প্রতিদিন রিপোর্ট :
টেরিবাজার আফিমের গলিতে ভগ্নিপতিকে খুন করে থানায় গিয়ে অপরাধ স্বীকার করেছেন শ্যালক বাবলু ধর (২১)। খুন করার কারণ জানতে চাইলে বাবলু ধর পুলিশকে জানায় দাম্পত্য কলহের জের ধরে অঞ্জন তার বোনের ওপর নির্যাতন চালাতো। পাশাপাশি তাকেও নানা অজুহাতে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতো।
খুনের আগের দিন শনিবার রাতেও তাকে তিরস্কার করে ভগ্নিপতি অঞ্জন। অপমান সহ্য করতে না পেরে তখন থেকেই বাবলু মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই রবিবার সকালে বোন তার ছেলে মেয়েদের স্কুলে দিতে গেলে হত্যা করবে ভগ্নিপতিকে। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ, রবিবার সকালে বাবলু একাই ঘুমন্ত অবস্থায় তার ভগ্নিপতির গলায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরিকাঘাত করে খুন করে লাশ বস্তাবন্ধি করে বাসার শোভার ঘরে তালা লাগিয়ে দেয়।
পুলিশ বাবলু’র স্বীকারোত্তি মোতাবেক খুনের সকল আলামত সংগ্রহ করে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি এবং একটি কেরোসিন ভর্তি কনটেইনার বাসা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শ্যালক বাবুলের পাশাপাশি নিহত অঞ্জনের স্ত্রী প্রিয়াংকা ধরকেও পুলিশ প্রথমে আটক করে। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে স্ত্রী জড়িত থাকার কোন প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে রাতেই ছেড়ে দেয়া হয়। রাতেই অঞ্জন ধরের স্ত্রী প্রিয়াংকা ধর বাদি হয়ে স্বামী খুনের দায়ে ভাই বাবলুকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
খুনের ঘটনার বিবরণে বাবলু পুলিশকে আরো জানায়, খুনের পর তার ভগ্নিপতি অঞ্জনের লাশটি বস্তাবন্দী করে রাখে। এরপর বাসার বাইরে তালা দিয়ে রক্তমাখা কাপড়চোপড় একটি খালে ফেলে দিয়ে আসে। বোনকে ফোন করে জানিয়ে দেয়, তাঁর ভগ্নিপতি একটি কাজে মানিকছড়ি গেছেন। বোনকে পাশের আত্মীয়ের বাসায় অপেক্ষা করতে বলেন। স্কুল থেকে মেয়ে নিয়ে দ্বিতীয়বার বাসায় গিয়েও তালাবদ্ধ দেখেন তিনি। বাবলু রাত পর্যন্ত বাসায় না ফেরায় আবার ফোন করে বোন প্রিয়াংকা। তখনও বাবলু দুরে আছে বলে অপেক্ষা করতে বলে বোন ও তার ছেলে মেয়েদের। কিন্তু রাতে বাসায় ফিরে অঞ্জনের স্ত্রী দরজায় তালা দেখে সন্তানদের নিয়ে পাথরঘাটায় বাবার বাসায় চলে যান। বাবলু জানায় ভগ্নিপতির লাশটি বাসার বাইরে কোথাও ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা করতে না পেরে সোমবার সকালে সে থানায় হাজির হয়ে পুলিশের কাছে খুন করার কথা স্বীকার করে।
কোতোয়ালী পুলিশ গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় টেরিবাজার আফিমের গলির ধর ভবনের ৫ম তলার দরজা ভেঙ্গে টেরিবাজার এলাকার একটি বাসা থেকে নিহত অঞ্জন ধরের (৩৫) মরদেহ উদ্ধার করে। অঞ্জন ধরের গলা ও পেটে ছুরিকাঘাত করে তাকে খুন করা হয়। পুলিশ আত্মস্বীকৃত ঘাতক বাবলু ধরকে গ্রেফতার করে। অঞ্জন ধরের স্ত্রী প্রিয়াংকা ধর বাদি হয়ে ভাই বাবলুকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূর মোহাম্মদ বলেন, বাবুল রোববার এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কথা বললেও মরদেহের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তাকে ২–৩দিন আগেও খুন করা হতে পারে। তিনি জানান, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও কেরোসিন তেল উদ্ধার করা হয় ওই বাসা থেকে।
অঞ্জন ধর নগরীর কোতোয়ালি থানা হাজারি গলিতে একটি স্বর্ণ কারখানায় কাজ করতেন। তার শ্যালক বাবলুও একই কারখানায় চাকুরি করত। অঞ্জন ধরের (৩৫) বাড়ি বাঁশখালী উপজেলার জলদি গ্রামে।
তার সাত বছর বয়সী একটি মেয়ে ও তিন বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। দুই বছর আগে টেরিবাজার আফিনি গলিতে পরিমল দত্তের মালিকানাধিন পাঁচতলা ভবনের উপরের তলার ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। বাসায় স্ত্রী, দুই সন্তান, মা ও শ্যালককে নিয়ে থাকতেন অঞ্জন। কিন্তু পূজার সময় তার মা গ্রামের বাড়ি যান। তিনি এখনো বাঁশখালী থেকে ফেরেননি।
রিপোর্ট : রাজীব সেন প্রিন্স
এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::