চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে চট্টগ্রাম-পটিয়া-কক্সবাজার মহাসড়ক রীতিমতো রণক্ষত্রে পরিণত হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ-যুবলীগের ১৩ জন কর্মী, শিক্ষার্থী ও পথচারী। এ সময় কমপক্ষে ১৬টি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সাংসদ মোতাহের এ সময় একটি বেসরকারি হাসপাতালে আশ্রয় নিলে সেখানেও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর চালায়।
জানা গেছে, রোববার (৪ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে পটিয়া আল জামিয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্ররা একটি মিছিল বের করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন মাদ্রাসা ও বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরাও। ওই সময় উপজেলা পরিষদের সামনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহররুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি সমাবেশ চলছিল।
ছাত্র-জনতার মিছিলটি সমাবেশের কাছাকাছি পৌঁছালে শুরু হয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুরু হয় সংঘর্ষ, ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া। এ সময় সরকারিদলের নেতাকর্মীদের কাউকে কাউকে গুলি চালাতেও দেখা গেছে। এমপি মোতাহের এ সময় সমাবেশ স্থান থেকে দ্রুত পাশ্ববর্তী নিউরন প্রাইভট হাসপাতালে আশ্রয় নিলে সেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এতে হাসপাতালটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এর আগে সকাল ১০টার আগে থেকে পটিয়া আল জামিয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রথমে চট্টগ্রাম-পটিয়া-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া সদরের ডাকবাংলা মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের হাতে লাঠি ছাড়াও ইট পাটকেল দেখা যায়। দুপুর ১২টার দিকে একটি বিশাল মিছিল মহাসড়ক অতিক্রম করে মুন্সেফবাজার এলাকায় পৌছালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীরা বিক্ষাভরত মাদ্রাসার ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় মাদ্রাসার ছাত্ররাও পাল্টা হামলা চালালে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীদের গুলি চালাতেও দেখা গেছে।
পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অন্তত ১৬টি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপজেলা গেইটের সামনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা-ভাংচুর চালিয়ে আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া তারা এমপির মালিকানাধীন বহুতল ভবনের একটি বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি হাসপাতালে ইটপাটকেল ছুঁড়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। সেখানে আওয়ামী লীগের সমাবেশের জন্য রাখা দুই শতাধিক চেয়ারও ভাংচুর করা হয়।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সন্তোষ বড়ুয়া (৭৫), মাদ্রাসার ছাত্র আতিকুল ইসলাম (২৩), আবদুল্লাহ মাহমুদ (২২), ওসমান (২০), পথচারী বোরহান (২৮), জালাল (৫৫), আরাফাত (২৫)সহ আরও অন্তত ২০ জন।
এছাড়াও ইটপাটকেল নিক্ষেপে আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত। পটিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা পটিয়া থানা ভবন ঘেরাও করলেও থানার প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় আন্দোলনকারীরা ভেতরে ঢুকতে পারেনি।
পটিয়া উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুচিতা দেব বলেন, দুপুরে হাসপাতালে আসা আহত দুজনের শরীর থেকে বুলেট বের করা হয়েছে।