পটিয়ার ভোটে এক নৌকার জন্য চার মাঝির দৌড়ঝাঁপ, ধানের শীষ চান তিনজন

চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার নির্বাচনে একটি নৌকার জন্যে চারজন মাঝির দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি, কে পাচ্ছেন নৌকা প্রতীক, কার হাতে উঠবে নৌকা, কেন্দ্র কার হাতে তুলে দেবে নৌকা প্রতীক— এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। তবে প্রার্থীদের মধ্যে যার যার ক্ষমতা কিংবা যোগাযোগ আছে সেটি ধরে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

মেয়র পদে নৌকা প্রতীক আনার জন্য চার প্রার্থীর ঘুম হারাম হয়ে গেছে। নৌকা প্রতীক যে পাবে তার জয় নিশ্চিত বলেই নৌকা প্রতীকের জন্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে এখন চলছে প্রতীক আনার যুদ্ধ। তাই সবাই ঢাকায় অবস্থান করছেন বেশ কয়েক দিন ধরে। নৌকা আনার পরেই শুরু হবে ভোটযুদ্ধ। পটিয়া পৌরসভার নির্বাচনে ভোটযুদ্ধ হবে আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি।

এখানে ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থী ৪ জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলের স্বার্থে একজনই চূড়ান্তভাবে ধানের শীষ পাবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় দলীয় প্রার্থী নির্বাচনের জন্যে বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় সমর্থক ও প্রস্তাবকের ভিত্তিতে ৪ জন প্রার্থী তাদের নিজেদের নাম আনেন। এরপর নিজেরা নিজেদের নাম প্রস্তাব করেন।

নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশীদ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুব লীগের সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আইয়ুব বাবুল ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হায়দার চৌধুরী। ইতিমধ্যে তারা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র তথা দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন এবং জমাও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ইতোমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে তাদের চারজনের নামের তালিকা দলের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পাঠিয়েছেন বলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি জানিয়েছেন।

এদিকে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম, গত পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থী তৌহিদুল আলম এবং পটিয়া পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী মো. আবু তাহের। তারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। সম্প্রতি তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক একজনকে নির্বাচিত করা হবে বলে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম জানান।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সামশুল আলম মাস্টার ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ আহমদ আল কাদেরী পৌর নির্বাচন করবেন বলে তাদের দলীয় সূত্রে জানা গেছে ।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, যত জাঁদরেল প্রার্থীর নাম প্রস্তাব আর সমর্থনের ভিত্তিতে আনুক না কেন, কেন্দ্র থেকে নৌকা প্রতীক যে পাবে তার পাল্লাই ভারী হবে মনে করছেন আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থকরা। মূলত প্রার্থীদেরকে দুই কূলের জন্য দৌড়াতে হচ্ছে। প্রথমত নিজেদের দলীয় প্রতীক নৌকা প্রতীক আনা আর দলীয় ও দলের বাইরের ভোটারদের মন জয় করা। আবার নৌকা প্রতীক আনলেই হবে না, দলের ভিতরে থাকা অনেকে আবার প্রকাশ্যে নৌকার জন্য ভোট চাইবে আর গোপনে দলীয় প্রার্থীকে ফেল করিয়ে সামনের বারের পৌর নির্বাচনে নিজের শক্ত অবস্থানে নেয়ার ষড়যন্ত্র করবে— এমন ধারণাও করছেন কেউ কেউ।

চলতি সপ্তাহে জানা যাবে কে হচ্ছেন পটিয়া পৌরসভায় নৌকার মাঝি। নতুন মুখ, নাকি পুরানোই থাকছেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। স্ব স্ব প্রার্থীর পক্ষে তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে সরগরম রাখছে মাঠ।

এদিকে বিএনপি থেকে এখন পর্যন্ত তিনজন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে। তারা হলেন পটিয়া পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম সওদাগর, তৌহিদুল আলম, পটিয়া পৌরসভা বিএনপির সচিব গাজী মো. আবু তাহের।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের চারজন প্রার্থী নৌকা প্রতীক চাইলেও এ ক্ষেত্রে বিএনপিকে নীরবতা পালন করতে দেখা যায়। গত পৌর নির্বাচন আওয়ামী লীগ থেকে একক প্রার্থী বর্তমান মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশীদ থাকলেও বিএনপির ধানের শীষের প্রতীক পান তৌহিদুল আলম। নির্বাচনে মেয়র পদে অধ্যাপক হারুনুর রশীদ নির্বাচিত হন।

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে ৯ এপ্রিল পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর প্রথম পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয় নেতা শামসুল আলম মাষ্টার। সর্বশেষ ২০১৫ সাল ৩০ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত দুই বারের পৌর মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক হারুনুর রশীদ। ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

পটিয়া পৌরসভার ভোটসংখ্যা প্রায় ৫৮ হাজার। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে এবারের নির্বাচনে আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারী পটিয়া পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৭ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন ১৯ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৬ জানুয়ারি। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। ইভিএম পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো ভোট দিবেন পৌরবাসী।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!