‘পথে পথে’ হয়ে যাবেন, অডিও বার্তায় নগর ছাত্রলীগ সভাপতি ইমুর হুঁশিয়ারি

ওয়ার্ড ও থানা কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করলে

চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে পদত্যাগ করার ইঙ্গিতের পর এবার নগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার বার্তা দিয়েছেন ইমরান আহমেদ ইমু। অন্যথায় নগর ছাত্রলীগ কমিটি স্থগিত হওয়ার পর ওয়ার্ড ও থানার নেতারা ‘পথে পথে’ হয়ে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করারও নির্দেশ দেন তিনি।

বুধবার (২০ জুলাই) নগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে এক অডিও বার্তা দিয়ে এ নির্দেশ দেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমু।

এর আগে সোমবার (১৮ জুলাই) নগর ছাত্রলীগের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে জানিয়ে কমিটি বিলুপ্তির সংবাদ দেন নগর ছাত্রলীগের এ শীর্ষনেতা।

ইমুর এই ‘পথে পথে’ হয়ে যাওয়ার খবর শুনে ইতোমধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দৌড় লাগিয়েছেন একাধিক ওয়ার্ড ও থানা কমিটির নেতারা। ইমুর বার্তাটি পাওয়ার পর দস্তগীরের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপও করে নিয়েছেন বলে জানান অনেকে। যদিও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে নারাজ একাধিক নেতা।

তবে ইমুর বার্তার সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। তিনি বলেন, ‘কমিটি গঠন ও তা পূর্ণাঙ্গ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা অনেক আগে থেকেই কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছি এবং ইউনিটের নেতাদেরও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দিয়েছি।’

অডিও বার্তায় ইমু বলেছেন, ‘প্রিয় নেতৃবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম। আপনারা একেকজন এক একটি ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। মহানগর ছাত্রলীগ চলছে। আজকে ফেনী জেলা ছাত্রলীগ স্থগিত করা হয়েছে, মহানগর ছাত্রলীগ কখন স্থগিত করে তার ঠিক-ঠিকানা নাই। সেজন্য আমি মনে করি আপনাদের যেগুলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় নাই তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি করে ফেলা উচিত। সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের সঙ্গে কথা বলে আপনারা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে ফেললে খুব ভালো করবেন। না হয় যে কোনো মূহুর্তে যদি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ স্থগিত হয়ে যায়, তখন আপনারাও স্থগিত হয়ে পথে পথে হয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।’

এর আগে সোমবার (১৮ জুলাই) ইমু নিজের ফেসবুক টাইমলাইনের লেখেন, ‘হ্যালো কি খবর? কামিং সুন।’ এই স্ট্যাটাসও পদত্যাগকে ইঙ্গিত করে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন ছাত্রলীগের একাধিক শীর্ষ নেতা।

তবে ইমুর এমন অডিও বার্তার বিষয়ে তাকে দু’দিন ধরে ফোন করা হলেও যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি।

ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র বলছে, নগর যুবলীগে পদ পেতে ইমু ছাত্রলীগের কমিটিতে থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। গত ৩০ মে মহানগর যুবলীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হন ইমু। তবে ইমু এখন চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন।

এমন সংকেত যে নিজেদের ছুটির ঘন্টার আভাস, তা জানান দিতেই ইমু এমন উদ্ভট কাজ করছেন বলে মনে করেন নগর ছাত্রলীগের একাধিক নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘কমিটি গঠন হলো প্রায় এক দশক হতে চলেছে। এতদিন আমরা তাদের কমিটি গঠন ও পূর্ণাঙ্গ করার তাগাদা দিলেও তারা তা গায়ে মাখেনি। এখন ছুটির ঘন্টা বাজতে চললো বিধায় তড়িঘড়ি শুরু করে দিয়েছে।’

তবে জুলাই মাসেই নগর ছাত্রলীগের জন্য একটি সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা। নগর ছাত্রলীগ নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ খুব সজাগ। খুব শীঘ্রই ‘চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ’র জন্য একটি সারপ্রাইজ আসছে বলেও জানান তিনি।

তবে কেন্দ্রীয় নেতার কথার প্রসঙ্গে নিজেদের ছুটির ঘন্টার ব্যাপারে দস্তগীর বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত সম্মেলন নিয়ে। আমরা প্রস্তুত অনেক আগে থেকেই। আর প্রস্তুত বিধায়তো আমরা ওয়ার্ড, থানা ও কলেজ কমিটিগুলো রার্নিং করাচ্ছি, কমিটি ঘোষণা করছি। ওদেরকে রেডি করেছি সম্মেলন করব বিধায়। ইতোমধ্যে নগরের ১৫টি থানার মধ্যে ১৩টির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ঘোষিত হয়েছে ১৩টি। ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে শুধু ১, ২, ১০ এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে নিজেদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে।’

দু’চারদিনের মধ্যে বাকি কলেজ ও ইউনিটগুলোতে কমিটি ঘোষণা হতে পারে বলে জানান দস্তগীর।

তবে নগর ছাত্রলীগের সময় যে শেষের দিকে তা সরাসরি স্বীকার না করলেও মৌন সম্মতি জানান জাকারিয়া দস্তগীর। নগর ছাত্রলীগ যদি বিলুপ্তও হয় তবে তা চুপিসারে না হয়ে ঘটা করেই হবে বলে জানান তিনি।

২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি ও নূরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের ২৪ জনের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরে ২৯১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। সিলেকশনের মাধ্যমে গঠিত ওই কমিটির মেয়াদ ছিল এক বছর। এরমধ্যে সাধারণ সম্পাদকের পদ খালি হওয়ায় সেখানে স্থান করে নেন জাকারিয়া দস্তগীর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের মধ্যদিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে নগর ছাত্রলীগ।

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm