পুলিশের বিরুদ্ধে ‘নকল মামলা’, বাদি নিজেই আটকালো দুদকের জালে

নিজের অপকর্ম ঢাকতেই পতেঙ্গা থানার সাবেক ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে উল্টো দুদকের জালে ফেঁসে গেলের নুরুল আবছার নামের এক মাদক ব্যবসায়ী।

সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ওই মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম বাদি হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর- দুদক/সজেকা/চট্টগ্রাম-১ এর মামলা-১২।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের পিপি কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মামলার আসামি নুরুল আবছার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালতে দায়ের করা ১৩/২০১৯ নম্বরের ওই মামলায় পতেঙ্গা থানার সাবেক ওসি (বর্তমানে পাঁচলাইশ) আবুল কাশেম ভুঁইয়া ও এসআই তরুণ কান্তি শর্মা সহ পুলিশের ৬ সদস্য এবং আরও ৩ জনকে আসামি করা হয়। দুদকের তদন্তে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। যা দুদকের ২০০৪ এর ২৮ (গ) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি ও ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এনে পতেঙ্গা থানার সাবেক ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন নুরুল আবছার। মামলায় আসামি করা হয় পতেঙ্গা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভুঁইয়া, সেকেন্ড অফিসার প্রণয়, এএসআই তরুণ কান্তি শর্মা, এসআই আবদুল মোমিন, পতেঙ্গা থানার সাবেক এএসআই কামরুজ্জামান, এএসআই মিহির, ইলিয়াস, জসিম ও নুরুল হুদা।

মামলায় অভিযোগ আনা হয় পতেঙ্গা থানার সাবেক ওসিসহ আসামিরা তাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৩০ লাখ টাকা ঘুঘ দাবি করেন এবং ১৫ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন। এছাড়া বাকি ১৫ লাখ টাকা দিতে আসামিকে চাপ প্রয়োগ করে। আরও অভিযোগ করা হয় নুরুল আবছারের শ্যালেকের মোবাইল ফোনে কল করে টাকা দাবি করেন পতেঙ্গা থানার এএসআই তরুণ কান্তি শর্মা।

তবে আদালত বিষয়টি দুদককে অনুসন্ধান করতে দিলে দুদক অনুসন্ধান করে দেখেন মামলায় যার নম্বর দেওয়া হয়েছে সেটি মিথ্যা। এছাড়া মামলা যাদের স্বাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে তাদের সন্ধানও পাওয়া যায়নি। এছাড়া নুরুল আবছারের কাছ থেকে পুলিশের ঘুষ নেওয়া ও ঘুষ দাবির বিষয়টি সত্য নয়। সবকিছু মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে ২০০৪ এর ২৮ (গ) ধারায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এছাড়া দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয় তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, নুরুল আবছার মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি চার্জশীটভুক্ত অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ছিলেন। বিচারাধীন মামলার একজন আসামি গ্রেপ্তার করতে গিয়ে উল্টো পুলিশকেই আসামি হতে হলো।

তিনি বলেন, মামলাটি পুরোই হয়রানিমূলক ও মিথ্যা ছিল। তাই বিশ্বাস ছিল, তদন্তে সত্যটি প্রকাশ পাবে এবং আমরা সুবিচার পাবো।

প্রসঙ্গত, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ১৬ মার্চ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য খন্দকার গোলাম মওলা নকশবন্দী সাক্ষরিত এক চিঠিতে নুরুল আবছারকে দলটির ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য করা হয়। পরে নুরুল আবছারে বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠে। এমনকি মাদক ব্যবসায় সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক উপ-কমিটি থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারও করা হয়।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!