ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শুক্রবার (৩ মে) দুপুরের পর রাজধানী ঢাকা, খুলনা, বরিশাল অঞ্চলের পাশাপাশি চট্টগ্রামেও হয়ে গেল একচিলতে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে ফণীর প্রভাবে শুক্রবার রাত থেকে টানা দুইদিন ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। অতীতে অতিবৃষ্টির ফলে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় এবারও উৎকণ্ঠিত নগরবাসী।
১৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৯তম সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পাহাড়ের বসতি থেকে ওয়াসা, বিদ্যুৎসহ সেবা সংস্থাগুলোর যাবতীয় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার। কিন্তু ৩ মে সরেজমিনে লালখান বাজার মতিঝর্ণা ও টাইগার পাসের বাটালিহিল এলাকা ঘুরে দেখা গেলো ওই সিদ্ধান্ত এখনো কাগজে-কলেমেই।
মতিঝর্ণার সাত নম্বর গলির বাসিন্দা কুলসুম আক্তার জানান, তিনি বাসাবাড়িতে বুয়ার কাজ করেন। স্বামী রিক্সাচালক। দুই হাজার ৩০০ টাকা ভাড়ায় তারা তিন সন্তান নিয়ে গাদাগাদি করে থাকেন। কলোনি ধরনের আট পরিবারের জন্য রয়েছে দুইটি গ্যাসের চুলা। সবার জন্য রয়েছে কমন গোসলখানাও।
বাটালীহিল এলাকায় ভাঙ্গারি দোকানের কর্মচারী রাসেল জানান, পিতা-মাতা দুই বোন নিয়ে তারা বসবাস করেন ইসলাম কলোনীতে। ‘ইসলাম সাহেব’ নামের একজন তাদের বাড়িওয়ালা। বাড়িটা আধাপাকা। ইসলাম সাহেবের বাড়ির মতো আরো ডজনখানেক বাড়ি একটার সাথে আরেকটা লাগোয়া। একাধিক বাড়ি আছে তাদের দুই বাড়ির ‘জয়েন্ট ওয়াল’। বাড়িগুলো মূলত বাংলাদেশ রেলওয়ের জায়গা দখল করে তৈরি করা। সেমিপাকা ছাড়াও আছে দোতলা, তিনতলা এমনকি ছয়তলা বাড়িও।
মতিঝর্ণা এলাকার পুরো চিত্রটি দেখার জন্য যেতে হবে লালখানবাজারের টাংকি পাহাড়ে। টাংকির পাহাড় থেকে দেখা যায়, পাহাড়ের ঢালুতে মাটির বস্তায় ঠেকিয়ে ইটশুড়কির ঘর তৈরি করা হয়েছে। টিন আর বাঁশের বেড়ার ঘর তো আছেই। কিছু কিছু ঘর দেখা যাবে একটার উপর আরেকটা তৈরি।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিমালিকানা মিলিয়ে ১৭টি পাহাড় রয়েছে। ১০টি ব্যক্তিমালিকানার এবং বাকি ৭টির মালিক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চল, চট্টগ্রাম ওয়াসা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এ সব পাহাড়ে ৮৩৫টি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।
ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে কেন বসবাস করছেন, জানতে চাইলে বাটালিহিল এলাকার ষাটোর্ধ্ব সিরাজ মিয়া বলেন, ‘কম রোজগারের মানুষ আমরা। যাবো কই? ঝুঁকি আছে জানি। তারপরও থাকার জন্য থাকা।’