পাটকল বন্ধের ৮ মাসেও বকেয়া টাকা পাচ্ছে না শ্রমিকরা, ধারদেনার জীবন আর চলছে না

নিদারুণ অভাবে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে ৫০ হাজার পাটকল শ্রমিক। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৯টিসহ দেশের ২৫টি পাটকলে শুধু স্থায়ী শ্রমিকই রয়েছে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন। অস্থায়ী রয়েছে আরও ২৫ হাজার শ্রমিক। বকেয়া মজুরি না পেয়ে এদের অনেকেই এখন ঋণের বোঝায় জর্জরিত। বকেয়া মজুরি পাবেন— এই আশায় ধার-দেনা করেই চলছে শ্রমিকদের সংসার। পাটকলগুলো বন্ধের সময় শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ করার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত বদলি শ্রমিকদের দেনা পরিশোধ তো করা হয়ইনি, এমনকি নিয়মিত শ্রমিকরাও পাননি ২০১৯ সালের বেতন।

জানা গেছে, শ্রমিকদের দুই মাসের মজুরি অগ্রিম দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা দেওয়া হয়নি। ২০১৫ সালের মজুরি কমিশনের নির্ধারিত বকেয়া ‘এরিয়া’ পরিশোধ করা হয়নি। কবে ওই বকেয়া টাকা দেওয়া হবে— সেটাও জানানো হচ্ছে না শ্রমিকদের। এছাড়া লকডাউনের সময় শ্রম আইন অনুযায়ী বেসিক বেতন পেলেও অস্থায়ী শ্রমিকদের সেটিও দেওয়া হয়নি। সরকারি প্রণোদনাও পাটকল শ্রমিকরা পাননি।

এদিকে বদলি ও দিনভিত্তিক শ্রমিকদের সকল পাওনা দ্রুত পরিশোধ, ২০১৯ সালের বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও বন্ধ পাটকল চালুর দাবিতে পাটকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্যের উদ্যোগে বারবার সভা সেমিনার ও মানববন্ধন করে নায্য দাবি উপস্থাপন করা হলেও কেউই সেদিকে কান দিচ্ছেন না।

এমন পরিস্থিতিতে ৪ দফা দাবিতে আগামী মার্চ থেকে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শ্রমিকরা। আগামী ৩ মার্চ বদলি শ্রমিকের সকল পাওনা পরিশোধের দাবিতে চট্টগ্রামের বিজেএমসি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, গেল বছর সরকার হঠাৎ সারা দেশে পাটকল বন্ধ ঘোষণা করায় দেশের হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। বন্ধ হওয়ার পর দীর্ঘ ৮ মাস পার হয়ে গেলেও সারা দেশে এখনও বদলি ও দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকদের কোন বকেয়া পরিশোধ করা হয়নি।

জানা গেছে, বস্ত্র ও পাটকল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব খুরশীদ আলম রেজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গত ২ জুলাই ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে চট্টগ্রামের ৯টিসহ দেশের ২৫টি পাটকলে শুধু স্থায়ী শ্রমিকই রয়েছে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন। অস্থায়ী রয়েছে আরও ২৫ হাজার শ্রমিক। গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ওই চিঠিতে।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন (বিজেএমসি’র) ক্রমবর্ধমান লোকসানের কারণে শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক প্রক্রিয়ায় অবসায়নের মাধ্যমে মিলগুলোকে বর্তমান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী আধুনিকায়ন করা হবে। পাটকল শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেওয়ার পর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করে উৎপাদনমুখী করা হবে। তখন এসব শ্রমিক সেখানে চাকরি করার সুযোগ পাবেন।

জানা গেছে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪ সাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত ৮ হাজার ৯৫৪ জন শ্রমিকের প্রাপ্য সকল বকেয়া, বর্তমানে কর্মরত ২৪ হাজার ৮৮৬ জন শ্রমিকের প্রাপ্য বকেয়া মজুরি, শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের জমা, গ্রাচুইটি এবং সেই সাথে গ্রাচুইটির সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ হারে অবসায়ন সুবিধা একসাথে শতভাগ পরিশোধ করার কথা থাকলেও তার কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।

চট্টগ্রামের আমিন জুট মিলের জিএম কামরুল আহসান খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ আমাদের নেই। ধীরে ধীরে সব সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু শ্রমিকরা ধৈর্য্য ধরতে হবে। তাদের সব পাওনা পরিশোধ করতে সরকার।’

পাটকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য চট্টগ্রামের আহ্ববায়ক আমীর আব্বাস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আট মাস পার হয়ে গেলেও এখনও বদলি শ্রমিকেরা তাদের পাওনা বুঝে পায়নি। সরকার বা বিজেএমসির পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণাও দেওয়া হচ্ছে না। অথচ বেকার শ্রমিকেরা আজ দুর্বিসহ পরিস্থিতির মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে।’

শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্যের সদস্য সচিব কামাল উদ্দীন বলেন, ‘শ্রমিকদের কাজ নেই। সন্তানদের শিক্ষা জীবন বন্ধ। বিনা চিকিৎসায় অনেকে মারা যাচ্ছে। অথচ একেকজন শ্রমিকের আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা করে বকেয়া পাওনা আছে পাটকলের কাছে।’

শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্যের নেতা রুহুল আমিন বলেন, ‘বদলি শ্রমিকেরা কোন দুর্নীতি করেনি। তারা মিলে দেওয়া শ্রমের টাকার ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। এই সরকার কোন ওয়াদা রক্ষা করেনি। তাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করতে হচ্ছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm