১০ মাস আগে হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদ। এরপর এবার চট্টগ্রামের পটিয়ার আলোচিত ‘পিএ’ এজাজ চৌধুরীকে তিন সপ্তাহের মধ্যে তার সম্পদের বিবরণী জমা দিতে বলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। গত বছরের শুরুর দিকে দুদকে জমা পড়া অভিযোগে এজাজকে পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরীর ‘পিএ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে জাতীয় সংসদের হুইপ ও সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান, ‘এজাজ নামে আমার কোন পিএস, পিএ বা এপিএস নেই।’
প্রধান কার্যালয় থেকে রোববার (১৮ অক্টোবর) জারি করা দুদকের ওই নোটিশে এজাজ ছাড়াও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের স্বনামে ও বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস এবং সেসব অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ ২১ দিনের মধ্যে নির্ধারিত ছকে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এই সঙ্গে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দিতে না পারলে কিংবা মিথ্যা বিবরণী দিলে দুদক আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুদক গত বছর থেকেই এজাজের ওপর ‘নির্ভরশীল’ ব্যক্তি হিসেবে তার স্ত্রী সুরাইয়া আকতার, বড় ভাই সুলতান চৌধুরী ও তার বাবা আবদুল মালেকের নামে থাকা সম্পদের ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করে। এরই মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে মারা গেছেন এজাজের বাবা আবদুল মালেক।
ইতিমধ্যে তাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চায় দুদক। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে চিঠি দিয়ে তথ্যও চেয়েছে। এছাড়া ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও বিআরটিতেও খোঁজ সম্পদের খোঁজ চলছে।
গত বছরের শুরুর দিকে এজাজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ (নম্বর ১৮১/২০১৯) জমা পড়ে দুদকে। তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয় গত নভেম্বরে। শুরুতে সিদ্ধান্ত ছিল দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম অভিযোগ অনুসন্ধান করবে। পরে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নির্দেশে দুদক প্রধান কার্যালয় এজাজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে।
আবাহনী ক্লাবে জুয়ার আসর
শুদ্ধি অভিযান শুরুর আগে আবাহনীসহ চট্টগ্রামের ক্লাবগুলোতে জুয়ার আসর বসতো। ক্যাসিনোর পাশাপাশি ফ্লাশ, হাউজি, হাজারি, কাইট, পয়সা (চাঁন তারা) খেলা চলতো সেখানে। সেখান থেকে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা পেতেন এজাজ।
৩ কোটি টাকার দোকান টেরিবাজারে
চট্টগ্রামের টেরিবাজারে ফেমাস শপিং মলের মালিক এজাজ। শপিং মলটির বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। জুয়ার আসর, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি আর তদবির বাণিজ্যের টাকা দিয়ে এই সম্পদ করেছেন এজাজ।
১২ কোটি টাকার ইয়াবা
২০১২ সালের ১৮ মে চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জে আবদুল মালেক ওরফে মালেক চেয়ারম্যানের গোডাউন থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র্যাব। উদ্ধার হওয়া ইয়াবার বাজারমূল্য দেখানো হয় ১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। র্যাবের অভিযানে মালেক চেয়ারম্যান গ্রেফতার না হলেও কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে আসামি করা হয়। ওই বছরেরই ৩০ জুন র্যাব-৭ কর্মকর্তা রতন দেবনাথ চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা ও স্পেশাল জজ আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তবে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলার বিচার কাজ স্থগিত রয়েছে। ওই মামলার আসামি মালেক চেয়ারম্যান হলেন এজাজের বাবা। এজাজের প্রভাবেই মালেক চেয়ারম্যান ইয়াবা ব্যবসা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
হরিণখাইনে রাজকীয় তোরণ
সম্পদের প্রাচুর্য দেখাতে এজাজ তার গ্রামের বাড়ি পটিয়া উপজেলার হরিণখাইনে রাজকীয় তোরণ নির্মাণ করেছেন।
জমি ও ফ্ল্যাট
চট্টগ্রাম ও পটিয়ায় জমি এবং ফ্ল্যাট আছে এজাজের।
সিপি