পানি মিলছে না চট্টগ্রাম ওয়াসার পুরোনো লাইনে, বিল দিচ্ছেন না গ্রাহকরা
তিন মাসে গড়ে রাজস্ব কমেছে সাড়ে ৬ কোটি
চট্টগ্রাম ওয়াসায় বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ৪০০ কিলোমিটারের পুরাতন পানির পাইপলাইন। এসব পুরাতন পাইপলাইনে পানি সরবরাহ ঠিকভাবে না হওয়ায় বেশিরভাগ সময় পানিবঞ্চিত থাকছেন নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। সেইসঙ্গে পানি না পাওয়ার ক্ষোভে অনেকে কয়েক মাস ধরে বিলও পরিশোধ করছেন না। এতে গত তিন মাসে ওয়াসার গড় বিল আদায় কমেছে ৬ কোটি টাকার বেশি। সেইসঙ্গে ৮৬ হাজারেরও বেশি গ্রাহকের জন্য মাত্র ৩৭ জন মিটার পরিদর্শক থাকায় রাজস্ব আদায়ে বড় প্রভাব পড়ছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, নগরীর পতেঙ্গা, কাট্টলী, জাকির হোসেন সড়ক, দক্ষিণ খুলশী, ফয়’স লেক, আকবরশাহ ও হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকদের অভিযোগ ১৫ দিনে একবারও ভালো করে পানি পান না তারা। আর পানি এলেও তা আধ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয় না।
জানা গেছে, জাইকার অর্থায়নে শেষ হওয়া কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প–২ এর অধীনে শহরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে ৫৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৭০০ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এর বাইরে নগরীর পতেঙ্গা, কাট্টলী, জাকির হোসেন সড়ক, দক্ষিণ খুলশী, ফয়’স লেক, আকবরশাহ ও হাটহাজারীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পুরাতন পাইপলাইন দিয়ে চলছে।
আরও জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা প্রায় ৫০ কোটি লিটার। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়া শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ ও ২ প্রকল্প থেকে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার করে ২৮ কোটি লিটার এবং মোহরা পানি শোধনাগার ও মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগারে ৯ কোটি লিটার করে ১৮ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। এর সঙ্গে গভীর নলকূপের প্রায় দুই কোটি লিটার পানিসহ দৈনিক সরবরাহ করা হয় ৪৭-৪৮ কোটি লিটার পানি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার রাজস্ব শাখা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাজস্ব আদায় হয় ২৩ কোটি ২০ লাখ ৮২ হাজার টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ২২ কোটি ৭৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, মার্চে ২২ কোটি ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার, এপ্রিলে ২২ কোটি ৮৮ লাখ, মে মাসে ২২ কোটি ৭৬ লাখ ১৮ হাজার, জুনে আদায় হয় ২৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। কিন্তু জুলাই মাসে জুনের চেয়ে ৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা কমে আদায় হয় ১৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগস্টে আদায় হয় ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং সেপ্টেম্বরে আদায় হয়েছে ১৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। গত তিন মাসের হিসেবে গড়ে ৬ কোটি ৬০ লাখের বেশি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে।
প্রায় ছয় মাস ধরে ওয়াসার বিল দিচ্ছেন না আকবরশাহ এলাকার বাসিন্দা নেয়ামত ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা রাত জেগে বসে থাকি ওয়াসার পানির লাইনে কখন পানি আসবে? কিন্তু পানি আসে না। আবার দু’সপ্তাহ পর যদি কোনোদিন আসে আধ ঘণ্টার বেশি থাকে না। বছরের পর বছর ধরে আমরা পানি নিয়ে কষ্ট পাচ্ছি। পানি পাই না, কেন বিল দিতে যাবো?’
এদিকে বিল কম আদায় হওয়ার কারণ কি, জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক কর্মকর্তা কাজী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জুনে একটু বেশিই বিল আদায় হয়। কারণ, বকেয়া বিলগুলো আদায় করা হয় জুনে। এরপর থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসায় একটু কম বিল আদায় হচ্ছে। এর সঙ্গে জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল একটা বড় কারণ। বিষয়টা তারপরও আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
তবে বিল কম আদায়ে মিটার পরিদর্শকদের পদ কম থাকাটাও একটা বড় কারণ বলেও দায়ী করেন শহিদুল ইসলাম।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহকদের পানির মিটারের রিডিং দেখে বিল লেখা এবং বিলের কাগজ গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেন মিটার পরিদর্শকরা। কিন্তু ৮৬ হাজার ৩০৯ সংযোগের মিটার পরিদর্শন করতে এ পদে কর্মরত আছেন চার নারীসহ মাত্র ৩৭ জন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘নতুন পাইপলাইন স্থাপন হলে পানির কষ্ট পোহাতে হবে না নগরবাসীকে।’
আইএমই/ডিজে