পাঁচলাইশের ওসি গৃহবধূর জায়গা দখলে ভূমিদস্যু চক্রের সহযোগী, হাইকোর্টকেও বুড়ো আঙ্গুল (ভিডিও)
৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সিএমপি কমিশনারের কাছে
চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমিতে বালু ভরাটে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে খোদ পাঁচলাইশ থানার ওসি ও এক এসআই বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত ১৮ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার বরাবরে ওসি-এসআইসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন।
অভিযুক্তরা হলেন— হামজারবাগ রেল গেট এলাকার মৃত রব্বত আলীর ছেলে শাহেদ আলী রানা ও তালেব আলী, বিবিরহাট বড় বাড়ির মৃত কালা মিয়া কন্ট্রাক্টরের ছেলে আবু হায়দার, নাজিরপাড়ার মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে মো. জসিম উদ্দিন, হামজারবাগ রেল গেট এলাকার আবদুর সালামের ছেলে খোরশেদ আলম জনি, পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদার এবং পাঁচলাইশ থানার এসআই মো. ইলিয়াছ।

হামজা খাঁ লেনের শাহ আমানত আবাসিক এলাকার বাসিন্দা রীনা আক্তার বাদি হয়ে এই অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর রাত ১২টার ১৫ মিনিটের দিকে অভিযুক্ত প্রথম পাঁচ ব্যক্তি উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমিতে বালু ফেলতে দুই ট্রাক বালু আনেন। তাদের বাধা দিলে তারা বাদিকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরে বাদির স্বামী ৯৯৯ এ ফোন দিলে কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে আসেন পাঁচলাইশ থানার এসআই মো. ইলিয়াছ। তাকে ওই সময় উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও জায়গা কেনার দলিল দেখান বাদি রীনা আক্তার। পরে পুলিশের সামনেই অভিযুক্তরা তাদের ওপর চড়াও হন।
এরপর পাঁচলাইশ থানার ওসিকে রাত আনুমানিক ১টার পর হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিলে তিনি এসআই মামুনকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তাকেও কাগজপত্র দেখান রীনা আক্তার। এরপর পুলিশ দু’পক্ষকে সরে যেতে এবং কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। পুলিশ যাওয়ার ১৫ মিনিট পর আবারও বালুভর্তি ট্রাক নিয়ে আসেন।
অভিযোগে রীনা আক্তার আরও উল্লেখ করেন, বালুভর্তি ট্রাক আসলে আমরা আবারও এসআই ইলিয়াছকে ফোন দিই। কিন্তু তিনি বিষয়টি এসআই মামুনকে জানাতে বলেন। এ সময় মামুনকে ফোন দিলে তিনি বিষয়টির দায়িত্ব ইলিয়াছকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান। ততক্ষণে দুই ট্রাক বালু ফেলে চলে যায় অভিযুক্তরা। এরপর আরও দুই ট্রাক বালু আনা হয়। এ সময় আবারও ৯৯৯ এ ফোন দিলে এসআই ইলিয়াছ এসে ঘটনাস্থলে অভিযুক্তদের কিছু না বলে উল্টো আমাদের বাসায় চলে যেতে বলেন এবং তাদের বালু ফেলায় বাধা দিলে গ্রেপ্তারে ওসির ‘নির্দেশনা’ রয়েছে বলে জানান ইলিয়াছ।
এরপর এসআই ইলিয়াছ বালুভর্তি ট্রাক ও জমি ছবি এবং ভিডিও নেন।
অভিযোগে রীনা উল্লেখ করেন, এরপর আরও দুটি বালুভর্তি ট্রাক আসলে আমরা আবারও এসআই ইলিয়াছকে ফোন দিই। কিন্তু তিনি তখন ফোন রিসিভ করেননি। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে টহল গাড়িসহ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ইলিয়াছকে। এ সময় তার কাছে গেলে তিনি নানা বাহানায় সময়ক্ষেপণ করেন। পরে ওই বালুভর্তি ট্রাকও বালু ফেলে চলে যাওয়ার সময় ইলিয়াছ ঘটনাস্থলে যান। তখন তিনি অভিযুক্তদের কাউকে কিছু বলেননি। ইলিয়াছ আমাদেরও বাসায় চলে যেতে বলেন।
এমনকি বালু ফেলায় বাধা দিলে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলের ঘানি টানানোর হুমকিও দেন এসআই ইলিয়াছ।
এ ঘটনার সম্পূর্ণ ভিডিও ধারণ করা আছে বলে অভিযোগে জানান রীনা আক্তার।
থানা সূত্রে জানা গেছে, সিএমপি কমিশনার বরাবরে গৃহবধূর দেওয়া অভিযোগের বিষয়টি পাঁচলাইশ থানার ওসি ২০ ডিসেম্বর জানতে পেরে এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে থানায় বৈঠক বসেন গত ২১ ডিসেম্বর। এ সময় ওসি নিজের দায়মুক্ত থাকার কৌশল হিসেবে জায়গার মালিক রীনা আক্তার ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে মানববন্ধনের নির্দেশনা দেন।
অভিযোগ রয়েছে, গত ২৩ ডিসেম্বর মাত্র ৩০ নারী-পুরুষ-শিশু জড়ো করে একটা মানববন্ধন দেখানোর নেপথ্যেও হাত ছিল পাঁচলাইশের ওসি নাজিমের। অথচ ওসি নিজেই ভূমিদস্যুদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে দাবি করে আসছেন, এই আবাসিকে ২ হাজার পরিবারের বসবাস।