পটিয়ায় বাসচালক হত্যা/ পথে পথে ঘাতকের ছাপ, পুলিশ জানে না খুনি কারা

চট্টগ্রামের শিকলবাহায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক জালালকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ডিবি সম্পৃক্ত নয়—সেটি নিশ্চিত বলছে তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটি)। তবে কে বা কারা এ বাসচালককে ‘ডিবি’ পরিচয়ে হত্যা করেছে সে বিষয়টি এখনও রহস্য হয়ে আছে। গত আড়াই মাস ধরে ‘তদন্ত’ করেও কী কারণে কারা জালালকে হত্যা করেছে—সেটি স্পষ্ট করে বলতে পারছে না সিটি। অন্যদিকে ভাই হত্যার রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় আদৌ বিচার পাবেন কিনা—এ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন নিহত জালালের ভাই জুয়েল। হত্যার ঘটনার পর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে দুই লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে বাসচালক জালালের পরিবারকে—এটুকুই তাদের প্রাপ্তি।

গত ২৩ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রামের শিকলবাহায় কক্সবাজার থেকে আসা শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক জালালকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান বিষয়টি নিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেন।

ডিবি জড়িত নয় নিশ্চিত
তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘জালাল হত্যার তদন্ত চলছে। ভিডিও ফুটেজসহ নানা আলামত সংগ্রহ করেছি। তবে এখনও বলার মত কিছু পাওয়া যায়নি।’ তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন, জালাল হত্যায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জড়িত নয়।

ঘটনার পরদিনই ডিবি ও থানা পুলিশ তদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছিল এ হত্যাকাণ্ডে ডিবি জড়িত নয়। ওই সময় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, জালাল হত্যায় প্রশিক্ষিত বিশেষ একটি বাহিনীর সম্পৃক্ততা ছিল। বাসচালক জালালকে চট্টগ্রামের পটিয়া থানা এলাকা থেকে ধরে এনে সিএমপির কর্ণফুলী থানা এলাকায় মারধরের ঘটনা ঘটে। এ কারণে জেলা পুলিশ ও কর্ণফুলী থানা পুলিশের পাশাপাশি নগর গোয়েন্দা পুলিশও বিষয়টির তদন্তে নেমেছিল ওই সময়ে।

তিনটি ইউনিটের তদন্তেই বিশেষ একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর হাতে তল্লাশির নামে মারধরের পর বাসচালক জালাল মারা গেছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পর সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমানকে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছিল গোয়েন্দা পুলিশ ও কর্ণফুলী থানা পুলিশ। ঘটনার বিস্তারিত জেনে সিএমপি কমিশনার আইজিপিকে বিষয়টি অবহিত করেন। এরপরই নিহত বাসচালক জালালের ছোট ভাই জুয়েল বাদি হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে কর্ণফুলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

‘আমাদের তো এতো ক্ষমতা নেই কার সাথে কথা বলবো?’
গত আড়াই মাসেও ভাই হত্যার রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন ছোট ভাই জুয়েল। তিনি দিনাজপুর থেকে মোবাইলে বলেন, ‘এতোদিনেও আমার ভাই হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়নি। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা বলছেন তদন্ত চলছে। এখন আমাদের তো এতো ক্ষমতা নেই কার সাথে কথা বলবো? কার সাথে যোগাযোগ করবো আর?’

জালাল হত্যার পর কোনো ধরনের সহযোগিতা পেয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, ‘ঘটনার পর সিএমপি কমিশনার এক লাখ টাকা আর চট্টগ্রামের ডিসি এক লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা করেছিলেন। এছাড়া আমাদের দিনাজপুরের ডিসি সাহেব মাসিক সাড়ে তিন হাজার টাকা, পাঁচ শতক জমি ও এককালীন দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও তা পাইনি।’

ঘটনা ঘটেছিল যখন যেভাবে
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল কক্সবাজার থেকে গাজীপুরমুখী শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শান্তিরহাট এলাকা অতিক্রম করার পর একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে সাদা পোশাকে থাকা একদল লোক ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাসটি থামায়। তারপর সেখান থেকে কর্ণফুলীর ভেল্লাপাড়া ব্রিজের এ পাশে এনে গাড়িতে উঠে ইয়াবা আছে বলে তল্লাশি চালায় তারা।

হ্যান্ডক্যাফ, ওয়্যারলেস সেটসহ গাড়িতে ওঠা ডিবি পরিচয়ধারী চারজন লোক তল্লাশির একপর্যায়ে গাড়িচালক জালাল উদ্দিনকে (৪৪) বাস থেকে নামিয়ে অদূরে নিয়ে গিয়ে প্রচণ্ড মারধর করে। একপর্যায়ে লাথি মারতে মারতে তাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক দফা নির্যাতনের পর তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় বাসে তুলে দিয়ে সাদা মাইক্রোবাসটি চলে যায়। এরপর অন্য একটি বাসের চালক রাত আড়াইটার দিকে মুমূর্ষু জালালকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সিসিটিভিতে দুটি নিশান পেট্রোল জিপ
তদন্তে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ওই রাতে ঘটনার সময় মোট একটি ‘নোহা’ ও দুটি ‘হাইএস’ গাড়ি অভিযানে অংশ নেয়। তাদের ব্যাকআপ টিম হিসেবে দুটি নিশান জিপও অদূরে দাঁড়িয়ে ছিল। এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে হাইওয়ে পুলিশের বক্তব্যেও। পরে সিসিটিভির ফুটেজে এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া গাড়িগুলোর মধ্যে দুটি নিশান পেট্রোল গাড়ি শনাক্ত করা গেছে। এ ধরনের নিশান পেট্রোল জিপ বিশেষায়িত কোনো বাহিনীই ব্যবহার করে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!