নড়াইল হাসপাতালের ঘটনায় ধর্মঘটের উস্কানি ছড়াচ্ছেন চট্টগ্রাম বিএমএর সম্পাদক! (ভিডিও)
নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ক্রিকেটার ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার ঝটিকা সফরের পর কর্মস্থলে অনুপস্থিত চার চিকিৎসককে ওএসডি করার পর চট্টগ্রাম বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ধর্মঘটে যাওয়ার জন্য ফেসবুকে উস্কানি দিচ্ছেন অন্য চিকিৎসকদের।

এ ঘটনায় রোববার (২৮ এপ্রিল) নড়াইল সদর হাসপাতালের চার কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক দাপ্তরিক আদেশে। এই চার কর্মকর্তার একজন সিনিয়র কনসালটেন্ট, দুজন জুনিয়র কনসালটেন্ট এবং অপর একজন মেডিকেল অফিসার।
আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকও।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি অন্যান্য চিকিৎসকদের ধর্মঘট করার জন্য উস্কানি দেন। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘চলেন না একদিন সারাদেশের চিকিৎসকরা ওয়াকওভার ওয়াকওভার খেলি, তাহলে বুঝত চিকিৎসক কি? তার প্রয়োজন আছে কিনা?’
‘এদেরই আমি কসাই ডাকি’
এই পোস্ট দেওয়ার পর বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ ক্ষোভ জানাতে থাকে মন্তব্যে। তবে তরুণ চিকিৎসকদের অনেকে ফয়সাল ইকবালকে সমর্থন করে চিকিৎসক ধর্মঘটের পক্ষে মতামত জানাতে থাকেন।
ইলিয়াস হায়দার নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘প্রিয় চিকিৎসক সমাজ নিজেদের আইনের উর্ধে মনে করবেন না। আপনারা জনগণকে জিম্মি করলে জনগণ আপনাদের ছেড়ে দিবে? আপনারা সংখ্যায় ৫ হাজার। জনগণ কত? প্রতিরোধ শুরু হলে কোথায় যাবেন? ভুলত্রুটি থাকলে সেটা শুধরান। বাঁকা পথ চিন্তা করলে বুমেরাং হবে…’
শাহাদাত জুলাস নামের এক ব্যক্তি মন্তব্য করেন, ‘আপনাদের স্বভাব দেখে মনে হচ্ছে কোন ডাক্তার যদি খুন করে বা দুর্নীতিতে ধরা পড়ে আপনারা তখনও এ রকম ওয়াকওভার খেলা খেলতে নামবেন।
কারন একটাই আপনারা শিক্ষিত হয়েছেন তবে বিবেকহীন হয়েছেন।। আপনার লজ্জা হওয়া উচিৎ আপনি হচ্ছেন সে ব্যক্তি যে ব্যক্তি কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে এক রোগীর মৃত্যুর জন্য ডাক্তারের ভুমিকা প্রমাণিত হওয়ার পরও ঐ খুনি ডাক্তারের পক্ষ নিয়েছিলেন।’
রাজু আশরাফ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আপনার মত কিছু নরপশু চিকিৎসার মত মহান পেশায় জড়িত আছে বলে সাধারণ মানুষ ডাক্তারদের কসাই বলে। আপনার মত কিছু নেতা ব্যক্তি স্বার্থে আওয়ামী লীগ করে বলে আওয়ামী লীগকে জনগণের গালি শুনতে হয়।’
শোয়েব সাদী নামের এক ব্যক্তি মন্তব্য করেন, ‘ডাক্তারদের কথা হল আমাদের কোন জবাবদিহি থাকবে না। যদি জবাবদিহি করতে হয় তাহলে হয়ত এভাবে ওয়াকওভার, না হয় চিকিৎসা বন্ধ।একজন ডাক্তার ছুটি ছাড়া তিনদিন অনুপস্থিত। সেটার জবাবদিহিতা খুঁজলে যদি এভাবে ওয়াকওভারের কথা আসে তাহলে কি আর বলব?’
ফয়সাল মাহমুদ নীল মন্তব্য করেন, ‘এদেরই আমি কসাই ডাকি। তবে সব ডাক্তার কসাই না, এদের মত গুটিকয়েক কিছু কসাই আছে, যারা কথায় কথায় ওয়াকওভারের হুমকি দেয়। সরকারি মেডিকেলের ডাক্তার হয়েও সারাদিন প্রাইভেটে খেপ মারেন, হাসপাতাল থেকে কমিশন খান, ঠিকমত নিজের ডিউটি করেন না, আর আপনাদের এসব ফাত্রামি নিয়ে কিছু বললেই ওয়াকওভার!’
‘এই খেলাটা অবশ্যই খেলতে চাই’

সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালের আইএমও আহমেদ আসিফ দুররানী বলেন, ‘আপনার মত যোগ্য এবং সিংহহৃদয় নেতা যদি আমাদের সামনে থাকেন, তবে কোন বাপের বেটা আমাদের শাঁষিয়ে কথা বলে তা দেখে নেবো ইনশাআল্লাহ…। আসল খেলাটা তখন হবে। জয় বাংলা ✌✌’
‘Siimple Sumii’ আইডিধারী অপর এক চিকিৎসক বলেন, ‘এই খেলাটা অবশ্যই খেলতে চাই। তবে সংঘবদ্ধভাবে না হলে ফলপ্রসূ হবে না। আমরা হয়ে যাব অমানবিক।’
জাহেদ উল্লাহ এক চিকিৎসক বলেন, ‘পুরো একদিন লাগবে বলে মনে হয় না, ভাই। একযোগে একসাথে ১২ ঘন্টা করতে পারলেও সবকিছু নড়েচড়ে বসবে। সমস্যা হচ্ছে আমরা পারবো না!!! কেন পারবো না তা আপনি ভাল করেই জানেন।’

কী ঘটেছিল নড়াইল হাসপাতালে?
কাউকে কিছু না জানিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে টানা ২ ঘণ্টা নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ঝটিকা সফর চালান নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা। নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের কাছে নানা সমস্যার কথা শোনেন মাশরাফি। এ সময় মাশরাফি জানতে পারেন হাসপাতালে এক চিকিৎসক ছুটি ছাড়াই তিনদিন অনুপস্থিত রয়েছেন! ক্ষিপ্ত হয়ে মাশরাফি রোগী সেজে ওই চিকিৎসককে ফোন করেন। ওই চিকিৎসক তাকে রোববার হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে বলেন। পরে নিজের পরিচয় দিয়ে মাশরাফি চিকিৎসককে বলেন, এখন যদি হাসপাতালে অপারেশন দরকার হয় তাহলে সেই রোগী কী করবেন? চুপ করে আছেন কেন? আপনি কি ফাইজলামি করেন? চাকরি করলে নিয়ম মেনেই করবেন।
এরপর মাশরাফি সেই ডাক্তারকে তার কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দ্রুত কর্মস্থলে ফিরে আসার নির্দেশ দেন। পরে মাশরাফি নার্সিং সুপারভাইজারদের খোঁজ করেন। নার্সদের কক্ষে তালা দেখতে পেয়ে টেলিফোনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় একজন সুপারভাইজারের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অপরজনের ফোন খোলা থাকলেও রিসিভ করেননি।
রোগীদের অনুরোধে হাসপাতালের বাথরুম ও তার পরিবেশ নিজে দেখেন এবং মোবাইলে ছবি তুলে নেন। কয়েকটি বাথরুমের দরজা ভাঙা এবং দুর্গন্ধ থাকায় অত্যন্ত বিব্রত বোধ করেন তিনি।
নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা এ ব্যাপারে জানার জন্য আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে ফোন করতে বলেন। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বিথী খাতুন এ সময় অফিসে উপস্থিত থেকে মাশরাফির নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
এমন ভূমিকায় দারুণ প্রশংসিত হয়েছেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা। এমপির এসব কার্যক্রম ইতোমধ্যে ফেসবুকে ভাইরালও হয়েছে।



