পটিয়ার মোতাহেরের সঙ্গে মামলার আসামি সামশুল-শারুনসহ ২৯ জন

চট্টগ্রামের পটিয়ায় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান আসামি এবং সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও তার ছেলে শারুনসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে আদালতে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনকে।

বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী বাদি হয়ে পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। এসময় আদালতের বিচারক বেগম তাররাহুম আহমেদ মামলাটি তদন্তের জন্য পটিয়া থানার ওসি জসীম উদ্দীনকে আদেশ দেন। মামলায় ২৯ জনকে এজহারভুক্ত এবং আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

এ মামলায় অন্যদের মধ্যে সামশুলের সাবেক সাবেক এপিএস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৯ ও ২০ আগস্ট পটিয়া থানায় আরো দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রথম মামলাটি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়ার সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেছিলেন পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মো. নুরুল হাসান। ওই মামলায় ৩৭৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় কাশিয়াইশ ইউপির বিতর্কিত চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত সোমবার বিকেলে পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। আদালতের বিচারক বেগম তাররাহুম আহমেদ তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

২য় মামলায় সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে ৩৭৫ জনের বিরুদ্ধে উপজেলা বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলী আহমদ বাদি হয়ে পটিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করে। এ মামলায় ৭৫ জনকে এজহার ভুক্ত আসামি করে আরও ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ মামলা থেকেও রেহাই পাননি সাবেক এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, ১৫ ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, কাউন্সিলরসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা।

আদালতে দায়ের করা মামলার এজহারে বাদি বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী উল্লেখ করেন, বাদির ভাগিনা ইফতেখার রহমান সায়েম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা হলে পটিয়ার বাড়িতে চলে আসে সে। এসে পটিয়ার ছাত্র-জনতা তথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিয়ে পটিয়া আল জামিয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে গত ৫ আগষ্ট পটিয়ায় আন্দোলনরত ছিল। তার সঙ্গে বাদিও ছিল। গত ৪ আগস্ট প্রথম ঘটনার সময় দুপুর দেড়টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র-জনতা পটিয়া ডাক বাংলোর মোড়ে জড়ো হয়। সেখান থেকে মিছিল সহকারে মুন্সেফ বাজার ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আসামিদের উপস্থিতিতে ও নেতৃত্বে এবং নির্দেশে অজ্ঞাতনামা প্রায় ২০০/২৫০ আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, হকিস্টিক, লোহার রড নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আসামি সোহেলসহ অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। এসময় অন্তত ৫০ জনের অধিক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। এ ঘটনা ভাগিনা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে শেয়ার করে।

মামলায় বাদি আরও উল্লেখ করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা নিয়ে আসামিরা আমার ভাগিনার ফেসবুক পোস্ট সরানোর জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। একপর্যায়ে আসামিরা তাকে আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে সরে যেতে বলেন। না হয় তার পরিণতি ভয়াবহ হবে এবং তাকে হত্যা করে লাশ গুম করবে বলে হুমকি দেয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লং মার্চ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য ২য় ঘটনায় গত ৫ আগস্ট সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে ঘর থেকে বের হয়ে পটিয়া আসার সময় দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পৌঁছলে আগ থেকে ওঁৎপেতে থাকা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ২০-৩০ জন সন্ত্রাসীরা ভাগিনা ও বাদির গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ও কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বাদি ও ছাত্র-জনতার ওপর মারধর করেন।

এ মামলায় সাবেক দুই সংসদ সদস্য ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, কাউন্সিলর রুপক কুমার সেন, কেশব ধর, পংকজ চক্রবর্তী, প্রবোধ রায় চন্দন, হুইপপুত্র নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, কার্তিক দে, হুইপের সাবেক এপিএস হাবিবুল হক চৌধুরী, লোকমান হোসেন, নুর রশিদ চৌধুরী এজাজ, সেকান্দর তালুকদার, মাহমুদুল হক, মোহাম্মদ উল্লাহ, সাইফুদ্দিন মল্ল, রনবীর চক্রবর্তী, সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা মো. সোহেল, আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর খালেদ, জসিম উদ্দিন শিশু, মো. সাখাওয়াত, বাবু দিয়াবন, সরোয়ার রাজিন, জামশেদ আলম, আকাশ দেব, আইয়ুব আলী ওরফে বুইন্ন্যা, আব্দুস শুক্কুর ও জাহাঙ্গীর আলমকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদিপক্ষের আইনজীবী জসিম উদ্দিন বলেন, বুধবার দুপুরে আরও একটি মামলা রুজু করেছেন আদালতে এক বিএনপি নেতা। সেই মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে এবং সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরীসহ আরও ২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে। এছাড়াও আরও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২৫০ জনকে। বুধবার আদালতের বিচারক বেগম তাররাহুম আহমেদের কাছে মামলাটি আমলে নিয়ে পটিয়া থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm