নৌকা ঠেকাতে পটিয়ায় আ.লীগ নেতা মাঠে নামালেন বিএনপি নেতাকর্মীদের

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় কুসুমপুরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুর-উর রশীদ চৌধুরী প্রকাশ এম এজাজ চৌধুরী। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। নৌকা ঠেকাতে তিনি এবার নামিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের। তার পক্ষে এখন মাঠে নেমেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহসভাপতি রবিউল হোসেন।

শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) এলাকায় মতবিনিময় সভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতা এম এজাজ চৌধুরী তার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন যুবদল নেতা রবিউলের উপস্থিতিতেই।

জানা যায়, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর-উর রশীদ চৌধুরী প্রকাশ এম এজাজ চৌধুরী কুসুমপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড বর্তমান চেয়ারম্যান ইব্রাহীম বাচ্চুকে দলীয় মনোনয়ন দেয়।

এর প্রতিবাদে এজাজ চৌধুরীর অনুসারীরা গত বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের শান্তির হাট এলাকার সড়ক অবরোধ করে। তারা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিলও করে।

বৃহস্পতিবার মনোনয়ন ফরম দাখিলের শেষ দিনে এজাজ চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাঁর মনোনয়ন ফরম দাখিল করেন। শুক্রবার তিনি এলাকায় মতবিনিময় সভার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এ সময় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের এই সভায় দেখা গেছে। এ সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহসভাপতি রবিউল হোসেন বাদশাও।

এদিকে তাঁর উপস্থিতির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। নৌকা প্রতীক ঠেকাতে নির্বাচনী মাঠে নামা বিদ্রোহী প্রার্থী এজাজ চৌধুরী আগে থেকেই স্থানীয় বিএনপির আশ্রয়ে ছিল কি-না তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। আবার আওয়ামী লীগ নেতার নির্বাচনী খেলায় যুবদলের পদধারী এ নেতার ‘দাবার গুটি’ হওয়াকে মেনে নিতে পারছে না বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে কাজ করা দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী।

আওয়ামী লীগের সচেতন নেতাকর্মীরা বলছেন, নৌকা ঠেকাতে বিএনপি যে কৌশল হাতে নিয়েছে তা তাদের জন্য সঠিক হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগের উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো পদধারী নেতা হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক সহযোগী বানিয়ে নৌকা প্রতীক ঠেকানোর আয়োজন আওয়ামী লীগেরই দলীয়শৃঙ্খলা পরিপন্থি।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ সভাপতি রবিউল হোসেন বাদশা বলেন, ‘নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় শুধু আমি না, মূলত যার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান হয়েছে সেও কুসুমপুরা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজি নুর মোহাম্মদ। এছাড়া বিএনপি নেতা আহমদুল হক, আজিজুল হক সওদাগর, হাজি মোহাম্মদ সৈয়দ, মোহাম্মদ আরিফসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণাকে মাথায় না নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এজাজ চৌধুরীর পক্ষে এলাকাবাসীর ডাকে সাড়া দিয়ে উপস্থিত ছিলাম। যেহেতু এজাজ চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ইউপি নির্বাচন করবেন সেহেতু তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নন।’

যুবদল নেতা রবিউল হোসেন বাদশা বলেন জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীককে প্রতিহত করতে দাবি করে বলেন, ‘বর্তমান চেয়ারম্যান ও এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ইব্রাহীম বাচ্চু যাতে পুনরায় নির্বাচিত হতে না পারেন, সে জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। নৌকার প্রার্থী ইব্রাহিম বাচ্চু আমাকে চারটি মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। লিটন বড়ুয়াকে দিয়ে আমার ওপর হামলা চালিয়েছিলেন। মূলত ইব্রাহিম বাচ্চু তথা নৌকাকে এলাকায় প্রতিহত করতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিটিংয়ে অংশ নিয়েছি এবং তার পক্ষে মাঠে নেমেছি।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘আমি এই ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। যদি এ ঘটনা সত্যি হয়, তাহলে তিনি দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজ করেছেন। তাঁর ব্যাপারে আরও খবর নিয়ে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেব।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর-উর রশীদ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি দলের মনোনয়ন নিয়ে তো নির্বাচন করছি না। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। আমার এলাকায় দলমত নির্বিশেষে শুক্রবারের সভায় উপস্থিত ছিলেন। এখানে কে বিএনপি, কে যুবদল তাতো বিচার করার সুযোগ নেই। আমার এলাকাবাসী আগেও আমার পাশে ছিল, এখনো পাশে আছে। সে চিন্তাধারাকে সামনে রেখে আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘নৌকার বিপক্ষে গিয়ে নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। আমরা ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। এরমধ্যে যদি তিনি তার মনোনয়ন প্রত্যাহার না করেন, তাহলে তার পদপদবীসহ এমনকি দলের সদস্যপদসহ বহিষ্কার করা হবে।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!