পটিয়ার মোতাহের-দিদারসহ ৭৯ জনের নামে মামলা

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এবং উপজেলার ৯ চেয়ারম্যানসহ ৭৯ জনের নামে মামলা হয়েছে। এছাড়া আরও ২৫০-৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলায় উপজেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের একাধিক নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।

সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে পটিয়া আল জামিয়া আল ইসলামীয়া (পটিয়া মাদ্রাসা) ছাত্র মো. নুরুল হাসান বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া আসামি করা হয় উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল আলম, আওয়ামী লীগ নেতা লিটন বড়ুয়া, যুবলীগ নেতা ডিএম জমির উদ্দিন, চেয়ারম্যান এহসানুল হক, ফৌজুল কবির কুমার, ইনজামুল হক জসিম, আবদুর রাজ্জাক, আবুল কাশেম, জাকারিয়া ডালিম, মাহবুবুল হক চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম খান টিপু, মো. সেলিমকে।

মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে আছেন পটিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রহিম সরকার।

মামলায় বাদি উল্লেখ করেন, বিবাদিরা সন্ত্রাসী এবং অত্যাচারী প্রকৃতির লোক হয়। বিবাদিরা পটিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী নামে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিবাদিরা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিরীহ লোকদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতো। গত ৪ আগস্ট সকাল অনুমান ১১টা ৪৫ মিনিটের সময় আমিসহ পটিয়া আল-জামিয়া আল- ইসলামিয়া জমিরিয়া কাছেমুল উলুম মাদ্রাসার ১ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী এবং পটিয়া উপজেলার সর্বস্তরের ছাত্রজনতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে পটিয়া পৌরসভার ডাকবাংলো মোড় হতে শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে ইন্দ্রপুল বাইপাসে যাচ্ছিলাম। এ সময় মুন্সেফ বাজারের সামনে পৌঁছলে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর নির্দেশে আওয়ামী লীগ নেতা লিটন বড়ুয়া, যুবলীগ নেতা ডিএম জমির উদ্দিন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল আলম এবং শোভনদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এহসানুল হকের নেতৃত্বে হাতে দেশীয় ও মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা করে। এক পর্যায়ে মামলার অন্যান্য আসামিরা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন।

মামলায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, গুলিতে আমার ডান পায়ের পাতায় আঘাত লাগে এবং ৬০-৭০ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আমরা দৌড়ে পটিয়া উপজেলার সামনে ছন্দা সিনেমা সংলগ্ন রাস্তায় গেলে আসামিরা আবারও আমাদের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় তারা গুলি ছুঁড়লে শিক্ষার্থী আবু রায়হানের পেটে, ফয়জুল ইসলামের সারা শরীরে গুলিবিদ্ধ হয়। আসামিরা শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত প্রায় ৫০-৬০টি স্মার্টফোন ছিনিয়ে নেয়।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ওইদিন গুলিতে আহত ছাত্রদের নিয়ে চিকিৎসার জন্য বিকাল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া পথে শান্তির হাট এলাকায় পৌঁছালে কাশিয়াইশের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের নির্দেশে আসামিরা আমাদের গাছ ও লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান কাশেমসহ যুবলীগ নেতা আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ছাত্রদের ওপর গুলি ছুঁড়ে। এতে ঘটনাস্থলে আরিফুল ইসলামের মাথায় এবং মো. রাইহান গুলিবিদ্ধ হয়।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদির আইনজীবী অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বলেন, পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি বর্ষণ ও হামলার অভিযোগে পটিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় পটিয়ার সাবেক এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীসহ ৭৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ মামলার আসামি কাশিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করেন। সেখানে তার জামিন চাইলে আদালতের বিচারক বেগম তাররাহুম আহমেদ আসামির বিরুদ্ধে আনা দুটি মামলায় চাঁদাবাজির মামলায় জামিন দিলেও পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দীন বলেন, কাশিয়াইশ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে গতকাল রোববার তার ইউপি কার্যালয় থেকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনীর একটি টিম থানায় হস্তান্তর করে। তাকে থানায় হস্তান্তর করার পর থেকেই তার এলাকার বিক্ষুব্ধ জনতা বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন থানায়। তাদের মধ্যে একটি চাঁদাবাজি ও পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উপর গুলি ও হামলার ঘটনায় এ দুটি মামলা কাসেম চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার থানায় রুজু করা হয়।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm