থালা-বাটি-কম্বল, জেলখানার সম্বল—এমন একটি প্রবাদ চালু আছে কারাবন্দিদের জন্য। কিন্তু বন্দিজীবনের সঙ্গী কম্বল থেকেই পুরো কারাগারে বন্দিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে স্ক্যাবিসের মতো মারাত্মক চর্মরোগ। একইসঙ্গে বন্দির তুলনায় জায়গা অপ্রতুল হওয়ায় এক চর্মরোগীর সঙ্গে আরেক চর্মরোগীর সংস্পর্শে এসেও এ রোগ ছড়াচ্ছে। বন্দিদের ব্যবহৃত এসব কম্বল শীত মওসুমে ৫ মাসে তিন থেকে চার বার ধোয়ার নিয়ম থাকলেও বছরের পর বছর তা ধোয়া হয়নি।
তবে চট্টগ্রাম কারাগারে সদ্য যোগ দেওয়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব কম্বল ধোয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। তাদের মতে, কম্বল ধুলে হয়তো চর্মরোগের প্রকোপ কিছুটা কমতে পারে।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দির ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৭৫৩ জন। কিন্তু বর্তমানে বন্দি রয়েছে ৪ হাজার ২০০ জন। কারাগারে ছয়টি বন্দি ভবন—পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সাঙ্গু, কর্ণফুলী ও হালদার প্রতিটিতে রয়েছে ১২০টি ওয়ার্ড। এছাড়া ভয়ঙ্কর আসামিদের রাখতে ৩২ সেল, ১২ সেল ও ৬ সেল নামে তিনটি বন্দি সেল এবং একটি নারী ভবন আছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে বন্দির ধারণক্ষমতা ১২ জন। কিন্তু বর্তমানে সেখানে ৩০ জনেরও বেশি রাখা হচ্ছে। হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়া আবদুল নেজামের নামে এক আসামির সঙ্গে কথা হয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের। তিনি বলেন, একই রুমে আমরা গাদাগাদি করে থাকি। শীতের মধ্য আমাদের যে কম্বলটি দেওয়া হয়, তা ময়লায় কুচকুচে কালো হয়ে গেছে, দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ কম্বল গায়ে দিলে পুরো শরীর চুলকায়।
নেজাম আরও বলেন, ‘আমার পুরো শরীর দাউদ রোগে ভর্তি। আগে আমার শরীরে কোনো চর্মরোগ ছিল না। কারাগারে আসার পর শরীরে এসব দাউদ দেখা দিয়েছে। কারা হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখানোর পর তারা মলম আর কিছু ওষুধ দেয়। ওষুধগুলো দেওয়ার পর কিছুদিন ভালো থাকি। কিন্তু কম্বলের কারণে এ রোগটার আর নিরাময় হয় না।’
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. তুষার কান্তি নাথ বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই স্ক্যাবিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। স্ক্যাবিস হলে সারা শরীর চুলকাতে থাকে। আঙ্গুলের ফাঁকে, যৌনাঙ্গে, হাতের তালুতে, কবজিতে, বগল, নাভি ও কনুইয়ে চুলকানি শুরু হয়। স্ক্যাবিস এক ধরনের ছোঁয়াচে চর্মরোগ। একজন আক্রান্ত হলে অন্যদেরও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। শীতকালে এ রোগ বেশি হয়।’
তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে রোগীদের পর্যাপ্ত অয়েন্টমেন্ট, আন্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য ওষুধ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু রোগটি দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় চিকিৎসাও নিয়মিত হওয়া উচিত।’
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাসুদ হাসান জুয়েল বলেন, ‘সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল হোসেন স্যার চট্টগ্রাম কারাগারে যোগদানের পরপরই কম্বল ধোয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। বন্দিদের মধ্যে চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়ায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে এ কাজ চলবে। কারা হাসপাতাল থেকে চর্মরোগের যথাযথ চিকিৎসা এবং ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।’
ডিজে