চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতেই চোখে পড়ল মসজিদ সংলগ্ন মাঠে ইফতারির বিশাল আয়োজন। ছয়টি সারিতে প্লেটে রাখা হয়েছে ইফতারি। পশ্চিম পাশের মঞ্চে ‘রমজানের গুরুত্ব ও করণীয়’ তুলে ধরে ওয়াজ করছেন গাজী জামে মসজিদের খতিব আলহাজ্ব মাওলানা মুখতার আহমদ রজভী আল-কাদেরী। ক্যাম্পাসের ভেতরের দিকেও বসার জায়গা করা হয়েছে। তার পাশেই ইফতারি তৈরি ও পরিবেশনের কাজ চলছে।
ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অতিথির সংখ্যা। দেখতে দেখতেই সারিগুলো রোজাদারে পূর্ণ হয়ে গেল। ইফতারির সামনে বসে ধনী-গরিব সকল শ্রেণীর মানুষ একসঙ্গে ওয়াজ শুনছেন।
পুরো মাঠ জুড়ে বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবককে দেখা গেল। কেউ শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করছেন কেউবা নতুন সারিতে ইফতারির প্লেট সাজাচ্ছেন।
পূর্ব দিকে একটি রুমে গিয়ে পাওয়া গেল মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীনকে। তিনি সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন সব কিছু। তিনি জানান, মহিউদ্দন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এই ইফতার আয়োজন করা হয়। বড় পুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।
এর আগে জীবদ্দশায় মহিউদ্দিন চৌধুরী নিজের উদ্যেগেই ইফতারির আয়োজন করতেন। দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষের জন্যে প্রতিদিন ইফতার তৈরি করা হয়। সাধারণত আশেপাশের শ্রমজীবী গরিব মেহনতি মানুষই এই আয়োজনে শামিল হন। পুরো রমজান মাসজুড়ে চলবে এই আয়োজন।
বোরহান উদ্দীন বলেন, ‘আব্বা মানুষকে খুব ভালবাসতেন। মানুষকে খাইয়ে আনন্দ পেতেন। বাবা মারা যাওয়ার কয়েক বছর আগে এই আয়োজন শুরু করেন। এখনো বাবার টানেই অনেক অতিথি আসেন।’
জানা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও হোসেন বাবুর্চি ইফতারি তৈরিতে নিয়োজিত আছেন। তার সঙ্গে আছেন বেশ কয়েকজন কর্মচারী। ইফতারি সামগ্রীর মধ্যে আছে ছোলা, চপ, পেঁয়াজু, খেঁজুর, চিড়া, শরবত, হালিম, ফিরনি ইত্যাদি।
ইফতারি করতে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় আমার নাম হয়েছে জয়বাংলা জাহাঙ্গীর। বাড়ি সন্দ্বীপ। চট্টগ্রামে কাজে এসেছি। মহিউদ্দিন চৌধুরী জীবিত থাকার সময় থেকেই এখানে আসতাম। মহিউদ্দিন চৌধুরী মানুষকে খাওয়াতে ভালবাসতেন। তার টানেই এবারও এসেছি এখানে ইফতার করতে। তবে তিনি নেই বলে একটা শূন্যতা লাগছে।’
পাশে থাকা জামান মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি বললেন, ‘মহিউদ্দীন চৌধুরী বেঁচে না থাকলেও এই ইফতার আয়োজন আগের মতই আছে।’
গত ৫-৬ বছর ধরে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ইফতারের আয়োজন করে আসছিলেন, যে শিক্ষারতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। সেই আয়োজনে দাওয়াত দেওয়া হতো চট্টগ্রামের রাজনীতিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিশিষ্টজনদের।
তবে ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মহিউদ্দীন চৌধুরী মারা যাওয়ার পর এই আয়োজনের ধারা চালু থাকলেও মহিউদ্দিনবিহীন ইফতার মাহফিলে ব্যতিক্রমও এসেছে কিছুটা। আগের মতো এবার রোজার শুরুর দিকে ছিলেন না চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কোন নেতা। ছিলেন না ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারাও। যারা মহি্উদ্দীন চৌধুরী থাকার সময় সবসময় হাজির থাকতেন। তবে এখনো নিয়মিত এই ইফতার পার্টিতে যান নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন।
সুজন বলেন, ‘নেতার চালু করা ইফতার মাহফিলে হাজারো রোজাদার তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আসতেন, একসাথে ইফতার করতেন। কিন্তু নেতা নেই আমাদের মাঝে, তবুও সবাই আসেন। একটা শূূ্ন্যতা কাজ করে আমাদের মাঝে। ইফতার করতে বসলে নেতার কথা খুব মনে পড়ে।’
তবে মহিউদ্দীন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ এক ছাত্র নেতা বলেছেন, ‘মহিউদ্দীন ভাই থাকতে সব শ্রেণী পেশার মানুষ আর সর্বস্তরের নেতারা প্রায় হাজির থাকলেও এখন সেরকম কেউ আসেন না। হয়তো নওফেল ভাই চিটাগং আসলে তারাও ভিড় করবেন ইফতার পার্টিতে।’
আরএইচ/এডি/সিপি