ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌ’র প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদওয়াতুল ওলামা লক্ষ্ণৌ’তে অধ্যয়নকারী বাংলাদেশী প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সেমিনারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘Towards Roting the Islamic Vision of Education’।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল নয়টায় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) অডিটোরিয়ামে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) এর চেয়ারম্যান, নদওয়াতুল ওলামা লক্ষ্ণৌ’র প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি।
দুই অধিবেশনে অনুষ্ঠিত সকাল ৯টার প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বায়তুশ শরফের পীর ও নদওয়াতুল ওলামা লক্ষ্ণৌর প্রাক্তন ছাত্র আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী। বেলা পৌনে ১২টায় শুরু হওয়া দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক, বাংলাদেশের নদভী অঙ্গনের জীবন্ত কিংবদন্তি আল্লামা সুলতান যওক নদভী।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক ওবাইদুর রহমান খান নসীম নদভী, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আইআইইউসি’র রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ শফীউর রহমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আইআইইউসি’র ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মছরুরুল মাওলা, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য প্রফেসর ড. দ্বীন মুহাম্মদ, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির, আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল আলা মুহাম্মদ হোছামুদ্দিন।
বক্তব্য রাখেন সেমিনার আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর ড. আতাউর রহমান নদভী, প্রফেসর ড. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, প্রফেসর ড. নাজমুল হক নদভী, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ডিভিশনের অতিরিক্ত পরিচালক মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ও মাওলানা মুহাম্মদ আমিন নদভী।
উদ্বোধনী বক্তব্যে নদওয়াতুল ওলামা লক্ষ্ণৌ’র প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি বলেন, ‘বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদওয়াতুল ওলামা লক্ষ্ণৌ’র জ্ঞানের দ্যূতি উপমহাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আরব, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্য এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার দিক-দিগন্ত বর্ণোজ্জ্বল করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা, সম্প্রসারন ও সুনাম-সুখ্যতির সাথে জড়িত রয়েছেন উপমহাদেশের বরেণ্য মুসলিম মনীষা আল্লামা শিবলী নোমানী, আল্লামা মুহাম্মদ আলী মুঙ্গেরী, আল্লামা সৈয়দ সোলাইমান নদভী, আল্লামা সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী (রাহ.) প্রমুখের নাম। গত শতাব্দীতে যার বদৌলতে নদওয়াতুল ওলামা লক্ষ্ণৌ’র পরিচিতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে তিনি হচ্ছেন আল্লামা সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী (রাহ.)।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিজ দেশ ভারত থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের সরকার প্রধান ও সুধী মহলে তাঁর গ্রহনযোগ্যতা ছিল আকাশচুম্বি। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তক, সমাজ সংস্কারক ও আধ্যাত্মিক রাহবার, মুসলিম উম্মাহর দিব্যপ্রাণ-দরদি ভাষ্যকার। বিদ্বান ও বিদগ্ধজনের কাছে তাঁর পরিচয় নতুন নয়। বাজপেয়ীসহ ভারতের অনেক সরকার প্রধান তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন এবং তাঁর নিয়মিত খবরাখবর রাখতেন।’
ড. আবু রেজা নদভী বলেন, ‘আল্লামা সুলতান যওক নদভীকে বাংলাদেশের নদভী অঙ্গনের জীবন্ত কিংবদন্তি। আল্লামা সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী (রাহ.) অন্যতম শীর্ষ এই মনীষীর বদান্যতায় নদওয়াতুল ওলামা লক্ষ্ণৌতে অধ্যয়নের সুযোগ লাভ করে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।’
নদওয়াতুল ওলামা লক্ষ্ণৌর প্রাক্তন ছাত্র দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক ওবাইদুর রহমান খান নসীম নদভী বলেন, ‘আল্লামা সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী (রাহ.) বাংলাদেশকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং বাংলাদেশী ছাত্রদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদানে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি ১৯৮৪ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং প্রতিবারই চট্টগ্রাম সফরে আসেন। অত্যন্ত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এই মহান ব্যক্তি বলেছিলেন, বাংলাদেশ অন্য যে কোনো সূচকে পিছিয়ে থাকতে পারে কিন্তু মেধার দিক দিয়ে কোনোভাবে পিছিয়ে থাকতে পারে না। তিনি চাইতেন বাংলা ভাষায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলো অনূদিত হোক। এ বিষয়ে তিনি খোঁজ খবরও রাখতেন। তিনি হৃদয় বিগলিত দরদ নিয়ে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর ওয়াস্তে বাংলা ভাষার বাগডোর অন্যদের হাতে ছেড়ে দেবেন না। আপনারা চিরকাল পাঠক হবেন, আর অন্যরা লেখক হবে- এটা কাম্য নয়; শোভনীয় নয়। বাংলা ভাষাচর্চায় শিথিলতা আলেমদের বাংলাদেশে অপাঙক্তেয় করে দিবে। সময়ের ব্যবধানে আল্লামা সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভীর (রাহ.) সেই ভবিষ্যত বাণী আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় আধুনিক প্রযুক্তির সব উপকরনই ব্যবহার হচ্ছে।’
বাংলাদেশী নদভী স্কলারদের একত্র করে একটি চমৎকার সেমিনারের আয়োজন করায় প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুষ্ঠানের আন্তর্জাতিক ক্বারী মাওলানা মুহাম্মদ আসাদের পরিবেশনায় কোরান তেলাওয়াত ও কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পী আবিদ তারানায়ে নদওয়াতুল ওলামা পরিবেশন করেন। সেমিনারে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানরত নদওয়াতুল ওলামা লক্ষ্ণৌ’র স্কলারসহ দেওবন্দী কাসেমী স্কলাররা অংশগ্রহণ করেন।