নিষ্ঠুর ‘ডিমেনশিয়া’য় ভুগছে ষাটোর্ধ ৮ ভাগ মানুষ, চট্টগ্রামে বিশেষজ্ঞরা শোনালেন সতর্কবাণী

‘যে কেউ ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ বা চিত্তভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। বাংলাদেশে প্রায় ৮.১ শতাংশ ষাটোর্ধ লোক ডিমেনশিয়া সম্পর্কিত অসুখে ভুগছেন। বিশ্বে ভুগছেন সাড়ে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ! ২০৫০ সালে এ সংখ্যা ১৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। নিষ্ঠুর এই অসুখে ধীরে ধীরে রোগীর সমস্ত স্মৃতি মুছে যেতে থাকে, খুব কাছের মানুষকেও মনে রাখতে পারেন না রোগী। আসতে থাকে হতাশা ও নিদ্রাহীনতা। ভয়ঙ্কর এক অসহায় পরিস্থিতি তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, রোগীর মস্তিষ্কের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যও লোপ পেতে শুরু করে। টয়লেট যাওয়া, খাবার খাওয়ার মতো সাধারণ কাজগুলোও আর রোগী নিজের থেকে করে উঠতে পারেন না। সম্পূর্ণভাবে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। মুশকিল হল অসুখটি পুরোপুরি সারে না, তবে ওষুধ এ রোগের গতি শ্লথ করে দিতে পারে, এতে উপসর্গের প্রকটতা কিছুটা আটকে রাখা যায়—এই পর্যন্তই। কিন্তু উত্তরোত্তর রোগের জটিলতা বাড়ে। সমস্যা হল রোগটির কোনও আগাম উপসর্গ থাকে না। ফলে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধই হল অন্যতম সমাধান।

নিষ্ঠুর ‘ডিমেনশিয়া’য় ভুগছে ষাটোর্ধ ৮ ভাগ মানুষ, চট্টগ্রামে বিশেষজ্ঞরা শোনালেন সতর্কবাণী 1

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের বক্তৃতাকক্ষে ‘ডিমেনশিয়া’বিষয়ক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিওরোলজি এন্ড হসপিটালের নিওরোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর মালিহা হাকিম মূখ্য আলোচকের বক্তব্যে এসব তথ্য উপস্থাপন করে বলেন, ‘ডিমেনশিয়াকে জানুন, আলজেইমারস্ ডিজিজকে চিনুন। আগেভাগে রোগ চিহ্নিত হওয়া ও এ রোগের ওষুধ আমাদের দেশে সহজলভ্য নয় এখনও। এটা সহজলভ্য করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে কাজ করতে হবে। এ রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে প্রতি ঘরে ঘরে।’

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা.এ এস এম মোশতাক আহমদের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল কার্যনির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা.এম এ তাহের খান।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর কর্নেল ডা. গোলাম কাউনাইন, প্রফেসর ডা. হাসানুজ্জামান, প্রফেসর ডা. মাহমুদ আহমেদ চৌধুরী আরজু, প্রফেসর অলক কুমার নন্দী, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ইউসুফ, সহ সভাপতি আবদুল মান্নান রানা, সেক্রেটারি জেনারেল রেজাউল করিম আজাদ, পরিচালক ডা. নুরুল হক ও ডা. সোমন চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে একটি সচেতনতামূলক ডকুমেন্টারিও প্রদর্শন করা হয়।

আলোচনা অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে ডায়েট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আলাদা কিছু খাদ্যবস্তু ডায়েটে যোগ করলে তা ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। পালং শাক, পার্সলে পাতায় থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে চট করে স্মৃতিভ্রংশ রোগ আক্রমণ করতে পারে না। রান্নায় হলুদ ব্যবহার, খাদ্যে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ-সি-ডি-ই নিশ্চিতকরণ, অলিভ অয়েল, ডিম, চিয়া সিড, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো খাবার গ্রহণ, প্রতিদিন মাছ, পনির, দই, শাক-সব্জি, চিড়ে-মুড়ির মতো সাধারণ সনাতনী খাদ্য এ রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

আলোচকরা পরামর্শ দিয়ে বলেন, খাদ্যাভ্যাস থেকে বাদ দিতে হবে প্রিজারভেটিভযুক্ত প্যাকেটজাত খাবার, অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার। পাশাপাশি কমাতে হবে মানসিক চাপ, বাডাতে হবে নিয়মিত শরীরচর্চা ও সৃজনশীল কাজ। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েডজাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পরিহার করতে হবে বিষণ্নতা ও স্থূলতা। তবেই এ নিষ্ঠুর রোগ থেকে, দুঃসহ বেদনা থেকে মুক্তি সম্ভব।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm