পিটিয়ে মারার মুহূর্তে বিপন্ন মেছোবাঘ উদ্ধার, মাকে মারা হল আগেই
বনবিভাগের উদাসীনতায় একের পর এক বিপন্ন মেছোবাঘ নিধন
মেছোবাঘ পিটিয়ে মেরে উল্লাস করার ঘটনা সন্দ্বীপে ঘটতে দেখা যায় প্রায়ই। তবে এবার চট্টগ্রামের এই দ্বীপ উপজেলায় পিটিয়ে মারার আগেই মেছোবাঘের (বাঘডাশ) একটি ছানা উদ্ধার করা হয়েছে ক্ষ্যাপা জনতার হাত থেকে। এর আগেই মেছোবাঘের চার দিন বয়সী ওই ছানাটির মাসহ অপর একটি বাচ্চাকে হত্যা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সন্দ্বীপের মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ড থেকে ছানাটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় সাংবাদিক নরোত্তম বণিক বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন।
ওইদিন দুপুরে মাইটভাঙ্গার একটি মাঠে মেছোবাঘের ছানাটিকে পিটিয়ে মারা হচ্ছে— এমন খবর পেয়ে ওই সাংবাদিক সেখানে ছুটে যান। পরে জড়ো হওয়া লোকজনকে বুঝিয়ে তিনি ছানাটিকে নিরাপদে নিয়ে আসতে সক্ষম হন। বিকেলে উপকূলীয় বনবিভাগের সন্দ্বীপ শিবেরহাট রেঞ্জ অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে সেটি তুলে দেন।
তবে ইতিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়া মেছোবাঘের ছানাটির চিকিৎসার জন্য সন্দ্বীপ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছে বনবিভাগ।
এর আগে গত জুলাইয়েও সন্দ্বীপ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে একটি মেছোবাঘকে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয়রা। মূলত বনবিভাগের উদাসীনতায় নিয়মিতভাবে এভাবে বিপন্ন প্রজাতির এই প্রাণীটি নিধন হয়ে আসছে সন্দ্বীপে। প্রতিবছর ৮-১০টি করে মেছোবাঘ হত্যা করা হলেও কোনো ঘটনায় সামান্য পদক্ষেপও নেয়নি বনবিভাগ।
মঙ্গলবারের ঘটনায় বনবিভাগের উদাসীনতায় ক্ষোভ জানিয়ে সাংবাদিক নরোত্তম বণিক বলেন, ‘বিকেলে বাচ্চাটি উদ্ধার করে ফরেস্ট অফিসারকে ৮ বার কল দিই। তিনি কল ধরেননি। পরে এটিকে শিবেরহাটের রেঞ্জ অফিসে এনে হস্তান্তর করি। প্রথমে তারা গ্রহণ করতে চায়নি। পরে পরিচয় দেওয়ার পর তারা ৪-৫ দিনের বাচ্চাকে বনে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আমি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করলে অবশেষে বাচ্চাটি উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।’
মেছোবাঘ সাধারণত নদীর ধারে, পাহাড়ি ছড়া এবং জলাভূমিতে বাস করে। সাঁতারে পারদর্শী হওয়ায় এ ধরনের পরিবেশে সহজেই খাপ খাওয়াতে পারে। এদের গায়ে ছোপ ছোপ চিহ্ন থাকার জন্য চিতাবাঘ বলেও ভুল করা হয়।
মেছোবাঘ, বাঘডাশ বা মেছো বিড়াল (ইংরেজি Fishing Cat), (বৈজ্ঞানিক নাম Prionailurus viverrinus) মাঝারি আকারের বিড়ালগোত্রীয় একধরনের স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী। বিগত কয়েক দশকে মেছোবাঘের সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। জনবসতি স্থাপন, কৃষিজমিতে রূপান্তর ও অন্যান্য কারণে মেছোবাঘের আবাসস্থল জলাভূমিগুলো দিন দিন সংকুচিত ও হ্রাস পাওয়াই এর মূল কারণ। ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) মেছোবাঘকে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে।
সিপি