পটিয়ার কর্মীরা গুলি চালিয়েছেন ঢাকার ইসলামী ব্যাংকে, বিক্ষুব্ধ ব্যাংকারদের অভিযোগ

ছেলে ও পিএসসহ এস আলমের ফাঁসি চেয়ে চলছে বিক্ষোভ

ইসলামী ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া চট্টগ্রামের পটিয়ার কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে অন্য কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সংঘর্ষে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে পাঁচজন কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ, তার ছেলে আহসানুল আলম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আকিজ উদ্দিনসহ ৯ কর্মকর্তার ফাঁসি চেয়ে ইসলামী ব্যাংকের একদল কর্মকর্তা বিক্ষোভ করছেন প্রধান কার্যালয়ের সামনের রাস্তায়।

পটিয়ার কর্মীরা গুলি চালিয়েছেন ঢাকার ইসলামী ব্যাংকে, বিক্ষুব্ধ ব্যাংকারদের অভিযোগ 1

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা ব্যাংকটির কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে ফেস্টুনে লিখে রাখেন ‘খুনি হাসিনার দোসর ব্যাংলা লুটেরা এস আলমসহ তার দোসরদের ফাঁসি চাই’।

রোববার (১১ আগস্ট) সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর মতিঝিলের দিলকুশা এলাকায় ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ইসলামী ব্যাংকের গোডাউন গার্ড শফিউল্লাহ সরদার, অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন, আব্দুর রহমান ও বাকী বিল্লাহসহ পাঁচ কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হন। শটগান দিয়ে পাঁচজনকে গুলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। তারা বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার (১১ আগস্ট) সকালে ইসলামী ব্যাংকের পুরনো কর্মীরা ঘোষণা দেন, ২০১৭ সালের পর নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ২০১৭ সালের পরে নিয়োগ পাওয়া বেশিরভাগ কর্মীই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার। তারা পটিয়ার কর্মকর্তা–কর্মচারী হিসেবে ব্যাংকের অভ্যন্তরে পরিচিত। ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় থাকা এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বাড়িও চট্টগ্রামের পটিয়ায়।

এদিকে পুরনো কর্মীদের ওই ঘোষণার পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পটিয়া এলাকার কর্মীরা আশপাশে জড়ো হয়ে ব্যাংকের দিকে রওনা দেন। তারা দলবদ্ধ হয়ে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছার পরই পুরনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় পটিয়া এলাকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে অস্ত্র সঙ্গে করে এনেছিলেন। তারা এ সময় গুলি ছুঁড়তে থাকেন। এতে ইসলামী ব্যাংকের গোডাউন গার্ড শফিউল্লাহ সরদার, অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন, আব্দুর রহমান ও বাকী বিল্লাহসহ পাঁচ কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হন।

পরে সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে পটিয়া এলাকার কর্মীরা প্রধান কার্যালয় থেকে অন্যত্র সরে যান।

এদিকে ইসলামী ব্যাংকে গোলাগুলির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। রোববার (১১ আগস্ট) সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকে গোলাগুলি সম্পর্কে জেনেছি। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরের দিনই ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে ঘোষণা করা হয়েছিল যে ২০১৭ সালের পর নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ব্যাংকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ওই সময় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে অবস্থিত মুজিব কর্নারও ভাঙচুর করা হয়।

২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ। এরপর ব্যাংকে প্রায় ১৪ হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। এদের বেশিরভাগই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার। মালিকানা পরিবর্তনের পর গত সাত বছরে ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বের করে বিদেশে পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবে অস্বাভাবিক ঘাটতি তৈরি হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা ধার নিয়ে ব্যাংকটি কার্যক্রম চালাচ্ছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm