পটিয়া হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের মারধর, ১৫ ঘণ্টা পর মুচলেকায় মুক্ত জাসাস নেতা

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে।

বিএনপি সমর্থিত দক্ষিণ জেলা জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের (জাসাস) সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন রোববার (১৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ হামলা চালিয়ে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করলে ১৫ ঘণ্টা পর মুচলেকা দিয়ে তিনি ছাড়া পান।

হামলায় আহতরা হলেন—জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তারেকুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ নার্স রুমু আকতার, জান্নাতুল নাঈম, ফারজানা আফরিন, এসএসিএমও অজয় কুমার শীল, ওয়ার্ডবয় মহিউদ্দিন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী রিন্টু কুমার নাথ।

জানা গেছে, ১০ অক্টোবর সকাল ১০টা ২০ মিনিটে পটিয়া পৌর সদরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৭৫ বছর বয়সী আবুল কাশেম নামের এক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই রোগীর অক্সিজেন সিচুরেশন তুলনামূলক কম থাকায় শ্বাসকষ্ট হয়। হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সাপ্লাইসহ সবধরনের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছিল তাকে।

কিন্তু রোগীর অবস্থা এমন পর্যায় ছিল যে, সার্বক্ষণিক তাকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছিল। হাসপাতাল থেকে রোগীকে দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা অক্সিজেন দেওয়ার মতো ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সেই রোগীর সারাদিন অক্সিজেনের দরকার পরছিল। হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় চিকিৎসকেরা রোগীর স্বজনদের তা জানিয়ে দেওয়া হয়।

এ খবর পেয়ে জাসাস নেতা নাছির উদ্দিন এসে কিছু বুঝতে না চেয়ে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের ওপর চড়াও হয়ে মারধর ও গালিগালাজ করতে থাকেন। এ সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্যান্য রোগীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে এ ঘটনার পর দ্রুত সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে হাতেনাতে নাছির উদ্দিনকে আটক করে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত তাকে থানায় আটকে রাখা হয়।

সোমবার সকাল ৮টার দিকে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি এসে হামলা ও মারধরের শিকার চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেন ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঘটনার সত্যতা পান। তিনি তখন দ্রুত হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নাজমা আকতার সহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি মিটিংয়ে বসেন। এসময় মিটিংয়ে যোগ দেন পটিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলমও। মিটিংয়ে তিনি নাছির উদ্দিনের পক্ষে কথা বললেও পরে ভিডিও ফুটেজ দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।

পরে জাসাস নেতা নাছির উদ্দিন এ ঘটনায় মুচলেকা দিয়ে সোমবার দুপুরে থানা থেকে ছাড়া পান।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পটিয়া হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের ওপর জাসাস নেতার হামলা ও মারধরের ঘটনায় আমি ঘটনাস্থলে পরির্দশন ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। এতে জাসাস নেতা নাছির উদ্দিনকে দায়ী করা হয়েছে। সোমবার সকালের এক জরুরি মিটিংয়ে সেই জাসাস নেতার পক্ষে প্রতিনিধিসহ হামলার শিকার চিকিৎসা নার্স ও স্টাফদের উপস্থিত ছিলেন। মিটিংয়ে সেই প্রতিনিধি এ ঘটনার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেন। এরপর সেই জাসাস নেতাকে পুলিশ ছেড়ে দেয়।

পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, পটিয়া হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের ওপর হামলার ঘটনায় জাসাস নেতা নাছির উদ্দিনকে রোববার রাতে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। সোমবার এ ঘটনার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm