উন্নয়ন দূরের কথা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নিজেদের ইচ্ছেমতো খাল কাটার কারণে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার পুরাতন কন্ট্রোল মোড় এলাকায় গার্ডওয়াল ভেঙে রাস্তার অর্ধেক অংশই তলিয়ে গেছে খালের ভেতরে। যাতায়াতের একমাত্র পথ হওয়ায় ছোট যানবাহন চলাচল করতেও সেখানে অসুবিধা হচ্ছে। চলতি বর্ষার ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানকার আশপাশের দোকাটপাট ও বাড়িঘর। স্থানীয়রা বলছেন, এখানে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার বসবাস করে। সড়কের অবস্থা এখন এতটাই বেহাল, যদি এলাকায় অগ্নিকাণ্ড বা কোন দুর্ঘটনা হয় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার মত অবস্থাও নেই। কোনমতে বাঁশের বেড়া দিয়ে ধস ঠেকানোর চেষ্টা করলেও দ্রুত রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে এ মৌসুমেই অগ্নিকাণ্ডে চরম ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে সেখানে।
গত ১৫ জুন সকালে বিনা নোটিশে খাল খনন করতে গিয়ে পতেঙ্গা থানার পশ্চিম মুসলিমবাদ এলাকায় রীতিমতো তাণ্ডব চালায় সিডিএর পক্ষে খালখননের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বদেশ উন্নয়ন প্রকৌশলী নামের এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ওই সময় প্রায় ১২টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছও কেটে ফেলে প্রকল্পের লোকজন। স্থানীয় এলাকাবাসী এর প্রতিবাদ করলে কাজ ফেলে চলে যায় দুই স্কেভেটর চালক।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) মাইজপাড়া পুরাতন কন্ট্রোল মোড় সায়রা সিদ্দিক স্কুল আবদুল্লাহ সড়কে গেলে দেখা যায়, দেড় কিলোমিটারের রাস্তাটি ঘিরে বসবাস করছে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার। প্রতিদিন যাতায়াতের পথ হিসেবে একমাত্র এ রাস্তাটি ব্যবহার করে স্থানীয়রা। সিডিএর খাল খননের পর সড়কে সংযুক্ত ২০ ইঞ্চি গার্ডওয়ালটির রাস্তা সরে গিয়ে খালের ভেতরে পড়ে যায়। রাস্তার ধস ঠেকাতে আপাতত বাঁশ দিয়ে বেড়ি করে দেয় এলাকাবাসী।
আব্দুল হাকিম নামের স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে সিডিএ নিজেদের ইচ্ছেমতো খাল খননের কারণে এখানকার ১৫ ফিটের রাস্তাটির প্রায় অর্ধেক অংশ এখন খালের ভেতরে চলে গেছে। স্কেভেটর দিয়ে উল্টোপথে এসে এক জায়গায় দুইবার খাল খনন করে রাস্তাটাই ভেঙ্গে ফেলেছে। করোনা শুরুর একমাস আগে এ রাস্তাটি সংস্কারের কাজ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ১৫ হাজার পরিবার চলাচল করে। রাস্তাটি ভেঙ্গে পড়ায় রিকশা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না। হঠাৎ করে এই এলাকায় আগুন লাগার মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির ঢোকার অবস্থা নেই। দ্রুত এই রাস্তাটি সংস্কার করা না হলে চরম ঝুঁকিতে পড়বেন স্থানীয়রা।’
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সম্প্রতি সংস্কার করা মাইজপাড়ার পুরাতন কন্ট্রোল মোড় রাস্তাটি ভেঙে ফেলার খবর পেয়ে খালখনন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে তাৎক্ষণিক অবগত করা হয়েছে। আশা করি শিগগিরই তারা এটি সংস্কারের উদ্যোগ নেবে।’
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) খাল খনন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল শাহ আলী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন,‘পতেঙ্গা থানার পুরাতন কন্ট্রোল মোড় এলাকায় খালখননের বিষয়টি এইমাত্র শুনেছি। যেহেতু কাজ করতে গিয়ে একটু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তাই সেখানকার সমস্যা দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন করতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রকল্পের ১৬টি খাল বাস্তবায়নের ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। একনেকে পাস করে ২০১৭ সালে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিডিএকে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সিডিএকে সহযোগিতা করছে সেনাবাহিনী।
সিপি