উপনির্বাচন/ পশ্চিম বাকলিয়ার ১৭ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে তিনগুণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়ন করে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম বাকলিয়ার উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই উপনির্বাচন। সকাল আটটায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ৪৯ হাজার ৮২৫ জন। এর মধ্যে ২৩ হাজার ৭৪৮ জন পুরুষ এবং ২৬ হাজার ৭৭ জন রয়েছে মহিলা ভোটার। এ ওয়ার্ডে মোট ১৭টি ভোট কেন্দ্রে ভোট কক্ষ আছে ২২৪টি।
ওয়ার্ডের ১৭টি ভোট কেন্দ্রকেই অতি গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) ঘোষণা করায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখানে একজন রিটার্নিং অফিসারের পাশাপাশি ১৭ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১২৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ২৪৮ জন পোলিং অফিসার সরাসরি নির্বাচনী কাজে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া কেন্দ্রের বাইরে আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন ৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩ জন উচ্চপর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তা।
গত সংসদ নির্বাচনে যে পরিমাণ আনসার, র্যাব ও পুলিশ মোতায়ন ছিল এবার তার চেয়ে তিন গুণ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া দুই প্লাটুন বিজিবি টহল টিম হিসেবে কাজ করবে। এসব বাহিনী মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় কাজ শুরু করেছে বলে নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে।
নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ’এ নির্বাচনটি ইভিএমের মাধ্যমে হবে। সংসদ নির্বাচনের পর দ্বিতীয়বারের মত ইভিএমে হওয়ায় সেটা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। প্রার্থী বেশি হওয়ায় আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ধরনের প্রস্তুতি ছিল তার চেয়ে সব দিক দিয়ে তিনগুণ বেশি প্রস্তুতি রয়েছে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।’
উল্লেখ্য, ১৭ এপ্রিল বাকলিয়া ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একেএম জাফরুল হক মারা যাওয়ায় গত ১২ জুন ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদটি শূন্য ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর নির্বাচন কমিশন ২৫ জুলাই এ ওয়ার্ডে উপ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে। এখানে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মিষ্টি কুমড়া প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক কাউন্সিলর মরহুম একেএম জাফরুল ইসলামের পুত্র একেএম আরিফুল ইসলাম ডিউক।
আর আওয়ামী লীগ থেকে সরাসরি সমর্থন না পেলেও নিজ নিজ অনুসারী নেতাদের নিয়ে মাঠে আছেন পাঁচ প্রার্থী। রেডিও প্রতীক নিয়ে লড়ছেন মাসুদ করিম টিটু। তিনি চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক শহিদুল আলম। তিনি এর আগেও ওই ওয়ার্ড থেকে তিনবার কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর অনুসারী হিসাবে পরিচিত শহিদুল আলম।
মূলত আরিফুল হক চৌধুরী ডিউক, মাসুদ করিম টিটু এবং শহিদুল আলমের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন এলাকার ভোটাররা।
এছাড়া ভোটের মাঠে রয়েছেন লাটিম প্রতীকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ শফি, টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক নিয়ে লড়ছেন নগর যুবলীগের সাবেক সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহেদুল ইসলাম শাহেদ, ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা শেখ নাঈম উদ্দীন লড়ছেন ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে।
উদ্যোগ নিয়েও একক প্রার্থীকে ভোট যুদ্ধে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। গত ১১ জুলাই মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন হওয়ায় আগের দিন ১০ জুলাই আওয়ামী লীগ থেকে একক প্রার্থী নির্ধারণে জরুরি এক সভায় বসেছিলেন নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
তবে নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের মতভেদে একক প্রার্থী নির্ধারণের সম্ভব হয়নি। মূলত আ জ ম নাছিরের সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মাসুদ করিম টিটু এবং মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সমর্থন নিয়ে ভোট যুদ্ধে থাকা সাবেক কাউন্সিলর শহিদুল আলমকে কেন্দ্র করে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে সমঝোতা করতে না পারায় আওয়ামী ঘরানার বাকি প্রার্থীদেরও নির্বাচন থেকে সরিয়ে আনতে পারেনি দলটি। ফলে অন্য তিন প্রার্থী শফি, শাহেদ ও নাঈমকেও সরানো যায়নি।
এফএম/সিপি