চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানা এলাকায় রয়েছে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের পরিচালনাধীন প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের (জিইএম প্লান্ট) স্টাফ কোয়ার্টার। সেখানে প্রায় তিন একরের বিশাল একটি জলাশয় ছাড়াও রয়েছে দুটি পুকুরসহ অন্তত ১৫টি জলাশয়। এসব জলাশয় মাছ চাষের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে বিনা দরপত্রে। চলতি বছরের শুরুতে কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে এ ইজারা দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, জিইএম প্লান্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে ইজারা নেওয়া হলেও সেখানে পুকুর-জলাশয় থেকে বাণিজ্যে জড়িত রয়েছেন জিইএম প্লান্টের এমডিসহ সমিতির চার নেতা। প্রতিটি জলাশয়ে প্রতি বছর মাছ চাষ করে আয় হয় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে ১৫টি পুকুর-জলাশয় থেকে বছরে আয় করা হচ্ছে প্রায় চার কোটি টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নিয়ম থাকলেও জিইএম প্লান্টের এমডি ব্যক্তিগত লাভের আশায় মানছেন না সরকারি এসব নিয়ম— এমন অভিযোগ মিলেছে। জানা গেছে, মাছ চাষে জড়িতরা হলেন জিইএম প্লান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, জিইএম প্লান্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি গোলাম মাওলা, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, সহসভাপতি মো. বেলাল এবং জিইএম প্লান্টের সিবিএ নেতা আব্দুল কাদের।
সূত্রে জানা যায়, জিইএম প্লান্টের স্টাফ কোয়ার্টারের দুটি পুকুরসহ ১৫টি জলাশয় প্রতি তিন বছর পর পর বিনা দরপত্রে মাছ চাষের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। কোম্পানির কো-অপারেটিভ সোসাইটির তিন নেতাহ সিবিএর এক নেতা এ বাণিজ্যে জড়িত রয়েছেন। অভিযোগে জানা গেছে, ব্যক্তিগত সুবিধা পেতে মৎস্য বাণিজ্য সমিতির নেতাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে আসছেন কোম্পানির এমডি। প্রতি বছর এখানকার লাভের বেশির ভাগ অংশই যাচ্ছে এমডি, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সহসভাপতির ভাগে। লাভের সামান্য অংশ পাচ্ছেন কো-অপারেটিভ সদস্যরা।
জানতে চাইলে জিইএম প্লান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘স্টাফ কোয়ার্টারের যেসব পুকুর ও জলাশয় রয়েছে, তিন বছরের জন্য সেগুলোতে মাছ চাষ করতে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এজন্য সামান্য পরিমাণ টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমিতির নামেই মূলত এটি দেওয়া হয়েছে।’
দরপত্র ছাড়াই এভাবে দেওয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এখন ব্যস্ত।’ পরে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে মুঠোফোন সংযোগ কেটে দেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিইএম কোম্পানির দুই কর্মচারী জানান, প্রতিবার যারাই জিইএম প্লান্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটির শীর্ষ তিন নেতাই সেখানকার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকেন। একই সঙ্গে বর্তমানে জিইএম প্লান্টের সিবিএর নেতা আব্দুল কাদের এসব বাণিজ্যে জড়িত রয়েছেন। প্রতি বছর পুকুর-জলাশয় থেকে মাছ চাষ করে কয়েক কোটি টাকা আয় হলেও লাভের আয় থেকে সামান্য অংশ দেওয়া হচ্ছে সমিতির সদস্যদের। দীর্ঘদিন ধরে এসব অপকর্মকে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছেন এমডি নিজেই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জিইএম প্লান্টের সিবিএর নেতা আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমি কোনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। এসব বাণিজ্য করছেন কোম্পানির কো-অপারেটিভ সদস্যরা। সমিতির নামে নেওয়া এসব জলাশয় সমিতির নেতারাই পরিচালনা করছেন।’
জিইএম প্লান্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, ‘স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় কোনো জলাশয় নেই। এখানে সব জমি। ডিসেম্বর মাস এলেই দেখবেন এখানে এতোগুলো জলাশয় আর দেখা যাবে না। মসজিদের একটি পুকুরসহ কয়েকটি পুকুর রয়েছে। জিইএম প্লান্টের কো-অপারেটিভ সদস্যদের সুবিধার্থে এমডি মহোদয় এখানে মাছ চাষ করার অনুমতি দিয়েছেন।’
কেএস