পতেঙ্গায় ১৬ কোটি টাকার প্রকল্পে নয়ছয়, ড্রেনে নিম্নমানের সামগ্রী

চট্টগ্রামে পতেঙ্গা এলাকায় জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। প্রকল্পের প্রকৌশলীদের অনুপস্থিতিতে চলছে রাতে আঁধারে ড্রেন ঢালাইয়ের অধিকাংশ কাজ। ড্রেনের নিচের অংশে রডের ডাবল আস্তর দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে কোথাও কোথাও সিঙ্গেল রডের আস্তর দিয়েই নির্মাণ করা হচ্ছে ড্রেনের ওয়াল।

এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে বাকি আছে প্রায় সাড়ে তিন মাস। এর মধ্যে শেষ করতে হবে প্রকল্পের কাজ। অথচ সেখানে গত একমাসে প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ। এতে নির্দিষ্ট সময়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

অভিযোগ রয়েছে, এ প্রকল্পে ভাল ব্র‍্যান্ডের রড ব্যবহার না করে ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের রড। নকশা অনুযায়ী ঢালাইয়ে তিন বস্তা পাথর, দেড় বস্তা বালু ও এক বস্তা সিমেন্টের সংমিশ্রণের কথা থাকলেও কোথাও কোথাও তার নূন্যতম নিয়ম মানা হচ্ছে না। স্থানীয় একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে নকশা অনুযায়ী কাজটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলেই অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার বিজয় নগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গত একমাস ধরে চলমান এ প্রকল্পের অধীনে ‘এ’ ব্লকের পূর্ব-পশ্চিম দিকে একটি রোডের দুইপাশের ড্রেনের মাত্র অর্ধেক অংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী কোনো ড্রেনের দুইপাশে ডাবল রডের প্রাচীর দেওয়া হচ্ছে। আবার কোথায় উভয় পাশে রডের সিঙ্গেল প্রাচীর দিয়ে নির্মাণ হচ্ছে ড্রেনের ওয়াল। ড্রেনের নিচে ও পাশে যেসব প্রাচীরের রড ব্যবহার করা হচ্ছে সেখানেও নকশার নিয়ম মানা হচ্ছে না ঠিক মত।

চসিক সূত্রে জানা যায়, জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার অর্থায়নে করোনার আগে দরপত্রের মাধ্যমে পাশ হয় ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৫ টাকার প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে পতেঙ্গার বিজয় নগর এলাকায়। সেখানে ২২টি রোড ও ২৩টি ড্রেনের উন্নয়ন ও রাস্তা সংস্কারের কাজ করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর। দরপত্রের মাধ্যমে পাওয়া প্রথম ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী করোনায় মারা যাওয়ায় পর কাজটি চলমান রেখেছে তাদের আরেক অংশীদার প্রতিষ্ঠান এসআর এন্টাপ্রাইজ।
পতেঙ্গায় ১৬ কোটি টাকার প্রকল্পে নয়ছয়, ড্রেনে নিম্নমানের সামগ্রী 1
জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের নকশা অনুযায়ী আগের ড্রেন থেকে সেখানে স্থান ভেদে ৬ থেকে ৮ ফুট উচ্চতা বাড়ানো এবং রাস্তা সংস্কারের সময় বর্তমান মাটির উপর থেকে ৩ ফুট ব্রিক দিয়ে উচ্চতা বাড়ানোর পর ৩/৪ সাইজের পাথর দিয়ে রাস্তার বাকি অংশ ভরাট করে উচ্চতা বাড়ানোর কথা। পাশাপাশি বিটুমিন দেওয়ার মাধ্যমে রাস্তার ফিনিশিং দেয়ারও কথা রয়েছে প্রকল্পের নকশায়। রড, বালু, সিমেন্ট ও পাথর ইত্যাদি ল্যাবটেস্টের মাধ্যমে ব্যবহার করাসহ সেখানে রড ব্যবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে ১০ থেকে ১২ মিলি সাইজের।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় এক মাস ধরে শুরু হয়েছে এলাকার উন্নয়নের কাজ। ‘এ’ ব্লকের একটি ড্রেনের কাজ শেষ করতে পারেনি তারা এখনও। ধীরগতিতে কাজ চলার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। সামান্য বৃষ্টি হলে ঘর থেকে বের হতে চরম বেগ পোহাতে হচ্ছে অনেকের। কাজের মেয়াদ আছে আর মাত্র প্রায় সাড়ে তিন মাস। এ সময়ের মধ্যে আদৌ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবে না কিনা এ নিয়ে রয়েছে সংশয়।

এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী মঈন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কাজের অনিয়ম কোথাও হচ্ছে না। জাইকার কাজ দেখেন সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ার। এছাড়া ওই সংস্থার নিয়োজিত ঠিকাদার কোম্পানির প্রকৌশলীও আছেন। বাংলা রড ব্যবহার নয়, সেখানে কেএসআরএম রড ব্যবহার করা হচ্ছে।’ তবে প্রকল্পের কাজ ধীরগতির বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সিভিল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক অসিম বড়ুয়া বলেন, ‘গত একমাস ধরে চলমান রয়েছে প্রকল্পের কাজ। ওই প্রকল্পের প্রথম ঠিকাদার করোনায় মারা যাওয়ায় পরে তাদের পার্টনারকে কাজ দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে এখনও পেমেন্ট দেওয়া হয়নি। ৪০ শতাংশ কাজ দেখাতে পারলে তাদের বিল পরিশোধ করা হবে।’

নিম্নমানের জিনিসপত্রের ব্যবহারের প্রসঙ্গ তিনি বলেন, ‘রড যেটা ব্যবহার করুক না কেন রডগুলো ল্যাব টেস্ট করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা হবে।’

জানতে চাইলে জাইকার ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর মোস্তাফিজুল হক বলেন, ‘ বিষয়টি এখন শুনলাম মাত্র। আমি সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে কথা বলব। অনিয়মের বিষয়টিও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!