ভিডিও/ পরকীয়ার জেরে পুলিশ স্বামীর নির্যাতনের শিকার স্ত্রী

চট্টগ্রামে যৌতুক ও পরকীয়ার ঘটনায় উপর্যুপরি নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ স্বামী ও তার পরিবার। সর্বশেষ চট্টগ্রামের অক্সিজেন হিলভিউ আবাসিক এলাকার ভাড়া বাসায় বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ১১টায় স্বামী এএসআই জুয়েল দে ও তার পরিবার মিলে পিটিয়ে জখম করেন গৃহবধূ মুক্তা দেকে। টানা তিনদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বাবার বাসায় গেলেও মুক্তাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে তার পুলিশ স্বামী।

জানা যায়, বোয়ালখালীর থানার কানুনগোপাড়া সরোয়াতলীর জুয়েল দের (৩১) সাথে সাঙ্গতলীর মুক্তা দের (৩০) প্রেমের পরিণয়। এরই মাঝে স্বামী জুয়েল দে মহেশখালী ও কক্সবাজারের মণি ও শিল্পী নামের দুই নারীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হন। মুক্তা বিষয়টি জানতে পেরে ওই নারীদের সাথে যোগাযোগ করে পরকীয়ায় বাধা দিলে কলহের সূত্রপাত হয়। তারই জেরে যৌতুকের জন্য ৩ জুলাই সকাল ১১টায় মহেশখালী থানার এএসআই জুয়েল দে ও তার বাবা-মা মুক্তাকে নৃশংসভাবে প্রহার করেন। এতে মুক্তার মাথা ও বুকে গুরুতর জখম হয়।

জানা গেছে, ২০১০ সালে জুয়েল দে উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন শেলী নামের এক নারীর সাথে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। অন্যদিকে গৃহবধূ মুক্তাকে স্বামী জুয়েল ও তার বোন-মা-বাবা মিলে প্রায়ই নির্যাতন করতেন। মুক্তা দুই ছেলের জন্য সব অত্যাচার সহ্য করে স্বামীর ঘর করে আসছিলেন। মাঝে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়ি চলে আসেন মুক্তা। পরে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আর নির্যাতন করবে না বলে মুক্তাকে স্বামী জুয়েল ফিরিয়ে নিয়ে যান। শর্ত ছিলো মুক্তাকে জুয়েলের চাকরি স্থল কক্সবাজারে রাখতে হবে। জুয়েল মুক্তাকে নিয়ে আসার পর তার ব্যবহৃত মোবাইল ভেঙ্গে মা-বাবার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এক সপ্তাহ পর অনুষ্ঠিতব্য মাস্টার্স পরীক্ষার বইপত্র ছিড়ে ফেলেন। ফলে মুক্তা আর পরীক্ষাও দিতে পারেননি।

এদিকে জুয়েলের চাকরিস্থল কক্সবাজারে মুক্তাকে নিয়ে যাওয়ার ফলে জুয়েল দের পরকীয়ায় সম্পর্ক বজায় রাখতে সমস্যা হচ্ছিল। এতে জুয়েল মুক্তাকে বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও ননদ মিলে বাড়িতে, অন্যদিকে কক্সবাজার গেলে জুয়েল দে আবার নির্যাতন শুরু করেন। এরই মাঝে জুয়েল দের মহেশখালীতে পোস্টিং হলে সেখানে মনি দে নামের আরেক নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ান। মুক্তা খবর পেয়ে বাধা দেন ওই নারী ও তার স্বামীকে। এরপর থেকে আবারো নিয়মিত নির্যাতন শুরু হয়।

মুক্তা আরও জানান, সম্প্রতি মুক্তা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেওয়ার কারণে জুয়েল ও তার মা-বাবা ক্ষেপে যান। তারই জের ধরে বুধবার (৩ জুলাই) সকালে যৌতুক ও অন্যান্য অজুহাতে মুক্তার সাথে তার শ্বাশুড়ির সাথে তর্ক হয়। এর একপর্যায়ে জুয়েল মুক্তাকে মাথায় ঘুষি মারেন। এতে মুক্তার মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। এরপরও থামেননি জুয়েল। পরক্ষণেই মুক্তার বুকে লাথি মারেন তিনি। গুরুতর আহত হয়ে মুক্তা এরপর একাধিকবার বমি করেন। মুক্তা বারবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে আকুতি করেন স্বামীকে। কিন্তু কেউ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পরে মুক্তা তার বাবা-মার সাথে যোগাযোগ করেন। ওই সময়ও জুয়েলের পরিবার মুক্তাকে হাসপাতালে আনতে বাধা দেন।

পরে মুক্তার মা-বাবা তাকে বিকাল চারটায় প্রথমে চট্টগ্রামের অক্সিজেন প্লাজমা হাসপাতাল এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাকে ২৮ নম্বর নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। শনিবার (৬ জুলাই) বিকেলে মুক্তাকে চমেক হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। মামলার আশঙ্কায় এরপর থেকেই মুক্তাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে জুয়েল দে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুক্তার স্বামী মহেশখালী থানার এএসআই জুয়েল দে বলেন, ‘সে আমার পরিবার থেকে আলাদা থাকতে চায়। আমার সামনে আমার মাকে তর্কের জেরে গালিগালাজ করলে আমি আমার স্ত্রীকে শাসন করেছি। আমার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমার সম্মান নষ্ট করার জন্য সে এসব করছে। বিষয়টি আমরা পারিবারিকভাবে সমাধান করব।’

মুক্তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড.এএসএম নোমান খালেদ চৌধুরী কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, বোয়ালখালী থানার সরোয়াতলীর জুয়েল দে চট্টগ্রাম কলেজে পড়াকালীন সময়ে মুক্তা দের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। ২০০৮ সালে জুয়েলের পুলিশে চাকরি হয়। ২০১১ সালে পারিবারিকভাবে সাথে তাদের বিয়ে হয়।

সিএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!