পুলিশ দেখে সুর পাল্টালেন ভিক্ষা করতে বলা সেই বাড়িওয়ালা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভিক্ষা করে বাসা ভাড়া দিতে বলা বাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে খুলশী থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (৫ মে) রাত ৮টার দিকে খুলশী থানার পক্ষ থেকে পুলিশের একটি টিম যায় ওই বাড়িতে। পুলিশকে দেখে পাল্টে যায় সে বাড়িওয়ালার সুরও।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ জোন) পরিত্রাণ তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ে জটিলতার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ওই বাড়ির মালিকের কাছে খুলশী থানা পুলিশের একটি টিম পাঠানো হয়েছে। এরপর বাড়ির মালিক আমাকে ফোনে বলেন, বিষয়টি আমাদের মধ্যে ঠিকঠাক হয়ে গেছে। চবির ছাত্র মিজান আমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘এর আগে চবি শিক্ষার্থী মিজানের সঙ্গে সিএমপির উত্তর জোনের ডিসি বিজয় বসাক স্যারের কথা হয়। ডিসি স্যারের নির্দেশে ওই বাড়ির মালিকের সঙ্গে খুলশী থানা পুলিশ যোগাযোগ করে।’

পরিত্রাণ তালুকদার আরও বলেন, ‘ওই বাড়িতে থাকা চবির ১০ জন শিক্ষার্থী এখন যার যার গ্রামে অবস্থান করছেন। তারা ফিরে আসলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া চবি আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আমি সিএমপি উত্তর জোনের ডিসি বিজয় বসাককে বিস্তারিত জানাই। এরপর আমি সিএমপির সিনিয়র সহকারী কমিশনার পরিত্রাণ তালুকদারের সঙ্গেও কথা বলি।’

মিজান আরও জানায়, ‘পুলিশ ওই বাড়িতে গেলে বাড়ির মালিক পুলিশকে বলেছে, বিষয়টি নিয়ে তিনি নাকি আমার সঙ্গে আমার কথা বলেছেন। আমি নাকি সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য দেওয়ায় তার কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছি। অথচ সংবাদ প্রকাশের পর বাড়ির মালিকের সঙ্গে আমার কোন কথাই হয়নি। পুলিশ আমাকে জানিয়েছে, বাড়ি থেকে ফিরে এলে আমরা যেন থানায় যোগাযোগ করি। তখন তারা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন এ বিষয়ে।’

এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ১০ শিক্ষার্থীকে ভিক্ষা করে বাসা ভাড়া দিতে বলার অভিযোগ উঠে খুলশী থানার আল ফালাহ গলির হাজী নূর আহমেদ সড়কের আলী ভিলার মালিক শামসুন্নাহার বেগমের বিরুদ্ধে।

ওই বাসার ভাড়াটিয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান জানান, আড়াই বছর ধরে ১০ জন মিলে এ বাসায় আছেন তারা। সকলেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে পড়েন। প্রতি মাসে ১৯ হাজার টাকা ভাড়া গুণতে হয় তাদের।

মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা সবাই টিউশন করে নিজেদের খরচ যোগান দিই। আড়াই বছরে কোন মাসেই ভাড়া বকেয়া ছিল না। এখন করোনার কারণে সবাই যার যার বাড়ি চলে গেছে। টিউশনও নেই। এ জন্য এপ্রিল মাসের ভাড়া পরিশোধ করতে পারিনি।’

মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘আমি বাড়িওয়ালা আন্টিকে ফোন দিয়ে ওনার খোঁজখবর নিয়ে বললাম, আমরা যারা মেসে থাকি সবাই নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। টিউশন করে চলি। এখন পরিস্থিতির কারণে টিউশনও নাই। ফ্যামিলিতে সবার ভাল আয়ের কোন ব্যবস্থাও নাই। এখন আপনি যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত ভাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করতেন তাহলে আমরা উপকৃত হতাম। উনি এই কথা শুনেই বলেন, আমি বাসা ভাড়া দিয়েছি। আমি ভাড়া চাই। তোমরা ভিক্ষা করে হলেও ভাড়া এনে দাও। আমার ভাড়ার টাকা না দিলে আমি কোন জিনিসপত্র বাসা থেকে নামাতে দেবো না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাড়ির মালিক শামছুন্নাহার বেগম বলেন, ‘এটা আমার আর মিজানের বিষয়। সে সাংবাদিককে কেন জানালো? মিজান কি আমাকে সোজা পেয়েছে? মিজান আমাকে হাইকোর্ট দেখাতে চাইলে আমি তাকে নাঙ্গলকোট দেখাবো। তাকে চট্টগ্রাম শহরে আসতে বলিয়েন।’

বিষয়টি নিয়ে ‘চবির ১০ শিক্ষার্থীকে ভিক্ষা করে ভাড়া দিতে বললেন বাড়ির মালিক’ শিরোনামে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদ প্রকাশের পরপরই পুলিশ বিষয়টি নিয়ে ওই বাড়িতে থাকা চবি শিক্ষার্থী ও বাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

এমআইটি/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!