নৌকার সমর্থক না হলে ভোট কেন্দ্রে যেতে মানা

বাধার সঙ্গে মারধরও বোয়ালখালী-চান্দগাঁওয়ে

নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের সহযোগিতায় আরেকটি কলঙ্কিত ও প্রহসনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ৮ আসনের উপ নির্বাচন— সাধারণ ভোটাররা প্রকাশ করেছেন এমন অভিমত। ভোটের আগের দিন পর্যন্ত মোটামুটি নির্বাচনী পরিবেশ সন্তোষজনক হলেও ভোট গ্রহণের দিন সকাল থেকেই কেন্দ্র ও আশপাশ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় নৌকার সমর্থকরা। অবৈধভাবে ভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল থেকে শুরু করে এমনকি ভোটারদের কেন্দ্রে যেতেও পথে পথে বাধা দিচ্ছে।

এমনকি নৌকার ভোটার না হলে বাধার সঙ্গে মারধরও করা হচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশের সহযোগিতায় ধানের শীষের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে অনেক কেন্দ্রে। নগরীর মোহরা চান্দগাঁও পাঁচলাইশ এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সবমিলিয়ে একটি একতরফা প্রহসন কারচুপির নির্বাচনের আয়োজনই হচ্ছে বলে মনে করছেন বিএনপি সমর্থিত ভোটাররা।

সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্রের অদূরেই জটলা বেঁধে অবস্থান অবস্থান করছে নৌকার কর্মীরা। তারা ভোটারের পরিচিতি নিশ্চিত হয়েই কেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছে। কেউ যদি ভোট নিজের অধিকার জানিয়ে ভোট দিতে যেতে চান তখনই মারধর করা হচ্ছে। নৌকায় ভোট দেবে কিনা সেটা নিশ্চিত হয়েই কেন্দ্রে যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছে ভোটাররা। বাধা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলা হচ্ছে, ওপরের নির্দেশ নৌকা ছাড়া কেউ যেতে পারবে না। এরকম চিত্র নগরীর মোহরা ও চান্দগাঁও ওয়ার্ডের অধিকাংশ কেন্দ্রেই। সকাল ৯টায় ভোট গ্রহণের পর ভোটার উপস্থিতি থাকলেও ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই কেন্দ্র ভোটার শূন্য হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে বেলা ১২টায়ও ভোট গ্রহণ নিয়ে উৎকন্ঠা দেখা গেছে পুলিশ ও নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের। এ সময় প্রায় সব কেন্দ্রে সাত থেকে দশ শতাংশ ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে জানানো হয় কেন্দ্র থেকে। কেন্দ্রে ধানের শীষসহ অন্য প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্রের আশপাশে ঘেঁষতে না পারলেও বুথ থেকে শুরু করে সর্বত্র বিচরণ ছিল নৌকার সমর্থকদের।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌকার সমর্থকরা কয়েকজন মিলেই ফাঁকা বুথে নৌকায় ভোট দিতে চেষ্টা করলেও তাতে বাধা দিচ্ছেন না নির্বাচনী কর্মকর্তারা। তবে আঙুলের ছাপ না মেলাতে তারা দিতে পারছেন না। এ সময় চান্দগাঁওয়ের একটি কেন্দ্রে অবস্থান করে দেখা যায়, ইসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, লিমিট ৯ ভাগের বেশি দেওয়া যাবে না, আপনার জেনুইন ভোটার আনেন। এ সময় নৌকার সমর্থকরা একে অন্যের দিকে থাকিয়ে থেকে হতাশ হয়ে পড়েন। পরে নৌকার ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে বারবার তাগাদা দেওয়া হয়।

ভোট শুরুর ঠিক আধ ঘন্টা পর সকাল সাড়ে ৯টায় চান্দগাঁও আবাসিকের সিডিএ স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রের পূর্ব পাশে বিকট শব্দে ককটেল বিস্ফোরণ! তার তিন মিনিটের মাথায় বি-ব্লকের মুখে স্বাধীনতা পার্কের কোণায় আবারো বিস্ফোরণ!

চান্দগাঁওবাসীর দাবি, রাতে স্বল্প বিরতিতে খৈ (ককটেল) ফুটেছে। আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আরিফ উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, রাতে তো ঘুমাতে পারিনি ককটেলের আওয়াজে। ভোট দিতে আসার পথে পথে চেক করছে। নিশ্চিত নৌকার সমর্থক না হলে কেন্দ্রের ধারে কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না।

আবার ভোটার নয় এমন দলীয় কর্মীদের গলায় ব্যাজ পরিয়ে সকাল ৯টার আগ থেকে কেন্দ্রের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখতেও দেখা গেছে। যাদের কেউ সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট দিতে বুথে প্রবেশ করেনি আবার স্থানও ত্যাগ করেনি।

এরই মধ্যে যুবলীগের এসরারুল হক দলবল নিয়ে এসে ‘সব আয়োজন’ ঠিকঠাক আছে কিনা তদারকিও করে গেছেন।

এ প্রসঙ্গে সিএমপির উপ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, ‘ভোটারদের বাধা দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। যারা প্রতিবন্ধকতা করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’

রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘এই ধরনের হওয়ার কথা না। আমরা দেখছি বিষয়টি।’

প্রথমবারের মতো ইভিএমে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ চলবে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোছলেম উদ্দিন, বিএনপির আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এসএম আবুল কালাম আজাদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ আহমদ, ন্যাপের বাপন দাশগুপ্ত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মূলত ভোটের লড়াই হবে বিএনপির আবু সুফিয়ান এবং আওয়ামলী লীগের মোছলেম উদ্দীন আহমদের সঙ্গে।

ইসি সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-৮ আসনটি চট্টগ্রাম জেলার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল, পশ্চিম গোমদন্ডী, পূর্ব গোমদন্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলী, পোপাদিয়া, চরনদ্বীপ, আমুচিয়া ও আহল্লা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন। বোয়ালখালী উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার। কেন্দ্র সংখ্যা ১৭০টি। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন। মোট কেন্দ্র রয়েছে ১৭০ টি। এবারই প্রথম এ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-৮ আসনের মোট ১৭০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি কেন্দ্র নগরীর অংশে পড়লেও বাকী ৬৯টি কেন্দ্র রয়েছে বোয়ালখালীতে। নগরীতে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন প্রায় ১৭০০ পুলিশ সদস্য আর বোয়ালখালীতে ১২৫০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া প্রত্যেক কেন্দ্রে গ্রাম পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!