পতেঙ্গায় ব্যবসা করতে চায় সৌদি আরব-দুবাই-সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান

জুনে চালু হচ্ছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল

আগামী জুনে চালু হতে যাওয়া চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) অপারেশনের কাজ পরিচালনা করতে চায় সৌদি আরব, আরব আমিরাতের দুবাই, ভারত ও সিঙ্গাপুরের চারটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আদানি পোর্ট অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরের পিএসএ। তবে শেষ পর্যন্ত কারা পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করবে সেটি নির্ধারণ করা হবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেই।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২২ সালের জুন থেকেই শুরু হবে অপারেশনাল কর্মকান্ড। টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে আন্তর্জাতিক বেসরকারি অপারেটর। এতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা হবে বছরে ৪ লাখ ৫০ হাজার একক।

এ প্রকল্পে ৫৮৩ মিটার কনটেইনার টার্মিনালে তিনটি জেটি, ২০৪ মিটারে ডলফিন জেটি, ৮০ হাজার বর্গমিটার আরসিসি পেভমেন্ট/ ইয়ার্ড, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার, ১.২০ কিলোমিটার চার লেইনের রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। অফিস বিল্ডিংসহ অন্যান্য নির্মাণকাজও শেষের দিকে। এছাড়া টাগবোট, পাইলট বোট, স্পিট বোট, পেট্রোল পিক-আপ কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে।

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন প্রকল্পটির জন্য আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি অপারেটর নিয়োগের উদ্দেশ্যে ‘ইকুইপ, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব পিসিটি অন পিপিপি মডেল’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে যার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বর্তমানে ৩০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। ২০৩১ সালে ৫৮ লাখ ১৯ হাজার একক ও ২০৪৩ সালে ৭৫ লাখ ৯৭ হাজার একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং সামাল দিতে হবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরকার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণ কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী জুন মাসেই অপারেশনে যাওয়া যাবে। তবে চার দেশের চারটি সংস্থা অপারেটর হিসেবে কাজ করতে চায় পিসিটির। যা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সিলেক্ট করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘বন্দরের মূল জেটির চেয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে কম সময়ে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। পিসিটির তিনটি জেটিতে একই সাথে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। এছাড়া এ জেটির সাথে সড়কের কানেক্টিভিটি খুবই ভাল।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপারেটরদের পেশাদারিত্বের জায়গাটিও অনেক বেশি শক্তিশালী। পিসিটির নির্মাণকাজ সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনায় গতি আনতে টার্মিনালটি বড় ভূমিকা রাখবে।’

২০১৭ সালের ১৩ জুনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়নাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল শীর্ষক প্রকল্পটি ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়। তখন এর বাস্তবায়নে সময়সীমা নির্ধারিত ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করে আরডিপিপি পাঠানো হয়। প্রাক-সমীক্ষা অনুযায়ী টার্মিনালটির বার্ষিক পরিচালনা ব্যয় ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

টার্মিনালটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেলে একসঙ্গে তিনটি জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সুবিধা থাকবে। এতে বছরে সাড়ে চার লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। এছাড়া তেলবাহী জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধাও থাকবে। সাড়ে নয় মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশ) এবং ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য জাহাজ ভেড়ানো যাবে এই টার্মিনালে।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। শতভাগ কাজ শেষে তারা চট্টগ্রাম বন্দরকে টার্মিনালটি বুঝিয়ে দেবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!