নৌকায় মনোনয়নের পর জনতার ভিড় বহদ্দার বাড়িতে

ছিমছাম দোতলা গোলাপি রঙের বাড়িতে লাল সবুজের প্যান্ডেলে চলছে ছাউনি তৈরি। এ কাজের ভেতরেও বাড়ির সহকারী ইব্রাহিম পাশের বনফুল বেকারি থেকে নিয়ে আসছে মিষ্টির প্যাকেট। বহদ্দারহাটের এই বহদ্দার বাড়িতে গতরাত থেকেই মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আগত অতিথিদের আপ্যায়ন করতেই ব্যতিব্যস্ত বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা। ফুল ও শুভেচ্ছায় মুখর বাড়ির উঠান।

এই ছিমছাম দোতলা গোলাপী রঙের বহদ্দার বাড়ির বড় ছেলে এম. রেজাউল করিম চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক। চট্টগ্রাম ৮ আসনের জন্য জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েও ব্যর্থ হন। এবারেও মেয়র পদে মনোনয়ন পাবেন কিনা তা নিশ্চিত না হয়েও মনোনয়ন নিলেন ৫৩ বছরের এ রাজনীতিবিদ। আশা করেছিলেন নেত্রীর দিকে। নেত্রীও আশাহত না করে চমকপ্রদভাবেই তার হাতে দিলেন নৌকার ভার। মনোনয়নের খবর প্রচার হতেই মানুষের শুভেচ্ছায় ভাসছেন রেজাউলের পরিবারের সদস্যরা।

মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের অভিব্যক্তি

প্যান্ডেল তৈরির কাজ করছে শ্রমিকেরা। বাইরে দাঁড়িয়ে তার তদারকি করছেন এম. রেজাউল করিমের ছোট ভাই মো. নজরুল করিম চৌধুরী। কথা হয় তার সঙ্গে। বাইরে সাজসজ্জার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খবর পাওয়ার সাথে সাথেই মানুষের ভিড় লেগে আছে। তাদের বসার সুবিধার্থেই, কুয়াশা রোদে যাতে এলাকাবাসীর ঝামেলা না হয়, কষ্ট না হয় সেজন্যই এ ব্যবস্থা করা।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমে সময় টিভির খবরের মাধ্যমে জানতে পারি এই সুখবর। তারপর সবাই টেলিফোনে শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করেন। এই নগরের মানুষের জন্য নিভৃতে কাজ করে গেছেন যে মানুষ তাকে নেত্রী মূল্যায়ন করেছেন। এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে।’

রেজাউল করিমের রাজনৈতিক জীবন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উনি তৃণমূল পর্যায় থেকে আছেন। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এতটা বছর নিভৃতচারী মানুষ হিসেবে কাজ করে গেছেন।’

কোন ধরনের রাজনীতি করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ছোটভাই আরও বলেন, ‘আমার জানামতে কোনরকম সন্ত্রাসী পালেন না। এটা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারব। পরিচ্ছন্ন একজন রাজনীতিবিদ যাকে বলা যায় তিনি তাই।’

রেজাউল করিমের সেজো ভাই সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মো.কামরুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের পরিবারের অন্যতম সদস্য হিসেবে সক্রিয় রাজনীতিতে তিনি জড়িত। খুশিতে মানুষ বাড়িতে আসছে। এলাকাবাসী মিষ্টি বিতরণ করছে। আমরা চাই দলমত নির্বিশেষে এই নগরের মানুষের উপকার করতে এই পদে ফিরে আসুক। চট্টগ্রামের সম্মান বজায় রাখতে সেভাবে কাজ করবেন আমার ভাই।’

বাড়ির ভেতরে যেতেই দেখা যায় তিনজন মুক্তিযোদ্ধা ফুলের তোড়া নিয়ে সদ্য মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল করিমের বাড়িতে এসেছেন শুভেচ্ছা জানাতে। জানতে চাইছেন এম রেজাউল করিমের চট্টগ্রামে ফেরার সময়। ওই সময় কথা হয় মুক্তিযোদ্ধা ও পাঁচলাইশ থানার সাবেক কমান্ডার রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মানিকের সাথে।

চট্টগ্রামের জন্য কিছু করতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ পারবে। আমরা ওর পাশে আছি। আমার জীবন তো গেছে, যা কিছু করতে হয় ওর (এম রেজাউল করিম) জন্য করবো আমরা। ও পারবে চট্টগ্রামের মান-সম্মান রাখতে। ও সঠিক মানুষ।’

পাশে থাকা আরেক মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন মুন্সি এই কথার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের জন্য এর চেয়ে গর্বের আর কিছু হতে পারে না। এ নগরে যে ঝামেলা আছে তা অবশ্যই নিরসন করতে পারবে।’

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় এম রেজাউল করিমের স্ত্রী সেলিনা আক্তার চৌধুরী, তিন ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সব সদস্যরাও কথা বলেছেন প্রতিবেদকের সাথে।

কথা প্রসঙ্গে সেলিনা আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘উপ-নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেছেন, আপনি সবার মধ্যে এক নম্বরে আছেন। বিভিন্ন কারণে এক নম্বর থাকার পরেও কিছু দিতে পারছিনা বিধায় আপনাকে আমি দেখব।’

ব্যক্তি মানুষ হিসেবে রেজাউল কেমন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তিনি খুবই ভালো মানুষ। উনার মত মানুষ হয় না। সারাক্ষণ দেখতাম রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকতেন। এলাকার মানুষ খুব পছন্দ করেন তাকে।’

তার দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে তানজিনা শারমিন নিপুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ প্রোগ্রামে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। আরেক মেয়ে সাবরিনা তানিম বলেন,‘টিভির চ্যানেল স্ক্রল করতেই সুখবর পাই। বাবার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের এখন মূল্যায়ন হলো।

শুভেচ্ছা জানাতে আসা চান্দগাঁও থানার ছাত্রলীগ সভাপতি নুর নবী শাহেদ বলেন, ‘তিনি পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। নেত্রীকে ধন্যবাদ সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য। রেজাউল ভাই যোগ্য একজন প্রার্থী।’

এসআর/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!