পূর্ব রেলের ছয় ট্রেনের সিসি ক্যামেরা দুই মাসেই অকেজো, শঙ্কায় যাত্রী নিরাপত্তা

কোরিয়ান কোচের অটোসেট ক্যামেরা ব্যবহারে নেই দক্ষ জনবল

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যাত্রী নিরাপত্তায় ছয়টি ট্রেনে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হলেও দুই মাস না যেতেই তা অকেজো হয়ে পড়ে। পরে ক্যামেরাগুলো খুলে ফেলা হলেও এখনও নতুন করে লাগানো হয়নি। একইসঙ্গে কোরিয়া থেকে আমদানি করা কোচগুলোতে অটোসেট ক্যামেরাগুলোও দক্ষ জনবলের অভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে সেগুলোও অকেজো হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেনে ২৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যেকে ট্রেনে লাগানো হয়েছে চারটি করে। আন্তঃনগর ট্রেনগুলো হলো—মহানগর গোধূলী, তূর্ণা-নিশীথা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, মহানগর এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ও সুবর্ণ এক্সপ্রেস।

রেলওয়ে সূত্রে আরও জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নাশকতা রোধে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি যাত্রী নিরাপত্তায় ছয়টি ট্রেনে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ট্রেনের সামনে ও পেছনের কোচ এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিটি ট্রেনে চারটি করে মোট ২৪টি ক্যামেরা লাগানো হয়। তবে ক্যামেরাগুলো নিম্নমানের হওয়ায় কোনো কাজেই আসেনি। পুরাতন ভার্সনের এইচডি ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ ঝাপসা হওয়ায় সমস্যা শনাক্তের কাজেও আসেনি।

একইসঙ্গে আন্তঃনগর ট্রেন মহানগর গোধূলী, সোনার বাংলা ও সুবর্ণ এক্সপ্রেসে কোরিয়া থেকে আমদানি করা আধুনিক কোচ ব্যবহার হচ্ছে। এসব প্রতিটি কোচে দুটি করে অটোসেট সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। কিন্তু দক্ষ জনবল ও প্রযুক্তির অভাবে এসব ক্যামেরার ব্যবহার হচ্ছে না।

এনিয়ে রেলওয়ে সংকেত ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ রেল মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো ফল পায়নি।

সংকেত ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে জানা গেছে, কোরিয়ান কোচের ক্যামেরার কোনো ফুটেজ দেখতে হলে হার্ডডিস্ক খুলে কম্পিউটারে লাগিয়ে দেখতে হয়। যা অনেক বিড়ম্বনার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংকেত ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কোরিয়া থেকে আমদানি করা কোচে দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করা থাকে। তবে সেগুলো আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। আমরা ঊর্ধ্বতন বিভাগে অনেকবার অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

এদিকে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে ট্রেন চলাচলেও ঝুঁকি দেখা দেয়। ফলে আগের মতো যাত্রীর চাপ এখন ট্রেনগুলোতে নেই। এর আগেও ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন নিরাপত্তার অভাবে ২৮ দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।

সরেজমিন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন গিয়ে একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী হিসেবে ট্রেন ভ্রমণ করেন সবাই। তবে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিরাপত্তা নিয়ে সবাই উদ্বেগে আছেন।

এর মধ্যে গত ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকিটে জোর করে ভ্রমণের জেরে ২০-২৫ জন যুবক মিলে নারী রেলকর্মীসহ কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করে। এরপর তারা ট্রেন থামাতে বাধ্য করে।

১৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা কয়েকজন যাত্রী টিটির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে পরদিন সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লায় ২৫-৩০ জন তরুণ যাত্রীবাহী ট্রেনটি আটকিয়ে দেয় এবং স্টেশনের সিগন্যাল রুমে থেকে সবাইকে বের করে দেয়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সিনিয়র উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘মহানগর গোধূলী, সোনার বাংলা ও সুবর্ণ এক্সপ্রেসে নতুন আমদানি করা কোচ ব্যবহার হয়। প্রতিটি কোচে দুটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা অটোসেট করা রয়েছে। তবে এসব ক্যামেরাগুলো ব্যবহার হয় কিনা, আমার জানা নেই।’

তবে ট্রেনে ক্যামেরা না থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘চলন্ত ট্রেনে রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে চলাচল করা সব ট্রেনে সিসিটিভি ক্যামেরা সচল আছে। ট্রেনে কোনো ধরনের নিরাপত্তার অভাব নেই।’

পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আমরা ট্রেন যাত্রীদের নিরাপত্তায় সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন।’

অটোসেট ক্যামেরার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ট্রেনে অটোসেট ক্যামেরাগুলো ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলবো। এছাড়া ট্রেনে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর বিষয়টিও আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করবো।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm