পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে একের পর এক খুন, হামলা, চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। এদের বেশিরভাগই বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের। মোজাম্বিকে প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশির বসবাস রয়েছে। এদের অনেকেই মূলত মুদি দোকানসহ মৌসুমী বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
মোজাম্বিকে মাত্র মাসখানেকের ব্যবধানে ডাকাতদলের শিকার হয়ে মারা গেছেন তিন বাংলাদেশি। জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে মারা গেছেন আরও এক বাংলাদেশি। এছাড়া অপহৃত হয়ে মুক্তিপণ দিয়ে বেঁচে ফিরেছেন একজন।
সবশেষ রোববার (৬ ডিসেম্বর) মোজাম্বিকে ডাকাতের হামলায় চট্টগ্রামের অধিবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মোজাম্বিকে জাম্বেজিয়া প্রদেশের মুলুমভু ডিসট্রিক্ট হাসপাতালে ফরিদুল আলম নামে ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়।
ফরিদুল আলমের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নে। গত ২৬ নভেম্বর রাতে একদল ডাকাত তার বাসায় ঢুকে তাকে মাথায় আঘাত করে টাকা-পয়সা দামি জিনিসপত্র লুট করে চলে যায়।
পরে আহত ফরিদুল আলমকে দেশটির মুলুমভু ডিস্ট্রিক হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে জাম্বেজিয়া প্রাদেশিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেওয়ার পর রোববার (৬ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় মারা যান তিনি। ২০১৩ সালে মোজাম্বিকে যান ফরিদুল আলম। সেখানে তিনি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিলেন।
এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর মোজাম্বিকপ্রবাসী নুরুল ইসলাম মোজাম্বিকের পেম্বা শহরের কোনো এক জায়গা থেকে অপহৃত হন। নুরুল ইসলামও (৩৫) ছিলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের পূর্ব চাম্বলের বাসিন্দা। স্থানীয় এক জঙ্গি সংগঠন তাকে অপহরণ করে। তার সঙ্গে আরও সাত মোজাম্বিক নাগরিককে ওই জঙ্গি সংগঠন অপহরণ করে হত্যা করে। তিনি ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর কাজে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। এর চারদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর নিহত নুরুলের মাথা বিচ্ছিন্ন ও পেছনে হাত বাঁধা ছবি প্রকাশ করে জঙ্গিরা।
গত ১৫ নভেম্বর) মোজাম্বিকের নামপুলা প্রদেশের সালাওয়া নামক এলাকায় মুখে পলিথিন পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মিজানুর রহমান (৩০) নামে আরেক বাংলাদেশি যুবককে হত্যা করা হয়। তার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়। পাঁচ বছর আগে মোজাম্বিক যান মিজানুর রহমান। বিভিন্ন দোকানে চাকরি করে গত একবছর ধরে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, মিজানুর রহমান সালাওয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় একা থাকতেন। ধারণা করা হচ্ছে, রাতে কোনো এক সময় সংঘবদ্ধ ডাকাতদল তার বাসায় হানা দিয়ে টাকা-পয়সা মালামাল লুট করে। পরে হাত-পা বেঁধে মুখে পলিথিন পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
এই ঘটনার চার দিন আগে ১১ নভেম্বর মোজাম্বিকে মুহাম্মদ রশিদ (৩৮) নামে অন্য এক প্রবাসী বাংলাদেশি অপহরণ হওয়ার পর ভোরে দুই কোটি টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান। তাকে গত ৩ নভেম্বর দেশটির মনিকা প্রদেশের চিমোইও এলাকা থেকে গাড়ি তুলে নিয়ে গিয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গদের একটি দল। মোহাম্মদ রশিদের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শীলকূপ ইউনিয়নে। তিনি মনিকা প্রদেশের চিমোইও এলাকায় ব্যবসা করেন।
গত ২৯ নভেম্বর গভীর রাতে মোজাম্বিকের জাম্বেজিয়া প্রদেশের মাজেমাত এলাকায় একদল ডাকাত সরওয়ার উদ্দিন (২৮) নামের এক বাংলাদেশিকে প্রথমে পিটিয়ে ও পরে গুলি করে হত্যার পর মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। নিহত সরোয়ারের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায়।
সিপি