকালে খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দাম বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় উঠে যায়।

পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার খবরে কিছু খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ঠেকে ৯০ টাকায়। অনেক দোকানদার পেঁয়াজ আমদানির বন্ধের খবরে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে মজুদও শুরু করেছেন। সোমবার সকাল থেকে বেনাপোল ও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্রেতাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। এতে অনেকে পেঁয়াজ কেনার জন্য দোকানে ছুটে যান।

এদিকে বিক্রেতারা জানান, আমদানি বন্ধের ফলে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়বে। তাই অাপাতত পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখে মজুদ করে গত বছরের মত দাম বাড়ার অপেক্ষায় আছেন তারা। ফলে অনেককে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে খালি হাতেও ফিরে আসতে হয়েছে।

এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর হিলি বন্দরের আমদানিকারক ও খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে খুচরা বাজারে যেখানে ২৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল সেখানে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় উঠে যায়। ফলে খুচরা বাজারে কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৫০ থেকে ৭০ টাকায় উঠে যায় পেঁয়াজের দাম।

৭ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজের মুল্যবৃদ্ধি রোধে খাতুনগঞ্জে জেলা প্রশাসনের অভিযান ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের মনিটরিংয়ের কারণে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল।

এছাড়া পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি রোধের জন্য মিশর, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমারসহ পাঁচটি দেশ থেকে রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকাদ। এই সময়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে বন্যা ও দেশের চাহিদা মিটানোর অযুহাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকার মুদির দোকান ও সুপারশপে ঘুরে দেখা যায়, অনেক জায়গায় ক্রেতারা পেয়াজ কেনার জন্য লাইন ধরেছেন। পেঁয়াজের দাম বাড়ার আশংকায় চাহিদার কয়েকগুণ বেশি পেঁয়াজ কিনছেন।

কাজিরদেউরি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা গৃহিণী হালিমা বেগমের সাথে আলাপকালে জানান, কোনো তরকারি পেঁয়াজ ছাড়া রান্না হয়না। তাই গত বছরের মত পেঁয়াজের দাম বাড়ার আশংকায় কিছু পেঁয়াজ মজুতের লক্ষ্যে কিনতে এসেছেন।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি সাবেক সভাপতি সোলাইমান বাদশা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের খবরে দাম বেড়ে ৫৫ টাকা হয়ে যায়। মঙ্গলবার কয়েকঘন্টার ব্যবধানে কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, ‘গত সপ্তাহে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি রোধে জেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করায় দাম কিছুটা কমলেও ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে আবারো বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি রোধে আমরা পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান পরিচালনা করবো। আশা করি দাম কমে আসবে। তবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির খবরে সাধারণ মানুষের মজুদ করার চিন্তা পরিহার করা দরকার।’

সিএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!