পুলিশের প্রশ্রয়ে চকবাজারে টিনু গ্রুপের চাঁদাবাজি, প্রতিবাদ করলেই সাজানো মামলা

‘সাজানো’ মামলায় পুলিশের ‘মনগড়া ও একতরফা’ প্রতিবেদন

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকার ফুটপাত থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চলছে নির্বিচার চাঁদাবাজি। র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বসেই চকবাজারের সন্ত্রাসী নুর মোস্তফা টিনু চাঁদাবাজির পুরো বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন। তার গ্রুপের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে চকবাজার হারাতে বসেছে ব্যবসার ঐতিহ্য। চাঁদাবাজির শিকার অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে।

চাঁদাবাজদের সঙ্গে স্থানীয় থানার পুলিশের গোপন সখ্যতায় এসব নিয়ে অভিযোগ দেওয়ারও সাহস পাচ্ছে না। প্রতিবাদ করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছে, আবার কেউ ‘সাজানো’ মামলার আসামি হয়ে ধরনা দিচ্ছে পুলিশের কাছে।

অভিযোগ, ভুক্তভোগীদের পাশে না থেকে পুলিশ উল্টো চাঁদাবাজদের পক্ষই নিচ্ছে। টিনু গ্রুপের সঙ্গে বিশেষ সখ্যতার কারণে অভিযোগ নিয়ে ভুক্তভোগীদের থানার কাছেও ঘেঁষতে দেওয়া হয় না। এমনকি মামলার প্রতিবেদনও দেওয়া হচ্ছে মনগড়া, প্রায় সব ক্ষেত্রে একতরফা। চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব অজানা নানা তথ্য।

জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ঠেকাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে টিনু গ্রুপের সন্ত্রাসীরা। এরই মধ্যে টিনু গ্রুপের সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এছাড়া সুনির্দিষ্ট মামলাও হয়েছে দুটি এবং অন্তত ১৫টি থানায় অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

তবে অভিযোগ কিংবা মামলা দায়ের করে উল্টো অভিযোগকারীরাই পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলা দায়েরের পর তদন্তের নামে পদে পদে হয়রানি করা হচ্ছে বাদি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলা দিয়েও হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগকারীদের। এসব মামলার তদন্তও হচ্ছে পুরোপুরি একতরফা— এমন অভিযোগ এসেছে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে।

চকবাজার এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই টিনু কারাগারে বসেই চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তার গ্রুপের সন্ত্রাসীরা। কারাগারে থাকায় টিনুর হয়ে মাঠে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে শাহাদাত হোসেন প্রকাশ লেংড়া রিফাত, রবিউল ইসলাম রাজু, সাদ্দাম হোসেন ইভান, অভিক দাশগুপ্ত, নাহিদুল ইসলাম জাবেদ, মো. নাছির উদ্দিন প্রকাশ লম্বা নাছির, টিনুর ছোটভাই চকবাজার থানা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুল আলম শিপু, কায়সার হামিদ, বিপ্লব দে প্রকাশ এলজি বিপ্লব, সৌরভ উদ্দিন প্রকাশ গুলি বাপ্পা, হামকা জুলহাস, নুরন্নবী, মিজানুর রহমান, মানিক, ইমন রসিদ প্রকাশ ইয়াবা সাইয়িদ, দিপুসহ অন্তত ২০ সন্ত্রাসী। এদের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অস্ত্রবাজি, মারামারির মামলাও রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধান
গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে টিনুকে পাঁচলাইশ শুলকবহর রওশন বোর্ডিং এলাকা থেকে টিনু ও তার সহযোগী জসিমকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাবের একটি দল। গ্রেপ্তারের পর তাকে নিয়ে আসা হয় কাপাসগোলা টিনুর কথিত টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত ইদ্রিস ভিলায়। গ্রেপ্তারের পরই তার গ্রুপের সন্ত্রাসীরা গা-ঢাকা দিলেও কয়েকদিন পর আবার এলাকায় ফিরে আসে তারা।

পুলিশের প্রশ্রয়ে চকবাজারে টিনু গ্রুপের চাঁদাবাজি, প্রতিবাদ করলেই সাজানো মামলা 1

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা
২৮ সেপ্টেম্বর ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। এ উপলক্ষে বিকেল ৫টায় কাপাসগোলা জামতলা জামে মসজিদে চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের উদ্যোগে চলছিল দোয়া মাহফিল। এ সময় সেখানে চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান, কাপাসগোলা ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কাপাসগোলার ইদ্রিস ভিলায় টিনুর টর্চার সেল এলাকায় ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটায় টিনু গ্রুপের সন্ত্রাসীরা জড়ো হয়। এদের মধ্যে টিনু গ্রুপের নুরন্নবী, রাজু, মিজান, মানিক, ইমন, মামুন, জেড মনিরকে দেখা যায়। জড়ো হওয়ার পরই চকবাজার ও পাঁচলাইশ থানা পুলিশের দুটি টিম এবং রিজার্ভ পুলিশের একটি টিম এসে তাদের তাড়িয়ে দেয়। পরে পুলিশের তিনটি গাড়ির মধ্যে দুটি রাত ৯টা পর্যন্ত ওই স্থানে অবস্থান নেয়। আরেকটি গাড়ি সন্ধ্যায় চলে যায়।

এর মধ্যে দোয়া মাহফিল থেকে বেরিয়েই পুলিশসহ অতিরিক্ত লোকজন দেখেই চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান, কাপাসগোলা ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক হাজী সেলিমুর রহমান, যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা, মো. মহিউদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনসহ ১৫-২০ জন জড়ো হওয়া স্থানে যায়। এ সময় পুলিশের দুটি গাড়ি একসঙ্গে এবং ৩০-৪০ গজ দূরে আরেকটি গাড়ি দেখতে পেয়ে তারা পুলিশের গাড়ির দিকেই এগিয়ে যায় এবং দেখা যায় পুলিশের গাড়িতে একজন করে পুলিশ সদস্য (চালক) ছাড়া আর কেউ নেই।

পুলিশের গাড়ির সামনেই কয়েকটি মোটরসাইকেল রয়েছে। রাস্তার বিপরীত থেকেই দুজন লোক হেলমেট পড়া অবস্থায় পুলিশের গাড়ির সামনে দাঁড়ানো মোটরসাইকেলের দিকে আসছে। হেলমেট পড়া দুজনের দিকেই এগিয়ে যায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন। এদের কাছে তিনি জানতে চান কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা, এতো পুলিশ কেন? এ সময় তারা নিরুত্তর থাকে। বরং তারা গালিগালাজ করছে। আলাপ শুরুর ১১ সেকেন্ডের মাথায় হেলমেট পরা যুবকরা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায়।

হেলমেট পরা দুজন কারা?
মাথায় হেলমেট থাকায় এদের চিনতে পারেননি কেউ। অনুসন্ধানে জানা যায়, হেলমেট পরা দুজনের একজন মোহাম্মদ নুরুন্নবী এবং মানিক প্রকাশ খালপাড়ের মানিক। তারা দীর্ঘদিন ধরে টিনু গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রচার রয়েছে মোহাম্মদ নুরুন্নবী নামে টিনু গ্রুপের ওই সদস্য দীর্ঘদিন ধরে চকবাজার এলাকায় সবকটি গার্মেন্টেসের ঝুট ব্যবসার একমাত্র নিয়ন্ত্রক। আর খালপাড়ের মানিকের বিরুদ্ধে রয়েছে চকবাজারে চাঁদাবাজি ও মারামারির অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাদের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে টিনুর ভয়ে প্রকাশ্যে এতোদিন কেউ প্রতিবাদ কিংবা মামলা করেনি।

এক মামলার ঘটনাস্থল দুটি, থানাও দুটি
২৯ সেপ্টেম্বর চকবাজার থানায় একটি অভিযোগ করেন টিনু গ্রুপের মোহাম্মদ নুরন্নবী। অভিযোগে ঘটনাস্থল দেখানো হয় চকবাজার থানার সিটি করপোরেশন চকসুপার মার্কেটের সামনের সড়কে (সময় বিকেল ৫ টা)। ওই অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা ও চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. মোশারফ হোসেনের ছেলে দেলোয়ার হোসেনসহ ৮-১০ জন তাকে শার্টের কলার চেপে ধরে এই এলাকায় না থাকার হুমকি দেন।

এ বিষয়ে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা চকবাজার থানার সাবেক সেকেন্ড অফিসার মুহিদুল আলম (বর্তমানে কক্সবাজার সদর থানার ওসি গোয়েন্দা) চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সরেজমিন তদন্তে এ ধরনের কোন ঘটনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া অভিযোগকারী নুরুন্নবী একই সময় একই ঘটনায় উল্লেখ করে একইদিন পাঁচলাইশ থানা ও চকবাজার থানা দেখিয়ে দুটি অভিযোগ করেছেন। আমি নুরুন্নবীকে থানায় ডেকে এনে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এছাড়া এ ঘটনায় কোন সাক্ষীও দেখাতে পারেননি নুরুন্নবী।

২ অক্টোবর একই ঘটনায় আদালতে একটি সিআর মামলা (নম্বর ৭১৫/১৯) দায়ের করেন মোহাম্মদ নুরুন্নবী। মামলার বিবরণে সময় ঠিকই বিকেল ৫টায়, কিন্তু বদলে যায় ঘটনার ধরন এবং ঘটনাস্থল। এবার মামলায় ঘটনাস্থল দেখানো হয় চকবাজার থানার বদলে পাঁচলাইশ থানা এলাকার নবাব হোটেলের পাশে ইদ্রিস ভিলার সামনে সড়কে। একই দিন একই সময়ে ঘটনাস্থল দুটির তফাৎ কমপক্ষে এক কিলোমিটার।

বদলে যায় মামলার ধারা, যুক্ত হয় ‘চাঁদাবাজি’
চকবাজার থানায় লিখিত অভিযোগে নুরন্নবীকে কলার চেপে ধরা এবং হুমকির কথা বলা হলেও এবারের সিআর মামলায় বদলে যায় আগেরকার বিবরণ। এবার যুক্ত করা হয় ‘চাঁদাবাজি’র ধারাসহ আরও ৫টি ধারা। মামলায় বলা হয় ১০ লাখ টাকার ‘চাঁদা’ চাওয়ার কথা।

১১ সেকেন্ডেই ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মাথায় হেলমেট পরা নুরন্নবীর সঙ্গে দেলোয়ারের অবস্থান কিংবা কথার সময় মাত্র ১১ সেকেন্ড। ১১ সেকেন্ড পরই মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায় নুরন্নবী। ওই ১১ সেকেন্ডেই ১০ লাখ চাঁদা দাবির বিষয়টি বেশ প্রশ্নবিদ্ধ ও দূরসন্ধিমূলক বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

তদন্ত আসে পিবিআইয়ের কাছে
সিআর মামলাটি পিবিআইকে তদন্তে নির্দেশ দেন আদালত। তদন্তের দায়িত্ব আসে পিবিআই এসআই মো. হুমায়ুন কবীরের কাছে। তদন্ত সময়কালে তিনি আসামিদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। বরং ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে, সিসিটিভি ফুজেসহ যাবতীয় প্রমাণাদি দিতে পিবিআই অফিসে ছুটে যায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে তদন্তকারী কর্মকর্তা- এমন অভিযোগ আসামিদের।

পাঁচলাইশ থানা পুলিশের ভুল তথ্য
পিবিআই/চট্টগ্রাম মেট্টো/৫৪০৭/১(২) নম্বর স্মারকে পিবিআই থেকে পাঠানো পত্রে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের কাছে জানতে চাওয়া হয়- আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা আছে কিনা? বিষয়টি লিখিত জানাতে দায়িত্ব দেওয়া হয় এএসআই কাজী জাহাঙ্গীর আলমকে। কিন্তু সত্য তথ্যটি চাপা পড়ে যায় তার পাঠানো ভুল প্রতিবেদনে। ১৭ অক্টোবর পিবিআইকে পাঠানো এএসআই কাজী জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয় দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একটি মামলা (নম্বর- ১৪/২০১২) রয়েছে। অথচ রাজনৈতিক এই মামলা আদালত খারিজ করে দিয়েছে ২০১৪ সালেই।

তদন্ত প্রতিবেদন আয়ত্তে আনতেই মিথ্যা সাক্ষী বানিয়ে হুমকির জিডি
মামলার গরমিল ও মিথ্যা তথ্যকে জায়েজ করতেই এবং মামলার তদন্ত প্রতিবেদন নিজেদের আয়ত্তে আনতেই মরিয়া হয়ে উঠে টিনু গ্রুপের নুরন্নবী সিন্ডিকেট। এ নিয়ে অজানা ও অচেনা মো. ইলিয়াছ নামের এক লোককে সাক্ষী বানিয়ে অভিযোগ করেন নগরের পাঁচলাইশ থানায়। নিজেকে মোহাম্মদ নুরন্নবীর দায়েরকৃত সিআর মামলার সাক্ষী দাবি করে লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়, তাকে ১৪ অক্টোবর একা পেয়ে আসামিরা শার্টের কলার ধরে টানাটানি ও ভয়ভীতি দেখায়। থানায় অভিযোগটি করা হয় ‘কথিত ঘটনার’ ২দিন পর (১৬ অক্টোবর)।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মোহাম্মদ নুরন্নবীর দায়ের করা সিআর মামলায় (নম্বর-৭১৫/১৯) মো. ইলিয়াস নামে কোন সাক্ষীর নাম নেই।

অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ
মো. ইলিয়াছের অভিযোগ পেয়েই তদন্তে মাঠে নামে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই আশিককে। থানা সূত্রে জানা যায়, তদন্তের জন্য অভিযোগকারী ইলিয়াসকে বারবার ডাকা হলেও তিনি আর থানায় আসেননি।

পাঁচলাইশ থানার ওসি যা বললেন
ওই অভিযোগের বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে তদন্তে এ ধরনের কোনো ঘটনার অস্তিত্ব পায়নি পুলিশ। কিংবা কোনো সিআর মামলার সাক্ষীতেও নাম নেই অভিযোগকারীর। তিনি অভিযোগ দিয়েই দায় সেরেছে, থানায় আর আসেনি। এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

সাজানো অভিযোগ পৃথক, কিন্তু ঘটনার বিবরণ একই
অনুসন্ধানে দেখা যায়, চকবাজার থানায় মোহাম্মদ নুরন্নবীর অভিযোগ ও পাঁচলাইশ থানায় মো. ইলিয়াছের অভিযোগের ঘটনার বিবরণের ধরণ একই। অথচ অভিযোগকারী দুজন। ঘটনার বিবরণে দুজনই বলেছে শার্টের কলার ধরে টানাটানি ও হুমকির কথা।

হাত বাড়ালেই কাপাসগোলায় পাওয়া যায় ‘তদন্ত প্রতিবেদন’
অভিযোগ রয়েছে, গত একসপ্তাহ ধরে চকবাজারে টিনু গ্রুপের হাতে হাতে পাওয়া যাচ্ছে পিবিআইর একটি ‘তদন্ত’ প্রতিবেদন। এলাকাবাসী জানান, আসামিদেরকে সামাজিকভাবেই ঘায়েল করতেই কাপাসগোলা এলাকায় প্রচার করছে টিনু গ্রুপ। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে প্রতিবেদনের কপি। পিবিআইর এসআই মো. হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত ৫ পৃষ্ঠার এমন একটি তদন্ত প্রতিবেদনের কপি চট্টগ্রাম প্রতিদিনের এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাঁচলাইশ থানায় কথিত অভিযোগকারী মো. ইলিয়াছকে ২ নম্বর নিরপেক্ষ সাক্ষী দেখানো হয়েছে। অথচ দায়ের করা মামলার ইলিয়াস নামের কেউ সাক্ষী ছিলেন না। এছাড়া দেলোয়ার হোসেনের দায়ের করা সিআর মামলার (নম্বর-৭৭৬/১৯) দুজন আসামি রবিউল ইসলাম রাজু এবং প্রদীপ আচার্যকে সাক্ষী হিসেবে দেখানো হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে মামলার আগে চকবাজার থানায় বাদির অভিযোগের তারিখ ও তথ্য উল্লেখ থাকলেও মামলা ও ওই অভিযোগের ঘটনার বিবরণের গড়মিল, স্থানের অমিল এবং সিসিটিভি ফুটেজে মাত্র ১১ সেকেন্ডেই ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির বিষয়টি উঠে আসেনি। এছাড়া নিরপেক্ষ সাক্ষী হিসেবে দেখানো ইলিয়াসের পাচঁলাইশ থানার অভিযোগের কথা উল্লেখ থাকলেও অভিযোগ পরবর্তী পাঁচলাইশ থানা পুলিশের কোনো তথ্য উঠে আসেনি। বরং ইলিয়াসের কথিত অভিযোগকেই তদন্ত প্রতিবেদনে গুরত্ব দিয়েই আলাদা প্যারায় দেখানো হয়েছে।

পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা যা বললেন
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ন কবীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তদন্ত শেষে আমরা এরইমধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। ‘তদন্ত প্রতিবেদন’ ৫ পৃষ্ঠার একটি কপি চকবাজার কিংবা কাপাসগোলা টিনু গ্রুপের হাতে হাতে পাওয়া যাচ্ছে— এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটাতো আমি বলতে পারবো না। তদন্তের শেষেই আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছি।’

পিবিআই মনগড়া ও একতরফা প্রতিবেদনের অভিযোগ
তদন্তের নামে এসআই মো. হুমায়ন কবীরের একতরফা ও মনগড়া প্রতিবেদনের অভিযোগ এনে এবং থানা মিথ্যা অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা সচিব, পুলিশের আইজিপি, পিবিআই মহাপরিচালক, সিএমপি কমিশনারসহ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!