পাতায়ার আদলে বাংলাদেশের সাবরাং, প্রতিদিন যেতে পারবে ৪০ হাজার পর্যটক

ভূমি উন্নয়নেই শুধু সরকার খরচ করছে ১৮১ কোটি টাকা

থাইল্যান্ডের পাতায়ার আদলে কক্সবাজারের টেকনাফে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র সৈকতের পাড়ে অবস্থিত এই ট্যুরিজম পার্কটির আয়তন ১ হাজার ৪৭ একর। পার্কটির চলমান কাজ শেষ হলে প্রতিদিন সেখানে দেশি-বিদেশি ৪০ হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। সাবরাং পর্যটন অঞ্চল চালু হলে মাত্র আধা ঘণ্টায় যাওয়া যাবে সেন্ট মার্টিনে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দেখার পর পর্যটকরা সাবরাং পর্যটন অঞ্চল ও সেন্টমার্টিন একসঙ্গে দেখার সুযোগ পাবেন।

পাতায়ার আদলে বাংলাদেশের সাবরাং, প্রতিদিন যেতে পারবে ৪০ হাজার পর্যটক 1

কক্সবাজারের কলাতলী থেকে টেকনাফের যেখানে গিয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়কটি শেষ হয়েছে, তার পাশেই ১ হাজার ৪১ একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে সাবরাং পর্যটন অঞ্চল। এর একদিকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত আর অন্যদিকে সারি সারি পাহাড়। এ দুইয়ে মিলে টেকনাফের সাবরাংকে থাইল্যান্ডের পাতায়ার আদলে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন অঞ্চলে রূপ দেওয়ার কাজ চলছে পুরোদমে।

পাতায়ার আদলে বাংলাদেশের সাবরাং, প্রতিদিন যেতে পারবে ৪০ হাজার পর্যটক 2

বলা হচ্ছে, সাবরাং হবে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পর্যটন অঞ্চল। বিনিয়োগ হবে কয়েক হাজার কোটি টাকা। সেখানে থাকবে পরিবেশবান্ধব শহর, সুন্দরবনের থিম পার্ক ও নাইট সাফারি, রয়্যাল ক্যাসিনো, গলফ ক্লাব, অ্যাকোয়ারিয়াম, জাদুঘর, হেরিটেজ পার্ক, শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, ক্লাবসহ অন্যান্য সুবিধা। এছাড়া থাকছে ১০০ শয্যার হাসপাতাল এবং স্কুল।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনটি তারকা হোটেল নির্মাণের কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। গ্রেট আউটডোর অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার লিমিটেড, গ্রিন অরচার্ড হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড এবং সানসেট বে লিমিটেড নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান ৫.৫ একর জমিতে ৩২.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৫৭ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে পাঁচ তারকা ও তিন তারকা মানের হোটেলসহ পর্যটন বান্ধব বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের এই কাজ করছে। এছাড়া ৯টি পর্যটনবান্ধব প্রতিষ্ঠানের আরও ২১২.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার কথা রয়েছে। এই বিনিয়োগকারীর তালিকায় নেদারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

বর্তমানে এ পর্যটন অঞ্চলের প্রশাসনিক ভবন ও ভূমি উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা বাঁধ, সেতু–কালভার্ট তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় টেকনাফের সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের ভূমি উন্নয়ন বাবদ ১৮০ কোটি ৭৯ লাখ ৯ হাজার ২৪৮ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) কর্তৃক ‘সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক’ এর ‘ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক ইন সাবরাং পার্ক’ প্যাকেজ নম্বর ডব্লিউ-০৯ এর পূর্ত কাজ যৌথভাবে পেয়েছে টিডিসি এবং জেডএইচইসি ঢাকা। এতে ব্যয় হবে ১৮০ কোটি ৭৯ লাখ ৯ হাজার ২৪৮ টাকা।

এর আগে কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ঘিরে মিঠাপানি সরবরাহের বড় পরিকল্পনা হাতে নেয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। আগামী ৩০ বছরে ৬ ধাপে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। অতিরিক্ত লবণাক্ত পানিতে তৈরি হওয়া সংকট দূর করে বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করতে এমন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ওই প্রকল্পের আওতায় দ্বীপটির ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উখিয়ার হোয়াইক্যং পাহাড়ি অঞ্চল থেকে সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে মিঠা পানি যাবে দ্বীপটিতে। বেজার নিজস্ব উদ্যোগে নেওয়া এই পরিকল্পনা অনুসারে ২০৫০ সাল পর্যন্ত ছয়টি ধাপে বাস্তবায়ন হবে এই প্রকল্প। সব মিলিয়ে সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। প্রথম ধাপের কাজ হবে ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। এতে খরচ হবে ১৪৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় ধাপে খরচ হবে আরও ৮ কোটি টাকা। এর ফলে সেন্টমার্টিনের পাশের এই দ্বীপে অত্যাধুনিক ট্যুরিজম প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেকটাই সহজ হবে বলে মনে করছে বেজা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!