পটিয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ, ড্যাম নির্মাণ ঢিমেতালে
১ হাজার ২৯১ কোটির দুই মেগাপ্রকল্প
চট্টগ্রামের পটিয়ায় ১৩৩ কোটি টাকার হাইড্রোলিক ড্যাম নির্মাণকাজ চলছে ঢিমেতালে। প্রায় চার বছরে এটির কাজ মাত্র ১৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে ১১৫৮ কোটির বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। প্রকল্পের ভৌতকাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ড্যাম নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৬ সালে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধীন উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পটি ১১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকার। এ প্রকল্পের কাজ ৭ ভাগে চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, সেচ অবকাঠামো, খাল পুনঃখনন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ, নদী তীর সংরক্ষণ, ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ ও ভূমি অধিগ্রহণ।
প্রকল্পের ৩০ কি.মি খাল পুনঃখননের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে গরুলোটা খালের ১০ কি.মি, শ্রীমাই খালের ৫ কি.মি, চানখালি খালের ৩.৫ কি.মি, বগাখাড়া খালের ২ কি.মি. আলম খাল, কাজির খালসহ আরও অন্যান্য খালের ১০ কি.মি খনন কাজ শেষ করা হয়েছে।
সেচ অবকাঠামো (স্লুইস গেট) ২৬টির মধ্যে ইতোমধ্যে ২২টির কাজ শেষ করা হয়েছে। অন্য দুটির কাজ চলমান। এছাড়াও ২৫.৫১ কি.মি বেড়িবাঁধের প্রায় ১২.৫০ কিলোমিটার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
এ মেগা প্রকল্পের আওতায় রয়েছে প্রায় ৩ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ। এর মধ্যে চরকানাই এলাকায় ১৫০ মিটার, মনসা ১৫০ মিটার, খরনখাইন ২০০ মিটার, ভেল্লাপাড়া খালের ডান তীরবর্তী ৭২০ মিটার তীর সংরক্ষণ কাজ শেষ। সে হিসেবে প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
এছাড়াও ৪৮ মিটারের একটা ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণকাজ মাঠ পর্যায়ে চলমান রয়েছে। এটি নির্মাণ করা হবে নাইখাইন গ্রামে। ৪.১০ কিলোমিটার ফ্লাড ওয়াল নির্মাণকাজ ৬৫ শতাংশ শেষ করা হয়েছে। বাকি কাজ চলমান রয়েছে।
তবে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। ৫৮.৯২৮ হেক্টর জায়গার মধ্যে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৫২ কোটি টাকা ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১১টি প্রস্তাবের মাধ্যমে ডিসি অফিসে পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে ৫টি প্রস্তাবের ডিএলসি মিটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকি ৬টির কাজ চলমান রয়েছে মাঠ পর্যায়ে।
এর মধ্যে উপজেলার গৈড়লা, নাইখাইন, জঙ্গলখাইন ও বাথুয়া মৌজায় ৪ ধারার নোটিশ যা ডিসি অফিস ও পাউবো’র যৌথ তদন্তের কাজ শেষ করা হয়েছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প চাষের আওতায় আসছে আরও ১০ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি। হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে পটিয়াসহ পাশের কর্ণফুলী, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালীতে।
পাউবো গৃহীত এ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পটিয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও ১০ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে পাশাপাশি নদী ও খালের ভাঙন থেকে সুরক্ষা পাবে কর্ণফুলী, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালী উপজেলা।
পটিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা।
চন্দনাইশ উপজেলার ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্প ও প্রকল্প মেরামত প্রকল্পের ব্যয় ১০০ কোটি টাকা এবং কর্ণফুলী নদী ও খালের ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম ডিভিশন-১ নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, ‘প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ দেয়াল নির্মাণ, বেড়িবাঁধ ও সিসি ব্লকের বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজসহ ভৌত কাজের ৬৫ শতাংশ শেষ করা হয়েছে। ১১টি খালের নাব্যতা ফেরাতে ৩০ কিলোমিটার খনন ও প্রকল্প এলাকায় ২৬টি রেগুলেটর (স্লুইস গেট) স্থাপন করার মধ্যে ২২টির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ব্লক নির্মাণ, বসানোসহ সব ধরনের কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে।’
১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এলিভেটর ড্যাম
পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই খালে Multipurpose Hydraulic Elevator Dam নির্মাণকাজ চলছে। ১৩৩ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালের জুন মাসে শেষ করা হবে বলে আশা করছে পাউবো।
চলমান ২য় এ প্রকল্পটির মধ্যে শ্রীমাই খালে ৮৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ড্যাম নির্মাণের ফলে পাহাড়ি ঢলসহ বর্ষা মৌসুমের বিপুল পরিমাণ জলরাশি সংরক্ষণের মাধ্যমে ১১০৮ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে। এছাড়াও শ্রীমাই খালের উভয় তীরে ৪.৪০০ কিলোমিটার তীর প্রতিরক্ষা কাজ করার মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধ হবে। ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি এ প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন হয়।
প্রকল্পের কাজ ৫টি প্যাকেজের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। এর মধ্যে এইচইডি ও আনুষঙ্গিক প্যাকেজ ১টি, বাকি ৪ টি নদী তীর সংরক্ষণ কাজ। চলতি অর্থ বছরে এ প্রকল্পে এডিপিতে বরাদ্দ পেয়েছে ৬ কোটি টাকা।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে ৪ হাজার ৪০০ মিটার নদী তীর সংরক্ষণ, ৩০০ মিটার খাল খনন, ২১০ মিটার সেচ কাঠামো, ৫১০ মিটার সংযোগ সড়ক, একটি হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম, একটি রেস্ট হাউজ, অফিস ভবন, গার্ড রুম নির্মাণ ইত্যাদি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ৮৪ মিটার দৈর্ঘ্যের এইচইডি ড্যাম নির্মাণের ফলে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষা মৌসুমের বিপুল পরিমাণ জলরাশি সংরক্ষণ করে এক হাজার ১০৮ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া যাবে। পাশাপাশি পটিয়া উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের নদী তীর সংরক্ষণ করে প্রকল্প এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। এছাড়াও মৎস্য সম্পদ রক্ষা, ইকো-ট্যুরিজমের সুযোগ সৃষ্টি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে আরও বলা হয়েছে, এ অঞ্চলে ড্যাম এবং রিজার্ভার নির্মাণের মাধ্যমে পাহাড়ি ঢালসহ বর্ষা মৌসুমে বিপুল পরিমাণ পানি সংরক্ষণের সুযোগ রয়েছে। যা পরে শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে। পানি সংরক্ষণ ও নদী পথের ল্যান্ডইপিং, সেচের পানি সংরক্ষণ, নদীর ধারণ ক্ষমতা বর্ধন ইত্যাদি নানাবিধ প্রকল্পে এইচইডি (হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম) একটি নতুন প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি অনেকটা রাবার ড্যামের মতো।
ডিজে