নারী ও অশ্লীল মন্তব্য

নারী ও অশ্লীল মন্তব্য 1চৌধুরী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম : একাত্তর টিভির টকশোতে সাংবাদিক মাসুদা বাট্টির এক প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্টে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন জামাতের প্রতিনিধিত্ব করে কিনা তা জানতে চাওয়ায় রেগে মাসুদা বাট্টিকে চরিত্রহীন নারী বলে অশ্লীল মন্তব্যের কারণে জেলে গেলেন ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন। একজন সাংবাদিককে প্রকাশ্যে মিডিয়ায় চরিত্রহীন বলে অশ্লীল মন্তব্যের প্রতিবাদে দেশে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বিশিষ্ট জনেরা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনকে মাসুদা বাট্টির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবী করলে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন ফোন করে মাসুদা বাট্টির কাছে ক্ষমা চান। একজন সাংবাদিকর ব্যাক্তিগত চরিত্র নিয়ে অশ্লীল মন্তব্যের জন্য মাসুদা বাট্টি সহ একাধিক মামলা হয়। বিষয়টি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেন। জামাত প্রশ্নে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনের এত রেগে যাবেন কেন? । কারণ তিনিতো ছাত্র শিবিরের প্রতিনিধি সম্মেললনে বক্তৃতায় ছাত্র শিবিরের ভূয়সি প্রশংসা করে করেছিলেন। রেগে গেলেও উত্তর সুন্দরভাবে দিতে পারতেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্টজন মানিক মিয়ার ছেলে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন ইত্তেফাক সাংবাদি সিরাজুদ্দিনকে পাক হানাদার বাহিনি তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভুমিকা ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মোশতাকের দলে যুক্ত ছিলেন। তাদের নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। ইত্তেফাকে একজনকে খুন করে আপন ভাইকে ফাঁসিয়ে দেন। কাকরাইলের বাড়ি নিয়েও অনেক ঝামেলা আছে। ব্যারিষ্টারি পাশ করে বাংলাদেশে এস পুরোদস্ত সাহেব বনে যান। তাই বাঙালি খাবার খাবেনা বলে সেযুগে একশ টাকায় বাবুর্চি রেখেছিলেন। এক এগারর সময় দু’নেত্রীকে মাইনাস ফর্মুলা ও গ্রেফতারের কুশীলব। বর্তমানে জাতীয় ঐক্য গঠনেরও অন্যতম। যদিও তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ঐক্য করতেই পারেন। মাসুদা বাট্টিকে যখন মইনুল হোসেন অশ্লীল মন্তব্যটি করেন তখন মাসুদা বাট্টি কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে কোন প্রকার রাগ না দেখিয়ে তাকে আবারো প্রশ্ন করেন। এ ক্ষেত্রে মাসুদা বাট্টি নিজের পেশাদারিত্বের সুন্দর পরিচয় দিয়েছেন অন্যদিকে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন গালাগালের মধ্যদিয়ে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রন করার জন্য মাসুদা বাট্টিকে ধন্যবাদ। কারণ মানসুদা বাট্টি মনে করেন যে যেরকম সে সেরকম আচরণ করবে তাতে রাগ করার কোন কারণ নেই । মইনুল হোসেনের বিভিন্ন বক্তব্যগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায় তিনি প্রায় রেগে অন্যকে তুচ্ছ করে কথা বলেন। একজন মানুষ যখন যত জ্ঞানী তত কোমল,সরস, ভদ্র, মার্জিত শিষ্টাচার শিখে । দেশ জাতি তাদের কাছ থেকে জ্ঞান ,শিষ্টাচার শিখে। শিক্ষতজনেরা দেশের বাতিঘর হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। দেশ থেকে কুসংস্কার, নারী নির্যাতন , হানাহানি দুর করে একটি সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণে এগিয়ে আসেন। জাতি তাদের শ্রদ্ধা করে। ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনের মামলা, আটক, মুক্তি এসব আইন আদালতের বিষয়। এগুলো আইনজীবিরা ভাল বুঝেবেন। আমার বিষয় আইনি বিষয় নয় অন্যখানে। তিনি একজন নারীর গর্ভে জম্ম নেওয়া একজন নারীর স্বামী একজন নারীর ভাই ও পিতা হিসেবে তিনি কিভাবে একজন নারীকে এমন অশ্লীল মন্তব্য করতে পারে ভাবতে আবাক লাগে। নারী সম্পর্কে কত হীন ধারণা পোষণ করলে একজন ব্যাক্তি এমন মন্তব্য করতে পারে তা ভাবা যায়। যে জ্ঞান আমাদের নারীদের অসম্মান করতে শেখায় সে জ্ঞান , জ্ঞানী আমাদের প্রয়োজন নেই। একজন নারী মা,বোন, স্ত্রী, মেয়ের জাত হিসেবে অতীব সম্মানের জাত। একজন মুর্খকের সামনে যদি তার মা বোন নিয়ে গালি দেয় তাহলে সে খুন করতেও দ্বিধা করেনা। তাছাড়া যে দেশে বেগম রোকেয়া নারী মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার, সাংসদ থেকে শুরু করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচলের পোশাকশিল্প সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ নারী অবদান রাখে। সেদেশের একজন জ্ঞানী ব্যক্তি যদি প্রকাশ্যে মিডিয়ায় নারী সম্পর্কে এমন বাজে ,নোংরা মন্তব্য করে । আবার উল্টো তাকে ক্ষমা চাওয়ার উকিল নোটিশও পাঠায়। ভাবতে আবাক লাগে আমরা কোন সমাজে বাস করছি। সম্প্রতি বলিওডে হ্যাশট্যাগ মিটুতে ভারতের রথী মহারথীদের নাম উঠে আসায় সবাই নড়ে চড়ে বসছে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় তাদের নামে যৌন হয়রানীর অভিযোগ । সেদেশের মানুষ একসময়ের হিমালয় সম সম্মানিতজনদের বর্জন শুরু করেছে। আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। নারীদের সম্মান করার শিক্ষাটা পরিবার, সমাজ থেকে পেতে হবে। নারী কোন অবহেলার পাত্র কিংবা পণ্য নয়। সাংবাদিক মানে সাংবাদিক । সেখানে কোন নারী পুরুষের বৈষম্য , বিভেদ নেই। সুতরাং মাসুদা বাট্টির পরিচয় তিনি একজন সাংবাদিক । মইনুল হোসেন গ্রেফতারের বিষয় আচ করতে পেরে ড. কামাল হোসেনকে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে একটি বিবৃতি দেয়ার অনুরোধ করলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাই একজন প্রবীন আইনজীবি ও সংবিধান প্রণেতাকেও কাপুরুষ ডাকেন। যে দলের সাথে ঐক্যফ্রন্ট করেছেন সে দলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টকে ছাগল ও মাইনাসের কথা বলেন। অর্থাৎ তিনি কাউকে ছাড়েননা । মাসুদা বাট্টির অপমান পুরো নারী জাতির তাই নারী জাতি জেগে উঠেছে, প্রতিবাদ করছে। নারী মানে সম্মান আর মমতার পাত্র। যে নারী জাতির সম্মান করতে জানেনা। সে কখনো সম্মানিত হতে পারেনা। শুধুমাত্র জ্ঞান নয় মানবীয় গুনাবলি আমাদের নারী জাতিকে সম্মানের শিক্ষা দেয়। আসুন একজন নারীকে নারী না ভেবে একজন মানুষ ভাবি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!