বাবার দোকান থেকে টাকা চুরি করে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়ে সেখান থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে এসেছে এক তরুণ। তবে ক্লেপটোম্যানিয়া (চুরির প্রতি বাধ্যবাধকতা) রোগের সনদ দেখানোর পর হালিশহর থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হলো এ তরুণকে।
মোটরসাইকেল চুরিতে অভিযুক্ত আকিব রায়হান চট্টগ্রাম নগরের ২৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আক্তার উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে। মঙ্গলবার (২ মে) এমন ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, আকিব রায়হান নগরের হালিশহর এলাকায় বাবার মুদি দোকানের ব্যবসা পরিচালনা করেন। গত ৩০ এপ্রিল সেই দোকান থেকে চার হাজার টাকা চুরি করে কক্সবাজারে বেড়াতে যান আকিব। সেখানে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের দোকান থেকে একটি মোটরসাইকেল ভাড়ায় নেন তিনি। এ সময় নিজের ফোন নম্বর ও জাতীয় পরিচয় পত্রেরও ফটোকপি দেন। কিন্তু ভাড়ায় নেওয়া সেই মোটরসাইকেল নিয়ে তিনি সরাসরি চট্টগ্রাম চলে আসেন।
এদিকে চুরির যাওয়া মোটরসাইকেল ফিরে পেতে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জাতীয় জরুরী নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেন। পরে তার জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা অনুযায়ী হালিশহর থানায় যোগাযোগ করা হয়। সোমবার রাতে আকিবকে সনাক্ত করে পুলিশ। আকিবকে তার বাবা থানায় পাঠায়। চিকিৎসা সনদ দেখানোর পর পুলিশ নিশ্চিত হয় অভিযুক্ত আকিব ক্লেপটোম্যানিয়া রোগে আক্রান্ত।
জানা যায়, আকিব রায়হানের বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় চুরির একাধিক মামলা রয়েছে। গত বছরের মাঝামঝি সময়ে হালিশহরের চৌধুরীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১১টি ফ্যান চুরি করে আকিবসহ তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে স্থানীয় থানায় চুরি মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির উদ্দিন বলেন, ক্লেপটোম্যানিয়া রোগী আকিব রায়হান কক্সবাজারে একটি মোটরসাইকেল ভাড়ায় নিয়ে তা নিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসেন। মোটরসাইকেলটি নিয়ে এসে বিষয়টি তার মা-বাবাকে জানিয়েছে। যেখান থেকে ভাড়া নিয়েছে সেখানে তার মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয় পত্র ফটোকপি দিয়েছিল। মোটরসাইকেল মালিকের সঙ্গে আকিবের বাবার কথা হয়। পরে গতকাল রাতে মোটরসাইকেলটি আমরা থানায় হেফাজতে নিয়েছি। মোটরসাইকেলের মালিক কক্সবাজার থেকে এসে আমাদের কাছ থেকে মোটরসাইকেলটি নিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ছেলেটির রোগের চিকিৎসা সনদ দেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০২০ সাল থেকে সে এই রোগের চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। এ বিষয়ে মোটরসাইকেলের মালিকেরও কোনো অভিযোগ ছিল না। তাই এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আক্তার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মোটরসাইকেলটি আমার বন্ধুর। তবে আমার ছেলে মানসিক রোগী হওয়ায় সে না বলে মোটরসাইকেলটি নিয়ে এসেছে। এ কারণে তার অপরাধ বোধ জাগার জন্য তাকে থানায় আমি নিজে পাঠিয়েছি। সেখান থেকেই বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে।’
তবে মোটরসাইকেলের মালিক সাজ্জাদ আলম তাদের কোন আত্মীয় হন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম গিয়ে আমার মোটরসাইকেলটি আনতে হয়েছে। বিষয়টি বিরক্তিকর ছিল। ছেলেটির বাবা ক্ষমা চাওয়ায় এ বিষয়টি আর বেশিদূর আগাইনি। তবে তাদের কাছ থেকে কোন খরচ আমি নেইনি।
আরএস/এমএফও