পাহাড়ে জমি কেনার জন্য শ্বশুরকে বানালো পিতা!

চট্টগ্রাম নগরীতে রেলওয়ের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনাসহ টেন্ডারবাজি, মাস্টার লেন সৃজনী মাঠের পার্শ্বে অবৈধ বাড়িঘর, বাগান নির্মাণ, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ কিশোর গ্যাং গ্রুপ গঠন করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন শামসুল আলম। তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনায় মাইকিংয়ে হামলার ঘটনায় ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশের পর তার বিষয়ে বেরিয়ে আসে বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির তথ্যও।

প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, তার ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রে দেখা যায়, তার নাম শামসুল আলম —পিতা আলিফ রব্বানী,মাতা— হোসনে আরা বেগম ভোটার নম্বর-১৫০৭৯৮৭১৫১৫৩, ৬৭২/সি নিউ শহীদ লেন,বর্তমান থানা, আকবরশাহ, জন্ম ১৯৮১।

এদিকে স্থায়ী বাসিন্দা সনদে দেখো যায়, রাঙামাটি জেলার জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিনের দেওয়া ওই সনদের তারিখ-১২ই মার্চ/১৩। সেখানে তার পিতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে ময়নুল হক, মাতা হাজেরা বেগম, ঠিকানা—খাগড়াছড়ি ৫ নম্বর ওয়ার্ড, ভাসান্যাআদম ইউনয়িন, লংগদু উপজেলা এবং সেখানে তার জন্ম সনদের নম্বর ০১০১১২ তারিখ- ১১.৯.২০১২ পিতা ময়নুল হককে উল্লেখ করে ৫ নম্বর ভাসান্যাআসম ইউপি চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন তাকে জন্মসনদ দেন। আলমের পিতার নাম নিয়ে জালিয়াতি দেখে হতবাক হয়েছেন সেখানের বসবাসকারীরাও।

প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে আরো বিশদ তথ্য বের হলো— সেখানে তিনি ২০ একর জায়গা কেনেন করে ভুয়া নাম দিয়ে। ভূমির বাজার মূল্য প্রায় কয়েক কোটি টাকা।

এ বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেন ৫ নম্বর ওয়ার্ড স্হানীয় ইউপি মেম্বার হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘ময়নুল হক আলমের শ্বশুর, হাজেরা বেগম তার শাশুড়ি। ময়নুল হকের ১ ছেলে ৩ মেয়ে। ছেলের নাম আব্দুর রহিম। ময়নুল হকের বড় কন্যা মাকসুদাকে বিয়ে করেন আলম।

তিনি আরো বলেন, ‘সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে জেনেছি এসব কাগজ পত্র জাল।মূলত কেউ তাকে এমন সার্টিফিকেট ইস্যু করেনি। তাহলে কিভাবে সে এসব জায়গা ক্রয় করলো?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান চেয়ারম্যান হয়রত আলী বলেন,‘তাকে জন্ম সনদ আমি দিইনি, সাবেক চেয়ারম্যান ও দেননি বলে জানালেন।তবে কিভাবে পেল সে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কতৃক স্হায়ী বাসিন্দা সনদ?

চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, ‘এ জাল সনদের বিষয়ে তদন্ত করে ময়নুল হক ও তার মেয়ের জামাই আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেওয়া হবে।’

মেয়ের জামাইকে নিজের সন্তান বানাতে জালিয়াতির সাথে জড়িত শ্বশুর ময়নুল হকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি কথা বলতে রাজী হননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুল আলম বলেন, ‘শ্বশুরের নাম আব্দুল মান্নান ময়নুল নয় বরং আমার পিতার নাম আলিফ রাবনী ওরফে ময়নুল হক।’

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি সে সময়ে দায়িত্বে ছিলাম না। অনেক সময় চেয়ারম্যান বা তার ইউপি মেম্বাররা এসে পরিচয় নিশ্চিত করে স্হায়ী সনদ নিয়ে যায়। তবু এমন কোন বিষয় এখানে হয়েছে কিনা নাকি জালিয়াতি তা যাচাই করে ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে। জাল সনদের কপিগুলো হোয়াটস অ্যাপে পাঠাবেন।’

জেএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!