‘পানি ঘোলা’ করে নাম বদলের চিন্তা থেকে সরলো নির্বাচন কমিশন

বিভিন্ন মহলের আপত্তির মুখে প্রচলিত বিভিন্ন নাম বদলে ফেলার উদ্যোগ থেকে অবশেষে সরে এসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ফলে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগের নামই বহাল থাকছে। এর আগে ভাষাবিজ্ঞানী, সুশীল সমাজ ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের এই ‘অহেতুক’ প্রস্তাবে আপত্তি জানায় রাজনৈতিক দলগুলোর বেশিরভাগই।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন পরিচালনা আইন-২০২০ বাংলায় রূপান্তর করলেও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নাম ও পদবির নামগুলো প্রচলিত শব্দগুলোই রাখা হবে। এক্ষেত্রে বর্তমানে ব্যবহৃত নাম ও পদবিতে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না।’

রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০ এর খসড়া অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের প্রচলিত বিভিন্ন নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছিল। এ অনুসারে সিটি করপোরেশন পরিচিত হবে ‘মহানগর সভা’ নামে, সিটি করপোরেশনের মেয়র পরিচিত হবেন ‘মহানগর আধিকারিক’ নামে, পৌরসভা হবে ‘নগর সভা’, পৌরসভার মেয়রকে ডাকা হবে ‘পুরাধ্যক্ষ’, ওয়ার্ডগুলো হবে ‘মহল্লা’, কাউন্সিলররা পরিচিত হবেন ‘পরিষদ সদস্য’ নামে, উপজেলা চেয়ারম্যানকে ডাকা হবে ‘উপজেলা পরিষদ প্রধান’, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানকে ‘উপজেলা পরিষদ উপপ্রধান’, ইউনিয়ন পরিষদ পরিচিত হবে ‘পল্লি পরিষদ’ নামে আর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ‘পল্লি পরিষদ প্রধান’।

রাজনৈতিক দলগুলোর বেশিরভাগই জানিয়েছে, প্রচলিত নাম পরিবর্তন করে যেসব নামের প্রস্তাব করা হয়েছে তা দুর্বোধ্য। আওয়ামী লীগ পক্ষে বা বিপক্ষে সরাসরি কোনো মত দেয়নি। তবে নাম পরিবর্তনের কারণে একাধিক আইনে সংশোধনী আনার প্রয়োজন পড়বে বলে মতপ্রকাশ করে। অন্যদিকে বিএনপি নাম পরিবর্তনের এই প্রস্তাবকে ‘অনৈতিক ও অপ্রয়োজনীয়’ বলে বর্ণনা করে সরাসরি বিপক্ষে মত দেয়।

জানা গেছে, রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইনের খসড়া নিয়ে ৫৫টি মতামত জমা পড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। এর মধ্যে ১৭টি নিবন্ধিত ও ২৩ অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এছাড়া রয়েছে বেশকিছু সংগঠন। ব্যক্তিগতভাবে মতামত দিয়েছেন ১৫ জন। এই ৫৫টি মতামতের মধ্যে ১৮টিই নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত। এর মধ্যে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নয়টি। এতে বিএনপিসহ ৫টি রাজনৈতিক দলই নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে মতামত দিয়েছে।

বিএনপি জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নামে ইংরেজি শব্দ অক্ষুণ্ণ রেখে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নাম ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পদবি পরিবর্তনের প্রস্তাব অনৈতিক ও অপ্রয়োজনীয়। নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে মত দিয়ে গণফোরাম বলেছে, অন্য ভাষার কিছু কিছু শব্দ বাংলা ভাষায় আত্তীকরণ হলে বাংলা ভাষা দুর্বল হয় না, বরং শক্তিশালী হয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ পক্ষে বা বিপক্ষে সরাসরি কোনো মত না দিলেও নাম পরিবর্তন বা বাংলা পরিভাষা ব্যবহার করলে স্থানীয় সরকারের কয়েকটি আইন পরিবর্তন করতে হবে বলে মতপ্রকাশ করেছে।

জাতীয় পার্টি, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় পার্টি-জেপিসহ বেশ কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দেয়নি।

পৌরসভার মেয়রদের সংগঠন মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ম্যাব লিখিত মতামতে বলেছে, চারটি শব্দকে বাংলা পরিভাষার নামে অপরিচিত ও দুর্বোধ্য শব্দে রূপান্তরিত করার প্রয়াস জটিলতা বাড়াবে, যা অহেতুক ও অগ্রহণযোগ্য। তারা বলেছে, এ শব্দগুলোর পরিবর্তন হলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা ব্যাপক পরিচয় সংকট এবং মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নের মুখে পড়বেন। যা পৌরসভার জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm