রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল লাকসামের ১১০ প্লট (ভূমি) লিজ নিয়ে বিপাকে পড়েছে গ্রাহকরা। এসব প্লট বাবদ গ্রাহকরা খাজনা পরিশোধ করলেও এখনও তা ভূমিদস্যুদের দখলে। ফলে বছরে কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে রেলওয়ে। ভূমি নিজের হেফাজতে না নিয়েই দরপত্র ডেকে লিজ দেওয়া ফলে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এরমধ্যে ভূমিদস্যুরাও প্লটে উচ্ছেদ অভিযান না করতে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এসেছে। গড়ে তুলেছে অবৈধ স্থাপনা ও দোকান। প্লট বুঝে না পেয়ে রেলমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূসম্পদ দপ্তর ১১০ প্লট হেফাজতে না নিয়েই ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর দরপত্র ডেকে লিজ দেয়। তিন বছরের জন্য লিজ দিলেও প্লট গ্রহীতাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। কিন্তু এরপরও গ্রাহকদের চিঠি দিয়ে তাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করছে রেলওয়ে। এসব জায়গা এখনও ভূমিদস্যুদের দখলে। রেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে এসব জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে।
গত ৭ ডিসেম্বর রেলওয়ে (পূর্ব) চট্টগ্রাম ভূসম্পত্তি বিভাগের আওতাধীন লাকসাম স্টেশনের পেছনে সরেজমিন গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। সেখানে ১১০টি প্লট ভূমিদস্যুরা দখল করে রেখেছে।
কাগজপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা মো. রিয়াদ হোসেন নামের এক গ্রহীতার কাছ থেকে ১১০ বর্গফুটের ১০২ নম্বর প্লট থেকে বছরে ৭ হাজার ৩১৫ টাকা খাজনা আদায় করা হয়েছে। কিন্তু ২ বছর খাজনা দিয়েও তিনি প্লট বুঝে পাননি।
অথচ এসব প্লট থেকে খাজনা আদায় হওয়ার কথা বছরে ১ কোটি ৯লাখ ৯২ হাজার টাকা। রেলওয়ে জায়গা বুঝিয়ে না দেওয়ায় অনেকে খাজনা দিচ্ছে না। ফলে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব হাতছাড়া হচ্ছে।
খাজনা পরিশোধকারী মো. রিয়াদ হোসেন ভূঁইয়া এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন রেলমন্ত্রী, সচিব, জিএম ও ভূসম্পদ দপ্তরকে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূসম্পত্তি দপ্তরের কানুনগো আবদুল মতিন জানান, লিজ দেওয়ার পর নুরুন্নবী নামের এক ব্যক্তিসহ ৪৯ জন দখল করে রাখা প্লটগুলো উচ্ছেদে না করতে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এসেছেন।
তবে এ বিষয়ে প্লট লিজগ্রহীতাদের অভিযোগ, যদি ৪৯টি প্লটের বিরুদ্ধে যদি মামলা থাকে তাহলে বাকি ৬১টি প্লট কেন তিন বছরেও বুঝিয়ে দিতে পারেনি রেলওয়ে?
১১০ প্লটের পরিমাণ
৮ নম্বর প্লট ৫৭০ বর্গফুট, ১২ থেকে ১৭ নম্বর প্লট ৬০০ বর্গফুট, ১৮ থেকে ২০ নম্বর প্লট ৪০০ বর্গফুট, ৩৫ নম্বর ৩৮৫ বর্গফুট, ৩৬ নম্বর প্লট ২৮০ বর্গফুট, ৪২ নম্বর ২৮০ বর্গফুট, ৪৫ নম্বর ৩৫০ বর্গফুট, ৪৮ নম্বর ২২০ বর্গফুট, ৫৩ নম্বর ২০০ বর্গফুট, ৫৪ নম্বর ২৪০ বর্গফুট, ৫৯ নম্বর ১৮০ বর্গফুট, ৬৫ নম্বর ৩০০ বর্গফুট, ৬৯ নম্বর ৩৪০ বর্গফুট, ৭৮ নম্বর ১৬০ বর্গফুট, ৮০ নম্বর ৩০০ বর্গফুট, ৮৩ নম্বর ২০০ বর্গফুট, ৮৪ নম্বর ৩০০ বর্গফুট, ৮৪(এ) ২৪০ বর্গফুট, ৮৫ নম্বর ৩০০ বর্গফুট, ৮৬ নম্বর ৩৩০ বর্গফুট, ৯০ নম্বর ১৮০ বর্গফুট, ৯১ নম্বর ১০০ বর্গফুট, ৯২ নম্বর ১৬০ বর্গফুট, ৯৪ নম্বর ২০০ বর্গফুট, ৯৫ নম্বর ১৩০ বর্গফুট, ১০২, ১০৩ নম্বর ২২০ বর্গফুট, ১৩৮ থেকে ১৪৪ নম্বর ৪৩২ বর্গফুট, ১৪৫ নম্বর ৯৬ বর্গফুট, ১৪৬ থেকে ১৪৯ নম্বর ৩৬০ বর্গফুট, ১৫০ নম্বর ৯৬ বর্গফুট, ১৫১ থেকে ১৫৮ নম্বর ৭৫৬ বর্গফুট, ১৯৪ নম্বর ১৫০ বর্গফুট, ১৯৭ থেকে ২১৮ নম্বর ১৭৬৪ বর্গফুট, ২১৯ থেকে ২২২ নম্বর ২৬৭ বর্গফুট, ২২৩ থেকে ২৩১ নম্বর ৮৮০ বর্গফুট, ২৪০, ২৪১ নম্বর ২২০ বর্গফুট, ২৫৪ নম্বর ২১৭ বর্গফুট, ২৫৬ থেকে ২৭১ নম্বর ৩০০০ বর্গফুট।
রেলওয়ে বিভাগীয় ভূসম্পদ কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম বলেন, ‘নানা জটিলতার কারণে প্লটগুলো প্রাপকদের বুঝিয়ে দিতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূসম্পদ কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, ‘গ্রাহকের ভোগান্তিতে আমরা ব্যথিত। আইনের জটিলতা নিরসন করে একসঙ্গে বেদখল ভূমি উদ্ধার ও হস্তান্তর করার চিন্তা রয়েছে।’
৬১ জনের প্লটে মামলা না থাকার পরও বুঝিয়ে না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনায় বরাদ্দে অর্থ সংকটের কারণে এই হাল। পূর্বের উচ্ছেদ অভিযানে বুলডোজার, নানা যন্ত্রপাতি ভাড়া নিয়ে সেই বিল শোধ করতে না পাড়ায় যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী মালিকরা আর বাকিতে যন্ত্রপাতি ভাড়া দিতে চাইছে না। মামলা না থাকা প্লটগুলোর গ্রাহকদের জায়গা দ্রুত বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’
ডিজে