ন্যাশনাল ব্যাংক হারালো এস আলম, পর্ষদ বাতিল করে নতুন ৭ পরিচালক নিয়োগ
তিন হাজার কোটি টাকার সুদ মাফ করিয়ে নিয়েছিল এস আলম
এবার চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের হাতে থাকা বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংকটি পরিচালনার জন্য নতুন পর্ষদ গঠনও করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর এই প্রথম কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হলো। তবে এখনও ইসলামী ব্যাংকসহ ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়ে গেছে।
হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে নিয়েছিল এস আলম গ্রুপ।
ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাবেক পরিচালক জাকারিয়া তাহের ও মোয়াজ্জেম হোসেন। এছাড়া ব্যাংকটিতে চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হবে ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক আদেশে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নীতিনির্ধারণী দুর্বলতার কারণে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি, ব্যাংকিং সুশাসন ও শৃঙ্খলা বিঘ্ন করার মাধ্যমে ব্যাংক ও আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে পর্ষদ সম্পৃক্ত। এ জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন ৪৭ (১) ও ৪৮ (১) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও জনস্বার্থে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিলের আদেশ দেওয়া হলো।
এদিকে অপর এক আদেশে ন্যাশনাল ব্যাংকে শেয়ারধারী পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক জুলকার নায়েন, সীমান্ত ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুখলেসুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মেলিতা মেহজাবিন ও সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ আব্দুস সাত্তার সরকার।
ন্যাশনাল ব্যাংকের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সিকদার গ্রুপের হাতে। তবে ক্ষমতাচ্যূত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শেষ সময়ে গত মে মাসে সিকদার গ্রুপকে হটিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে বসানো হয় চট্টগ্রামভিত্তিক কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানকে। তিনি এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের ঘনিষ্ঠজন। চট্টগ্রামে তাদের বাড়িও একই জায়গায়। এস আলম গ্রুপ ওই সময় পরিচালনা পর্ষদে নিজেদের লোকজনকে বসায় শেখ হাসিনার সরকারের প্রভাব খাটিয়ে। এদের মধ্যে ছিলেন এস আলম গ্রুপের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) সুব্রত কুমার ভৌমিকের স্ত্রী রত্না দত্ত, এস আলম গ্রুপের আইনজীবী এহসানুল করিমসহ আরও অনেকে।