নাছিরের ৫ বছরের আমলনামা, রেজাউলের গলার কাঁটা

0

আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের ব্যর্থতাগুলো সামাল দেওয়াই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা। একসময় ‘হেলদি সিটি’ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দেশের ‘মডেল সিটি’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময়ে। পরের দুই মেয়রের হাত ধরে সেই গৌরব বাড়ার বদলে ক্ষয় হয়েছে বেশি। বিশেষ করে বর্তমান মেয়াদে আজম নাছির উদ্দিন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন জটিলতায় চট্টগ্রামের মানুষের নাগরিক ভোগান্তি বেড়েছে চরমভাবে।

স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, গত সময়ে যে ভোগান্তির মুখোমুখি তাদেরকে হতে হয়েছে সেসব ভোগান্তি লাঘবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছ থেকে সুষ্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আশা করছেন তারা।

চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান দুটি সড়ক পোর্ট কানেকটিং রোড ও আগ্রাবাদ এক্সেস রোড। ২০১৭ সালের শেষের দিকে এই দুটি সড়কের কাজ শুরু করে চসিক। ২০১৯ সালের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এই দুই সড়কের বেশিরভাগ কাজই অসম্পন্ন। নির্বাচনের আগে এই দুটি সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। একই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে আরাকান সড়কের বহদ্দারহাট থেকে মোহরা অংশেও। প্রায় সাড়ে তিন বছর টানা ভোগান্তির পর গত বছরের জুলাই থেকে এই সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করে চসিক। তবে সেই সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়নি এখনও। এই দুই সড়কে চলাচলে গত কয়েক বছর ধরে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে।

s alam president – mobile

চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিরসনকে প্রধান দায়িত্ব বলে গত নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও সেই কাজে কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি নাছির। বরং সরকারের শীর্ষপর্যায়ের অনাস্থায় জলাবদ্ধতার বিষয়ে কাজ করার নিয়ন্ত্রণ খুইয়েছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে। চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে বাদ দিয়ে সিডিএকে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। তবে এখন পর্যন্ত এই দুর্ভোগে বলার মত কোন পরিবর্তন আসেনি। এই দুর্ভোগের বিষয়ে নাগরিকদের অসন্তোষ রয়েছে ব্যাপক।

সরকারি বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির ফলে নগরে বায়ুদুষণ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে বর্তমান মেয়রের মেয়াদে। খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরীক্ষাতেই গত নভেম্বরের শেষ দিকে নগরীর বায়ুদুষণ সূচক (একিউআই) ভয়াবহ মাত্রায় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২১ নভেম্বর এ কে খান মোড়ে ৫৮০ এবং পরের দিন চেরাগী মোড়ে ৩১০ পাওয়া যায়। অথচ ১৫১ মাত্রার ওপরে গেলেই তা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নগরবাসী। বিপন্ন হচ্ছে বাস্তুসংস্থান। চরম আকার ধারণ করা এই সমস্যা লাঘবে কোন কার্যকর উদ্যোগ নিতে কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন মেয়র নাছির।

নগরীর হালিশহরের বাসিন্দা নুরুল আনোয়ার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, দায়িত্ব পালন কালে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মোটা দাগে বেশ কিছু ব্যর্থতা আছে। যেমন চট্টগ্রামকে ধূলোর নগরীতে পরিণত করা, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উন্নয়ন কাজ বছরের পর বছর অসমাপ্ত রেখে জনগণের নাভিশ্বাস তোলা, ‘ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি’ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করা, মশা নিধনে কোনো উদ্যোগ না নেওয়া, জলাবদ্ধতা নিরসনের অঙ্গীকার করেও দৃশ্যমান কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারা।

Yakub Group

‘এই ব্যর্থতাগুলোর বিষয়ে রেজাউল করিমের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আশা করি। এই ভোগান্তিগুলো থেকে নাগরিকদের মুক্তি দিতে তিনি কী উদ্যোগ নেবেন সেটি ভোটারদের কাছে পরিষ্কার করতে হবে’— যোগ করেন নুরুল আনোয়ার।

অন্যদিকে স্বাস্থ্যখাতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর যে সফলতা গত দুই মেয়রের আমলে মলিন হয়েছে, তার ঘাটতি পূরণে রেজাউলের কাছে প্রত্যাশা রয়েছে বলে জানান এনজিও কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরীর গড়া ওয়ার্ডভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকগুলোর কিছু মনজুর আলমের সময় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো পুনরায় চালু করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এই বিষয়টি রেজাউল করিমের নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্ব পাওয়া উচিত বলে মনে করি।’

শিক্ষাখাতেও আ জ ম নাছিরের ব্যর্থতা চোখে পড়ার মতো। এ খাতেও যা কিছু অর্জন, তা মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলেই হয়েছে। বিষয়টি নজর এড়ায়নি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও। গত বছরের ২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মেয়র থাকাকালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরেজমিনে দেখতে চট্টগ্রাম আসেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। ওই সময় আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন দেখো কীভাবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। একমাত্র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনই মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময়ে নিজের পায়ে চলতে পেরেছিল। তা তুমি একটু দেখো। ওই দেখার জন্যই মূলত আমি নাছির ভাইয়ের (বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন) সঙ্গে কথা বলেছি। তাই বিদেশে না গিয়ে আগে নিজের ঘরে শিখতে এসেছি।’ ভোটাররা বলছেন, শিক্ষাখাতেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা জানতে চান আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী রেজাউল করিমের কাছে।

এদিকে চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই রেজাউল করিম বলে আসছেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর পথ ধরেই হাঁটবেন তিনি। ভোটাররা বলছেন যেহেতু গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবেই মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দিন, সেহেতু তার মেয়াদের ব্যর্থতাগুলোর দায় আওয়ামী লীগেরই নেওয়া উচিত। যেহেতু এবারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম, সেহেতু এসব বিষয়ে তার অবস্থান ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!