নিষিদ্ধ এনফিল্ড বাইক নিয়ে ছাত্রলীগ নেতার ‘আলগা’ বাহাদুরি (ভিডিও)

মাথায় নেই কোনো হেলমেট। চোখে সাঁটা কালো চশমা। গায়ে রঙচটা টি-শার্ট। চেহারায় ‘আলগা’ বাহাদুরির ছাপ! চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার রাস্তায় এক নিষিদ্ধ মোটরসাইকেল নিয়ে সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির এক ছাত্রলীগ নেতার ভীতিকর ছুটোছুটিতে অতিষ্ট এলাকাবাসী। তবে তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই সেই নেতার। বরং আমদানি নিষিদ্ধ সেই মোটরসাইকেল চালানোর ভিডিও তার নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে চলেছেন। সর্বশেষ এরকম ভিডিও দেখা গেল গত ৬ অক্টোবর।

ওই মোটরসাইকেলের ব্র্যান্ডের নাম ‘রয়েল এনফিল্ড’। দৈত্যাকৃতির এই মোটরবাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান যিনি উপজেলার সড়কজুড়ে— নাম তার ইমরান হোসেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ইমরানের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নে।

ইমরান হাসানের এই মোটরসাইকেলের পেছনে সাঁটা রয়েছে নম্বরপ্লেটও। তাতে লেখা আছে ঢাকা মেট্রো-থ ১৪-১১১২।

ঢাকা বিআরটিএ কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিআরটিএ সার্ভারে এই নম্বরের একটি ট্রাক রেজিস্ট্রেশন করা আছে। কুমিল্লা জেলার আবদুস সালামের ছেলে মো. ইসমাইলের নামে এই ট্রাকটির রেজিস্ট্রেশন।

YouTube video

অন্যদিকে ঢাকা মেট্রো-খ ১৪-১১১২ নম্বরে কোনো গাড়িই রেজিস্ট্রেশনভুক্ত নেই বলে জানিয়েছে ঢাকা বিআরটিএর যানবাহন রেজিস্ট্রার বিভাগের এক কর্মকর্তা।

বাংলাদেশভিত্তিক একটি গাড়ি বিষয়ক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় মোটরসাইকেল নির্মাতা কোম্পানি রয়েল এনফিল্ড ৩৪৬ সিসির নিচে এখন পর্যন্ত কোনো মোটরসাইকেল উৎপাদন করেনি। রয়েল এনফিল্ড বাংলাদেশে তাদের কোনো গাড়ি বৈধভাবে রফতানি করে না। কারণ তাদের উৎপাদিত গাড়ি ৩৫০ সিসির চেয়েও বেশি সক্ষমতাসম্পন্ন।

এ বিষয়ে বিআরটিএ চট্টগ্রামের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ধরনের মোটরবাইক কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করতে পারেন। এত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মোটরবাইক কেন এবং কিভাবে আনা হয়েছে তা অনুসন্ধান করা উচিত। এ ধরনের গাড়ি ব্যবহারকারীদের সম্পদের তথ্যও সংগ্রহ করার নির্দেশনা রয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার কাছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চোরাচালানের মাধ্যমে অথবা অন্য কোন পণ্যের আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এ নিষিদ্ধ মোটরসাইকেল আমদানি করা হয়েছে। এটি জব্দ করে ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে চোরাচালান আইনে মামলা করা উচিত। দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ ধরনের কিছু নিষিদ্ধ মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। সাতকানিয়ায় যিনি এই গাড়ি নামিয়েছেন তার বিষয়েও তদন্ত হওয়া উচিত।’

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে সর্বোচ্চ ১৬৫ সিসির মোটরসাইকেল আমদানির সুযোগ রয়েছে। এর বেশি সিসির মোটরসাইকেল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমদানি নীতি (২০১৫-১৮) সংশোধন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই আদেশ জারি করেছে।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, মোটরসাইকেল আমদানির ক্ষেত্রে পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা বাহিনী ১৬৫ সিসির বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল আমদানি করার সুযোগ পাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে এসএসএফকে শুভেচ্ছা উপহার দেওয়ার জন্য ৬৫০ সিসির দুটি সুজুকি মোটরসাইকেল আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকার তেজগাঁওয়ের র‌্যানকন মোটরবাইককে (সুজুকি) এ অনুমতি দেওয়া হয়। এ ধরনের মোটরসাইকেল আমদানির অনুমতিতে তিনটি শর্তও দেওয়া হয়েছে। এগুলো হল বিধি অনুযায়ী শুল্ক কর ও জরিমানা আদায় করতে হবে। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সকে (এসএসএফ) উপহার ব্যতীত অন্য কোথাও এ গাড়ি বিক্রি করা যাবে না এবং আমদানি নীতি সংক্রান্ত যাবতীয় বিধি প্রতিপালন করতে হবে।

যেখানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএফকে উপহার দেওয়ার জন্য ১৬৫ সিসির বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল আমদানির অনুমতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটিকে শর্ত জুড়ে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সেখানে সাতকানিয়ায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতার এ ধরণের মোটরসাইকেল চালিয়ে বাহাদুরি প্রদর্শনকে নেতিবাচকভাবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে সাতকানিয়ার একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ইমরান হাসান একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। সে নিষিদ্ধ মোটরসাইকেল এলাকায় চালাচ্ছে। যা এলাকার মানুষ তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ বলেই ধরে নিচ্ছে। ভবিষ্যতে তার মত নেতারা জনপ্রতিনিধি হবে। এমন মানসিকতা নিয়ে তো জনগণের সামনে যাওয়া যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের নিষিদ্ধ মোটরসাইকেল অনেক দাম দিয়ে দেশে সরবরাহ করে থাকে চোরাকারবারিরা। তার সাথে চোরাকারবারিদের কোনো যোগসাজশ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত।’

সাতকানিয়ার স্থানীয় একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অভিযোগের সুরে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ রকম দানবের মত একটি মোটরসাইকেল নিয়ে এলাকায় ঘোরাঘুরিকে স্থানীয় লোকজন ভাল চোখে দেখছে না। নেতা হয়ে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করা তো অশোভন, অগ্রহণযোগ্য।’

তবে রয়েল এনফিল্ড গাড়ি চালানোর কথা স্বীকার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইমরান হাসান বলেন, ‘গাড়িটা আমার না। আমি আমার পরিচিত একজন থেকে ধার করে চালিয়েছি।’

‘পরিচিত একজনের’ পরিচয় জানতে চাইলে ইমরান হাসান বলেন, ‘তার পরিচয় দেওয়া যাবে না।’

এর আগে সর্বশেষ গত ৫ অক্টোবর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকার বান্ডেল রোডের ‘মা’ ভবনের নিচতলা থেকে রয়েল এনফিল্ড ব্র্যান্ডের ৩৫০ সিসির একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ১১ অক্টোবর ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে চোরাচালান আইনে মামলা দায়ের করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm